আগামী মার্চ মাসে দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি গ্রহণ করতে চলেছে বিএনপি। হাইকমান্ডের এ পরিকল্পনায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন ‘একাধিক পদধারী’ শতাধিক নেতা। দোটানায় পড়েছেন বিশেষ করে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় শীর্ষ পদ ধরে রাখা কেন্দ্রীয় নেতারা। কেন্দ্রীয় পদ রাখবেন, নাকি মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ পদে থাকবেন_ তা নিয়ে শুরু হয়েছে হিসাব-নিকাশ। কেউ কেউ হাইকমান্ডকে এ নীতি গ্রহণ না করতে নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে হাইকমান্ড চাইছে, একজন নেতাকে একাধিক পদ না দিয়ে অন্য যোগ্যদেরও গুরুত্বপূর্ণ পদে এনে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার পাশাপাশি নেতাদেরও গতিশীল করতে। অতীতে ব্যর্থ হলেও এবার এ নীতি গ্রহণে এই বৃহৎ রাজনৈতিক দলটির হাইকমান্ড এখন পর্যন্ত অনমনীয়তা দেখাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার সমকালকে বলেন, দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি কঠোরভাবে মেনে চললে বহু উদীয়মান নেতাকে বিভিন্ন পদে অন্তর্ভুক্ত করা সহজ হবে। এতে দল সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হবে। তবে এটি নিয়ে দলের ভেতর আলোচনা চললেও এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বরের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটি মাঠপর্যায়ের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর সুপারিশে ‘এক নেতার এক পদ’ নীতির উদ্যোগ নেয়। শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠের নেতৃত্বও নিজেদের ‘কবজায়’ রাখতে দলের হাইকমান্ডকে নানা যুক্তি দিয়ে ওই সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে দেননি। এবার এ সিদ্ধান্তটি কার্যকর করতে দলের হাইকমান্ডের ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি করেছেন দলের নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে তিনজন নেতার মধ্যে ব্যাপক বাকবিতণ্ডা হয়। খালেদা জিয়া এক নেতাকে একটি পদ দেওয়ার পক্ষেই রয়েছেন। তবে নানামুখী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে জোরদার লবিং-তদবিরের কারণে সব ক্ষেত্রে এই নীতি গ্রহণ করা সম্ভব হবে কি-না_ তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্য একজন সদস্য সমকালকে বলেন, বহু কেন্দ্রীয় নেতা স্থানীয় কমিটিতে পদ দখল করে থাকেন। এতে স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠনের অনেক ত্যাগী নেতাকেই পদবঞ্চিত রাখতে হয়। এ কারণে দল দুর্বল হচ্ছে। ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি গৃহীত হলে এ অবস্থার অবসান ঘটবে। এতে বিশেষ করে সব পর্যায়ের তরুণ নেতারা পদ পেয়ে উৎসাহিত হবেন। তৃণমূলের নেতারা পদবঞ্চিত থাকবেন না।
আগামী মার্চের কাউন্সিলকে সামনে রেখে বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধনের কাজ চলছে। গঠনতন্ত্রের খসড়া সংশোধনীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা হাইকমান্ডের নির্দেশে ‘এক নেতার এক পদ’ নীতির একটি নতুন ধারা যুক্ত করছেন। অবশ্য গঠনতন্ত্র সংশোধনীতে যুক্ত করতে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রতিও সুপারিশ আহ্বান করা হবে। মাঠ নেতাদের যুগোপযোগী ও গ্রহণযোগ্য প্রস্তাবগুলো খসড়া গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করে হাইকমান্ডের কাছে হস্তান্তর করবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। আগামী কাউন্সিলে সংশোধিত গঠনতন্ত্রের চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়া হবে।
মহানগর ও জেলার শীর্ষ পদে যেসব কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা :বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমানে কৃষক দলেরও সভাপতি। একই সঙ্গে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি তিনি। এদিকে দলের আসন্ন জাতীয় কাউন্সিলে মির্জা আলমগীর পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হতে যাচ্ছেন_ এটি প্রায় নিশ্চিত। চলমান দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় কৃষক দলের সভাপতি ও ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির পদে তিনি আর থাকছেন না।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস দল ও আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক পদে রয়েছেন। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকা মহানগর বিএনপিরও অন্যতম সদস্য। দলের ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী পটুয়াখালী জেলা কমিটিরও সভাপতি। অপর ভাইস চেয়ারম্যান রাবেয়া চৌধুরী কুমিল্লা দক্ষিণ বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাদের মধ্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বন্দরনগরী চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি। আবদুল আউয়াল মিন্টু ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। শামসুজ্জামান দুদু চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটিরও সাধারণ সম্পাদক। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু একই সঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি। আহমেদ আজম খান টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি। এমএ মান্নান ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি। শওকত মাহমুদ কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সভাপতি। অধ্যাপক মাজিদুল ইসলাম খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি পদে রয়েছেন।
যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্যে আমানউল্লাহ আমান ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তিনি একই সঙ্গে ঢাকা মহানগর বিএনপিরও সদস্য। মিজানুর রহমান মিনু রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি। মোহাম্মদ শাজাহান নোয়াখালী জেলা সভাপতি। বরকত উল্লাহ বুলু ঢাকা মহানগর বিএনপিরও সদস্য। রুহুল কবির রিজভী একই সঙ্গে দলের দপ্তর সম্পাদক।
ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে ফজলুল হক মিলন গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি। বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বরিশাল মহানগর সভাপতি। খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মসিউর রহমান ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি। রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু লালমনিরহাট জেলা সভাপতি পদে রয়েছেন।
কেন্দ্রীয় সম্পাদক ও সহ-সম্পাদকরা স্থানীয় বিভিন্ন পদে :বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে থাকা নেতাদের মধ্যে বিশেষ সম্পাদক নাদিম মোস্তফা রাজশাহী জেলা সভাপতি। প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক সেনবাগ উপজেলা বিএনপির সভাপতি। যুববিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল যুবদলের সভাপতি। তিনি একই সঙ্গে ঢাকা মহানগর বিএনপিরও সদস্য। স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাটোর জেলা সভাপতি। শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন নরসিংদী জেলা সভাপতি। স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব। একই সঙ্গে তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলেরও সভাপতি। ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী আহমেদ রুমী কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি। স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক আবদুল হাই মুন্সীগঞ্জ জেলা সভাপতি। শিল্প বিষয়ক সম্পাদক একেএম মোশাররফ হোসেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা সভাপতি। সমবায় বিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভূঁইয়া লক্ষ্মীপুর জেলা সভাপতি। তিনি একই সঙ্গে ঢাকা মহানগর বিএনপিরও সদস্য। মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম ঢাকা মহানগর বিএনপিরও সদস্য। মহিলা বিষয়ক সম্পাদক খালেদা রব্বানী মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।
সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি। সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনা মহানগর সভাপতি। সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন আসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আহ্বায়ক।
সহ-শিল্পবিষয়ক সম্পাদক জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া ফরিদপুর জেলা সভাপতি। সহ-পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মোজাহার আলী প্রধান জয়পুরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি। সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক তৈমূর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি। সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক নিতাই রায় চৌধুরী মাগুরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক। সহ-সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সাহাবুদ্দিন আহমেদ ঢাকা মহানগর বিএনপিরও সদস্য।
কেন্দ্রীয় সহ-কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আমিন উর রশীদ ইয়াসিন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। সহ-শিল্প বিষয়ক সম্পাদক এমএ মালেক জাসাস সভাপতি। সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুরী আরা সাফা মহিলা দলের সভানেত্রী। সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা। সহ-মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবু সাঈদ খান খোকন ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক।
পিছিয়ে নেই নির্বাহী কমিটির সদস্যরাও :কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম বগুড়া জেলা সভাপতি। আফরোজা আক্তার খান রিতা মানিকগঞ্জ জেলা সভাপতি। শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী সিলেট মহানগর আহ্বায়ক। এম নাছের রহমান মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি। জিকে গউছ হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। ওহিদুল ইসলাম বিশ্বাস চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক। আনোয়ার হোসাইন শ্রমিক দলের সভাপতি। শফিকুর রহমান কিরণ শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সভাপতি। আশিফা আশরাফি পাপিয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক। কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল গাজীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক। সৈয়দ মোদারেছ আলী ইসা ফরিদপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক। রাবেয়া সিরাজ মহিলা দলের সহসভাপতি। ওয়ারেছ আলী মামুন জামালপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। মইনুল ইসলাম শান্ত মানিকগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক। হুমায়ুন কবির খান তাঁতী দলের সভাপতি। কাজী আবুল বাশার ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। এমএ কাইয়ুম ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। এসএ খালেক ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য। রফিকুল ইসলাম মাহতাব মৎস্যজীবী দলের সভাপতি। মীর সরফত আলী সপু স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক। মনির খান জাসাস সাধারণ সম্পাদক। শফিউল বারী বাবু স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক। ইয়াসমীন আরা হক মহিলা দলের সহ-সভাপতি। গাজী নুরুজ্জামান বাবুল পিরোজপুর জেলা সভাপতি। আলমগীর হোসেন পিরোজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ বরিশাল উত্তর জেলা সভাপতি। আকন কুদ্দুসুর রহমান বরিশাল উত্তর জেলা সাধারণ সম্পাদক। রেহেনা আক্তার রানু ফেনী জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক। তকদির হোসেন মো. জসিম কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। মোস্তফা খান সফরী চাঁদপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক।