অন্ধদের জন্য স্মার্টফোন

তথ্যপ্রযুক্তি

2016_01_18_23_32_16_eUkesTgn21jOY2EhuBpkZAAd59kLYo_original

 

 

 

 

 

ঢাকা: স্মার্টফোনের এই যুগে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা কেন পিছিয়ে থাকবে? তাদের জন্যও এলো স্মার্টফোন। এখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি ছিল ডিসপ্লে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের অধ্যাপকরা সেই অসাধ্যই সাধন করলেন। তারা এমন এক টাচস্ক্রিন ট্যাবলেট উদ্ভাবন করলেন যা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরাও ব্যবহার করতে পারবে। শুধু দৃষ্টি শক্তি না থাকায় এতোদিন তাদের ফিচার ফোন ব্যবহার করতে হতো।

উনিশ শতকের দিকে ফ্রান্সে শত্রুর অবস্থান শণাক্ত করে সেনাদের বার্তা পাঠানোর জন্য সর্বপ্রথম ব্যবহার করা হয় ডট প্রযুক্তির। এই প্রযুক্তিতে গভীর অন্ধকারেও আঙ্গুলের স্পর্শে বার্তা পড়া যেতো। এই প্রযুক্তির আবিষ্কারক ছিলেন লুইস ব্রেইল। ছয় ডটের এই প্রযুক্তিতে বর্ণ, শব্দ এবং অক্ষর লেখা ও পড়া যেতো। পাশাপাশি দুটি সারিতে তিনটি করে ডট থাকতো। এক একটি ডটকে বলা হতো  ‘সেল‘। তবে লেখার ধরনগুলোর মধ্যে এটি বেশ সময়সাপেক্ষ এবং অতিরিক্ত সংক্ষিপ্ত উপায় ছিল।

মুদ্রণ এবং লেখনির ক্ষেত্রে ডটগুলো (ছিদ্র) কাগজে ফুটে উঠত। স্লেট এবং লেখনির স্টাইল অনুসারে মেশিন কাগজে আঘাত করে কাগজকে অমসৃণ করে। একটি অক্ষর দেখতে যেমন ছিদ্রগুলো সেভাবেই কাগজে প্রতিস্থাপিত হতো। একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কাগজের ওপর আঙ্গুলের স্পর্শে ডটগুলো চিনে পড়তে পারতো, লিখতে পারতো পিন ব্যবহার করে।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের প্রচলিত মনিটরের পিক্সেলে মনোক্রম ব্যবহার করা হয়। ব্রেইল প্রযুক্তির মাধ্রমে স্ক্রিনটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য পড়ার উপযোগী হয়। তবে এই উপায়টি যথেষ্ট ব্যয়বহুল এবং একবারে একটি লাইন পড়া যায়। দক্ষিণ কোরিয়াতে চার ডিজিটের একটি ঘড়ি বানানো হয় যা দিয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা সময় বুঝতে পারে। কিন্তু কোনো বই বা আর্টিকেল পড়ার কোনো সুযোগ নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের অধ্যাপক সিলি ও মডরেইন, সহযোগী অধ্যাপক ব্রেন্ট গিলেস্পি এবং পিএইচডি শিক্ষার্থী আলেক্সান্ডার রুসোমান্নো এমন একটি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন যা দিয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা একটি ডিসপ্লের সম্পূর্ণ অংশ পড়তে পারবেন। এখানে ব্যবহৃত হয়েছে মাইক্রোফ্লুইডিকস। সাথে ব্যবহৃত হবে স্বল্প পরিমাণ তরল ও গ্যাস। যার ফলে ট্যাবলেটের স্ক্রিনে বাতাস সঞ্চালন হয়ে ফুলে ওঠা বা বাতাস কমে যাওয়ার মাধ্যমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ‘দেখার’ সহায়ক হয়ে উঠবে।

তবে আঙ্গুলের স্পর্শের মাধ্যমে ডিসপ্লে পড়ার এই প্রযুক্তি নতুন নয়। টাচস্ক্রিনে স্পর্শ করে মাইক্রোফ্লুইডসের ওপর যে বাবলের সৃষ্টি হয় তা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের দেখার জন্য ভালো হাতিয়ার। যদিও দেখার জন্য এই প্রযু্ক্তি একমাত্র উপায় নয়। তারপরও অন্ধের যষ্টি হিসেবে এই প্রযুক্তিও কম নয়।

মিশিগানের গবেষক দল আশা করছেন দুই বছরের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে এই ডিভাইস উৎপাদন করার। এটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য উন্নত প্রযুক্তি পণ্য হিসেবে ভালোই বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *