আহতরা নেই আপন ভুবনে, কেউ বিদেশে কেউ গোপনে

Slider জাতীয়

2015_11_01_02_02_20_Nrx49BPo07YUxpU1UxT9cRWd8ezcKt_original

 

 

 

 

ঢাকা : রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে ফয়সাল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা এবং লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীতে মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজনকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি তদন্তকারীরা।

সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং দায় স্বীকারের সূত্র ধরে তদন্ত চলছে। তবে কয়েকজন সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করা গেলেও তাদের পরিচয়সহ অন্যান্য বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, আনসারুল্লাহ বাংলাটিম (এবিটি) ঘরানার একটি গোষ্ঠী একযোগে হামলার ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। তারাই আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার (একিউআইএস) নামে বিবৃতি দিয়ে ‘আনসার আল ইসলাম’ নাম ব্যবহার করেছে।

একই চক্র গত বছর একুশে বই মেলায় সময় ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায় এবং ব্লগার নিলাদ্রী চট্টপাধ্যায় নীলয়কে খুন করেছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। তিন খুনের মামলা একই সূত্রে গেঁথে তদন্ত করা হচ্ছে।

তবে তিন মাসেও হয়নি উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি। এদিকে হত্যা ও হামলার ঘটনায় লেখক-ব্লগারদের মধ্যে যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে, খুনিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় তা এখনো রয়েছে। শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল জীবনের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাস্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন। এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি কবি তারেক রহিম ও লেখক রণদীপম বসু। নিরাপত্তাহীনতা ভাবাচ্ছে তাদের পরিবারকেও।

অন্যদিকে ‘চাপা আতঙ্কের’ মধ্যেই আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরু হতে যাচ্ছে। তবে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে- এবারের মেলায় ব্যাপক নিরাপত্তা থাকবে। বাতি জ্বালিয়ে দিনের আলোর মতোই আলোকিত করে তোলা হবে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের চলাচলের সব পথকে। চারুকলার সামনে থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত পুরো এলাকায় থাকবে শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরার চোখ।

এবার নিরাপত্তায় বাড়তি সংযোজন হয়েছে পুলিশ ও র‌্যাবের ‘ওয়াচ টাওয়ার’। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আর্চওয়েতে তল্লাশি করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩১ অক্টোবর দুপুরে শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে প্রকাশক টুটুল, কবি তারেক রহিম এবং লখক রণদীপম বসুকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। প্রায় একই সময় শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে এর কর্ণধার দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

শুদ্ধস্বর থেকে ব্লগার অভিজিৎ রায়ের ‘সমকামিতা’, ‘অবিশ্বাসের দর্শন’, ‘ভালবাসা কারে কয়’, ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ বইগুলো প্রকাশিত হয়। জাগৃতি থেকে অভিজিত রায়ের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বইটি প্রকাশ করা হয়েছিল।

দুই ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাগুলো তদন্ত করছে করছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভিজিৎ হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন সাত খুনির ছবিসহ কিছু আলামত মিলেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর কাছ থেকে আলামত পরীক্ষার ফল এখনো পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে প্রকাশক দীপন হত্যা ক্লুলেস বলে দাবি তদন্তকারীদের। তবে শুদ্ধস্বরে হামলায় আহতরাসহ পাঁচজন প্রতক্ষদর্শী থাকলেও কেউ হামলাকারীদের ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারেনি।

ডিবির উপকমশিনার (ডিসি-দক্ষিন) ও দীপন হত্যা মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ‘এটি একেবাবে ক্লুলেস মামলা। তবে বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত যে এবিটি অনুসারীরাই এই খুন করেছে। এখনো কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করিনি। সিসিটিভি ক্যামেরার ছবিসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে কোথাও কিছু স্পস্ট নয়।’

জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বই মেলার কাছে অভিজিৎ রায় এবং গোড়ানে নীলয়কে হত্যা একই চক্র করেছে বলে আমরা ধারনা করছি। এভাবেই তদন্ত চলছে। একটি গ্র“প ধরা পড়লেই অনেক রহস্য বের হয়ে যেতে পারে।’

শুদ্ধস্বরের ঘটনার মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ও ডিবির ডিসি (পশ্চিম) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্নভাবে চেষ্টা চলছে। এখনো কিছু বের করা যায়নি। তবে আশা করছি শর্ট টাইমের মধ্যে ভালো রেজাল্ট আসতে পারে।’

এর আগে গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি বই মেলার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্লগার ফারাবী এবং এটিবির সদস্য তৌহিদুর রহমান, সাদেক আলী মিঠু ও আমিনুল মল্লিককে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এ ঘটনার পর পরপর কয়েকজন ব্লগার খুন হয়। কিন্তু রহস্যের জট এখনো খোলেনি।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘অভিজিতের সাতজন সন্দেহভাজন খুনির ছবি আমরা পেয়েছি। তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এফবিআই এই তদন্ত করতে আমাদের সহায়তা করছে। তারা কিছু আলামত নিয়েছে। তবে সেসব পরীক্ষার ফল এখনো পাইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *