ঢাকা: শীতের ঝরে পড়া পাতার ওপর আলতা রাঙা দুটি পায়ে হেঁটে চলেছে তুলি। উত্তরের শীতল হাওয়ার এই পড়ন্ত বিকেলে তুলির আকাশে রঙধনু হিসেবে একটু পর আবির্ভাব হল তিতাসের। একটু অবসর আর নিরবে ভালোবাসার খুনসুটি করতে প্রায়ই চলে আসেন জিয়া উদ্যান বা চন্দ্রিমা উদ্যানে। এমন অসংখ্য যুগলের খুনসুটির সাক্ষী এই চন্দ্রিমা উদ্যানের প্রতিটি ঘাস-পাতা-গাছ-ফুল পাখি।
অবস্থান
জিয়া উদ্যান কিংবা চন্দ্রিমা উদ্যানটি ৭৪ একর জায়গা নিয়ে শেরেবাংলা নগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। বাংলাদেশ পরিবেশ ও বন অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত এই উদ্যানের দক্ষিণে জাতীয় সংসদ ভবন, উত্তরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ও বাণিজ্য মেলার মাঠ, পশ্চিমে গণ ভবন এবং পূর্বে তেজগাঁও পুরাতন বিমান বন্দর অবস্থিত।
সাবেক রাষ্টপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে মাজার কমপ্লেক্স। প্রতিদিন ব্যস্ত ঢাকার অসংখ্য দর্শনার্থী এই মাজার আর উদ্যানের গাছ সবুজ দুর্বা ঘাস দেখতে রমণীর হাতে হাত রেখে কিংবা প্রিয় সেই চেনা ময়না পাখিটিকে নিয়ে একবারের জন্য হলেও ডানামেলে উড়তে চায়। মুছে দিতে চাই ক্লান্তির ছাপ। যানজটের এই শহরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাতঃভ্রমণকারীদের জন্য এটি একটি উত্তম স্থান। চন্দ্রিমা উদ্যান বা জিয়া উদ্যানের ঘাস পাখি দেখতে দেখতে বিকালের মিষ্টি সোনা রোদে কথা হল শিশু দর্শনার্থী মিমের সঙ্গে। কচি পায়ে বার্মিজ জুতা আর গায়ে হলুদ সোয়েটার দিয়ে ঘুরতে এসেছে মিম। বাবার হাত ধরে এই দ্বিতীয় বার ঘুরতে এসেছে সে। বাবা-মা দুই জনের চাকরির কারণে চাঁদ মুখ মিম প্রায় ঘরে একা থাকে। তাই সময় বের করে শীতের বিকেলে মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে এসেছে রফিক সাহেব। কেমন লাগছে জানতে চাইলে মিম বলে, ‘আমার খুব ভালো লাক্তেছে’ বলেই লজ্জায় মুখ ঢেকে দৌড়ে বাবার বুকে মুখ লোকালো।
চোখ ফেরালে যা পাবেন
‘চোখের পাতাতে স্বপ্ন বুনি, শিশিরে ধুই গা, দূর্বা বনে রাঙিয়ে চলে আলতা রাঙা পা’ মনের সাত রঙ মিশিয়ে তৈরি হয়েছে চোখের দেখার অনুভুতি। আর তাই আপনিও সেই অনুভুতির কেন্দ্রস্থল থেকে চোখ ফেরালে দেখতে পাবেন-
– স্বচ্ছ পানির লেক আর তাকে আলিঙ্গন করা সবুজ বৃক্ষ রাজি।
– ঋতু বিশেষে টকটকা লাল রঙে সেজে থাকা কৃষ্ণচূড়া আর হিজল ফুলের মেলা।
– অবহেলিত থেকেও মাথা উচিয়ে দুর্বা ঘাস যা আপনার আলিঙ্গনের অপেক্ষায়।
– কারুকাজ খচিত এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ।
– দক্ষিণে লেকের উপর বাঁকা চাঁদ আকৃতির সুন্দর ব্রিজ।
– মাজার কমপ্লেক্স থেকে সোজা তাকালে জাতীয় সংসদ ভবন।
– পুরো উদ্যানজুড়ে নাম জানা-অজানা হাজার গাছের থরে বিথরে দাঁড়িয়ে থাকা।
– বসার জন্য পর্যাপ্ত বেদি। নির্মল বাতাসে অবগাহনের এ এক স্বর্গপুরী।
কখন যাবেন
জিয়া উদ্যান বা চন্দ্রিমা উদ্যান বছরের সবদিন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। বছরের বিশেষ দিন গুলোতে থাকে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। সেই দুর্বা ঘাসের টানে বার বার ঘুরে ফিরে চলে আসে এই উদ্যানে শিশু-যুবক-বৃদ্ধ হৃদয়। ইচ্ছা ঘুড়ির সুতোয় টান পড়তেই মুক্তির স্বাদ নিতে চলে আসেন এই সবুজ দুর্বা ঘাসের প্রান্তরে। ঘোরাঘুরি আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অবগাহনের সঙ্গে ছবি তোলাকে উদ্দেশ্য করেও অনেকে ছুটে আসেন চন্দ্রিমা উদ্যানে।
বিশেষ করে সকালে এখানে প্রাতঃভ্রমণ কারীদের আনাগোনা থাকে বেশ দেখার মতো। এ সময় দর্শনার্থী থাকে না বললেই চলে। তবে শীতের বিকেলে প্রায় প্রতিদিনই মানুষের মেলা বসে মুক্ত এই উদ্যানে, থাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। যারা প্রথমবার প্রাঙ্গণটি দেখতে যাবেন বলে মনস্থির করেছেন তাদের জন্য বলা যায় সন্ধ্যার পরে উদ্যানের ভেতর প্রবেশ কিংবা থাকাটা খুব বেশি নিরাপদ নয়, বিশেষ করে প্রেমিক জুটির জন্য। তবে দলবেধে বা দুয়েকজন মিলে সন্ধ্যা অবদি দিনভর ঘোরাঘুরি হতে পারে দারুণ ভালোলাগার। এ যেন মুক্ত হাওয়ায় সবল বিহঙ্গের ওড়াউড়িরই নামান্তর।