কোরআনের পাতা ছিঁড়ে ফেসবুকে দেওয়ায় আটক ৪ শিবির কর্মী

Slider রাজনীতি

 

shibir_logo1_290139942

 

 

 

 

চট্টগ্রাম: পবিত্র কোরআন শরীফ ছেঁড়ার অভিযোগে সাতকানিয়া থেকে শিবিরের চার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের পর দু’জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছে, সরকারকে অস্থিতিশীল করে তুলতেই পবিত্র কোরআন ছিঁড়ে ইস্যু বানানোর চেষ্টা করেছিল ছাত্রশিবির। বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা জানান চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) একেএম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, শিবির সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পবিত্র কোরআন শরীফ ছিঁড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করবে। আর তা হয়েছিলো কেন্দ্রের নির্দেশেই।

তিনি জানান, শিবিরের একদল নেতাকর্মী সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় ১৯টি মসজিদে ঢুকে কোরআন শরীফ ছেঁড়ার ঘটনা ঘটায়। তবে পুলিশের সতর্ক পদক্ষেপের কারণে তাদের অরাজকতা তৈরির ওই ষড়যন্ত্র আপাতত ব্যর্থ হয়ে যায়।

হাফিজ আক্তার বলেন, যেহেতু কোন মুসলমান কোরআন শরীফ ছিঁড়তে পারেনা, তাই তারা ফেসবুকে ছেঁড়া কোরআন শরীফের ছবি ছড়িয়ে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়েছিল। তাদের ধারণা ছিল, এতে দেশে অরাজকতা তৈরি হবে এবং সরকার বিপাকে পড়বে।

গ্রেফতার হওয়া চারজন হচ্ছেন- সাতকানিয়ার ঢেমশা ইউনিয়ন শিবিরের সভাপতি মো. রিয়াদুল ইসলাম নিলয় (২২), শিবিরের সাতকানিয়া পূর্ব শাখার সভাপতি রায়হান উদ্দিন মু. আসাদ উল্লাহ (২২), শিবিরের সাথী প্রার্থী আরমান (২০) ও আমিনুল ইসলাম টিপু (২০)।

এদের মধ্যে সাতকানিয়া থানায় দায়ের হওয়া মামলায় রিয়াদুল ২৪ জানুয়ারি এবং আসাদ উল্লাহ ২৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বিচারিক হাকিম শিপলু কুমার দে’র আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এসপি একেএম হাফিজ আক্তার আরও জানান, জবানবন্দিতে জানা যায় ৯ জানুয়ারি সাতকানিয়ার ঢেমশা ইন্দ্রদিঘির পাড়ে বড় বাড়ি জামে মসজিদে আসাদউল্লাহর নেতৃত্বে শিবিরের নেতাকর্মীদের গোপন বৈঠক হয়।  বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, তারা সাতকানিয়ার বিভিন্ন মসজিদে ঢুকে কোরআন শরীফের মলাটের ভেতরের পাতা ছিঁড়ে রাখবে। পরে সেগুলো শিবিরের ফেসবুক পেইজ ‘বাঁশের কেল্লার’ মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। প্রত্যেক মসজিদে কোরআন শরীফ ছেঁড়ার জন্য দু’জন করে কমিটিও গঠন করা হয়।

এ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ১০ এবং ১১ জানুয়ারি সাতকানিয়ার বিভিন্ন মসজিদে ঢুকে শিবির কর্মীরা কোরআন শরীফ ছিঁড়ে সেগুলোর ছবি ফেসবুকে দেন। এর আগে লোহাগাড়ায় বিভিন্ন মসজিদে ঢুকেও তারা একই ঘটনা ঘটান বলে জানান এসপি।

এসপি একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘গ্রেফতারের পর তারা জানিয়েছে ‘উপরের নির্দেশে’ তারা কোরআন শরীফ ছিঁড়েছে। এজন্য এখন তারা অনুতপ্ত। দু’জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করেছে।’

জেলা পুলিশের সাতকানিয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার এমরান ভূঁইয়াবলেন, সাতকানিয়ায় ১০টি এবং লোহাগাড়ায় ৯টি মসজিদে ঢুকে তারা কোরআন শরীফ ছিঁড়েছে।  প্রত্যেক মসজিদে দু’জন করে দায়িত্বে ছিল।  এদের মধ্যে একজন মসজিদের ভেতরে ঢুকে কোরআন শরীফ ছিঁড়েছে। আরেকজন বাইরে পাহারা দিয়েছে।  সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে সাধারণত মসজিদ খালি থাকে এবং কোন মসজিদের দরজায় তালা থাকেনা। এ সময়টাকে বেছে নিয়ে তারা মসজিদে ঢুকেছে এবং কোরআন শরীফ ছিঁড়েছে।

এসপি একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, মিডিয়া এবং স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় তাদের আটকানো সম্ভব হয়েছে।  জনগণ বুঝতে পেরেছে যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই কোরআন শরীফ ছেঁড়া হয়েছে।

সাতকানিয়ার ঘটনায় আরও ১০-১৫ জনের নাম পাওয়া গেছে জানিয়ে এসপি বলেন,  কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সবাইকে গ্রেফতার করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *