ঢাকা: আপনি বিছানায় শুয়ে আছেন। ঘরের জানালা বা দরজা খোলা। কিন্তু তা আপনি খোলেননি। ঘরে আপনি ছাড়[ আরও দু’জন আছে। আপনি তাদের দেখতে পাচ্ছেন না। কিন্তু উপলব্ধি করছেন তারা আছে। তাদের কথপোকথন শুনতে পাচ্ছেন আপনি। ষড়যন্ত্র করছে তারা। আপনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র।
আপনি নড়তে পারছেন না। চিৎকার করছেন, কিন্তু তাতে কোনো শব্দ হচ্ছে না। বুক চিঁড়ে হৃৎপিণ্ড বেরিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এমন অনুভূতির সঙ্গে কম-বেশি অনেকেই পরিচিত। যার নাম স্লিপ প্যারালাইসিস। বাংলায় যেটাকে বোবায় ধরা বলে।
কখন হয়
স্লিপ প্যারালাইসিস দু’টি সময়ে হতে পারে। প্রথমত, ঘুমের ভেতর হতে পারে, যেটাকে হিপনাগোজিক বা প্রিডরমিটাল স্লিপ প্যারালাইসিস বলে। দ্বিতীয়ত, ঘুম থেকে ওঠার পর হতে পারে যেটাকে হিপনোপম্পিক বা পোস্টডর্মিটাল স্লিপ প্যারালাইসিস বলে।
হিপনাগোজিক বা প্রিডরমিটাল স্লিপ প্যারালাইসিস
ঘুমের সময় শরীর ধীরগতিতে রিল্যাক্স করতে থাকে। আপনি অবচেতন হয়ে পড়েন, ফলে পরিবর্তনটা টের পান না। তবে ঘুমের সময় যদি সচেতনতা ফিরে আসে তাহলে অনুভূত হবে, আপনি কথা বলতে বা নড়তে পারছেন না।
হিপনোপম্পিক বা পোস্টডর্মিটাল স্লিপ প্যারালাইসিস
আরইএম (র্যাপিড আই মুভমেন্ট) স্লিপ ও এনআরইএম (নন-র্যাপিড আই মুভমেন্ট) স্লিপ সম্পর্কে নিশ্চই জানেন। একটি চক্রে আরইএম ও এনআরইএম স্লিপ ৯০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। ঘুমের শুরুর দিকে এনআরইএম হয়। অর্থাৎ এসময়ে চোখের মনি বারবার নড়ে না। ঘুমের সময়ের ৭৫ শতাংশ জুড়ে এনআরইম থাকে। এসময় শরীর রিল্যাক্স থাকে। কিন্তু একটা সময় পর তা আরইএম স্লিপে রূপান্তর হয়। তখন চোখের মনি খুব দ্রত নড়াচড়া করে ও স্বপ্ন দেখে। এসময় শরীর রিল্যাক্স থাকে এবং পেশি কাজ করে না। আরইএম স্লিপের শেষে যদি আপনার চেতনা ফিরে আসে, তবে আপনি নড়াচড়া করতে বা কথা বলতে পারবেন না বলে মনে হবে।
কাদের হয়
প্রতি ১০ জন ব্যক্তির এক জনের স্লিপ প্যারালাইসিস হতে পারে। যেকোনো বয়সের নারী-পুরুষের স্লিপ প্যারালাইসিস হতে পারে। তবে স্লিপ প্যারালাইসিসের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। যেমন- কম ঘুম হলে, ঘুমের সময় পরিবর্তন, মানসিক চাপ, চিৎ হয়ে ঘুমালে, ওষুধের প্রভাব, মাদকের কুফল ইত্যাদি।
বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই স্লিপ প্যারালাইসিসের বিশেষ কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ কমিয়ে স্লিপ প্যারালাইসিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।