অবশেষে নতুন স্কেলে বেতন নিয়ে সংশয় কাটল সারাদেশের এমপিওভুক্ত পাঁচ লাখ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর। অর্থ বিভাগ তাদের বেতন-ভাতা চূড়ান্ত করেছে। আগামী মার্চ থেকে তারা নতুন স্কেলে বর্ধিত বেতন পাবেন। ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনের সঙ্গে বর্ধিত বেতন সমন্বয় করা হবে। গত জুলাই থেকেই এটি কার্যকর হচ্ছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ ছাড়া প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটির সুপারিশও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিবেচনা করা হচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ পে স্কেল নিয়ে সংক্ষুব্ধদের দাবি-দাওয়া। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে তাদের সুপারিশ পর্যালোচনা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগ বৈঠক করে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে সমস্যা নিরসনে ব্যবস্থা নেবে।
নতুন বেতন কাঠামোয় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর বাসা ভাড়া বাবদ ভাতা দ্বিগুণ হবে। আগে তারা বাসা ভাড়া বাবদ পেতেন ৫০০ টাকা। নতুন স্কেলে পাবেন ১০০০ টাকা। মেডিকেল ভাতা ৩০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০০ টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বর্ধিত বেতন দিতে প্রয়োজন ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এটি সংশোধিত বাজেটে সমন্বয় করা হবে। শিগগির অর্থ বিভাগ থেকে এ টাকা ছাড় করা হবে, যাতে তা ফেব্রুয়ারির বেতনের সঙ্গে সমন্বয় হয়। এটি সমন্বয় হলে তারা মার্চেই নতুন স্কেলে বেতন পাবেন। তবে গত জুলাই থেকে কার্যকর বেতনের পাওনা টাকা কয়েক ধাপে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
চলতি মাস থেকে সব সরকারি কর্মচারী নতুন স্কেলে বেতন পেলেও অর্থ সংকটের কারণে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের নতুন পে স্কেলে বর্ধিত বেতন দিতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চলতি মাসে তারা ডিসেম্বরের বেতন তুলেছেন আগের (সপ্তম) বেতন স্কেলে। গত ২০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তারা নতুন জাতীয় বেতন স্কেলের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তাদের বেতন-ভাতা চূড়ান্ত না করায় এ বাবদ বর্ধিত কোনো টাকা ছাড় হয়নি। এ কারণে তাদের বেতন হয়েছে আগের স্কেলে। এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে তাদের বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করেছে। গত ৬ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বিভাগে পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়, সারাদেশের চার লাখ ৭৭ হাজার ২২১ শিক্ষক-কর্মচারীকে নতুন পে স্কেলে গত বছরের ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) বকেয়া বর্ধিত বেতন দিতে অতিরিক্ত ২ হাজার ৪৬৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার বেতন-ভাতা বাবদ ২ হাজার ৩৮৩ কোটি ২২ লাখ ৮২ হাজার ৯০০ টাকা এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ৮৫ কোটি ৯৪ লাখ ৪৪ হাজার ১৯৪ টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন। এ প্রস্তাব পর্যালোচনা করে অর্থ বিভাগ থেকে বর্ধিত বেতন-ভাতা ছাড়ের সম্মতি দেওয়া হয়েছে।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানাচ্ছে, নতুন বেতন স্কেলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ৪৩ দশমিক ৮১ ভাগ বেতন বেড়েছে। ফলে এ খাতে সরকারের ব্যয় বেড়েছে বছরে ৫ হাজার ৩৫৫ কোটি ২৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৫০ টাকা। নতুন স্কেলে এমপিওভুক্ত কলেজের একজন প্রভাষকের মূল বেতন হবে ২২ হাজার টাকা (নবম গ্রেড)। বর্তমানে তারা ১১ হাজার টাকা পাচ্ছেন। সহকারী অধ্যাপকরা পাবেন ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা (ষষ্ঠ গ্রেড)। এখন পাচ্ছেন ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। আর অধ্যাপকদের বেতন হবে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। আগে তা ছিল ২৫ হাজার ৭৫০ টাকা। আর বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষকের মূল বেতন হবে ১০ম গ্রেডে ১৬ হাজার টাকা, যা বর্তমানে ৮ হাজার টাকা। আর জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকের বেতন হবে ২২ হাজার টাকা (নবম গ্রেড), এখন যা ১১ হাজার টাকা। এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা মূল বেতনের শতভাগ সরকার থেকে পেয়ে থাকেন। তবে এমপিওভুক্তি খাতে অর্থের অপচয় রোধে গত জুলাইয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে একটি যুগোপযোগী ও কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে।
এদিকে প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহাল করা, সরকারি প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্রে ক্যাডার, নন-ক্যাডার বৈষম্যের সিদ্ধান্ত বাতিলসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করছে। উদ্ভূত জটিলতা নিরসনে সচিব কমিটি গঠনের পর উভয় পক্ষের একাধিক বৈঠকের পর তারা আন্দোলন প্রত্যাহার করে। উভয় পক্ষের আলোচনায় সচিব কমিটি সংশ্লিষ্ট ক্যাডারদের কাছ থেকে সুপারিশ চাইলে তারা নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেয়। এখন এই সুপারিশ পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর দাবির পাশাপাশি নতুন অনুমোদিত অষ্টম পে স্কেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মর্যাদার অবনমনের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। বৈষম্য দূর করে সর্বোচ্চ পদ নির্বাহী পরিচালককে গ্রেড-১ এবং প্রবেশ পদ সহকারী পরিচালককে ৮ম গ্রেড করার দাবি জানান তারা। সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দাবিগুলোও পর্যালোচনা করা হচ্ছে।