ঢাকা : কারাবন্দি হয়েও বেশ আরামেই আছেন এক ডজনেরও বেশি শীর্ষ সন্ত্রাসী। কারাগারে বসে তারা বাইরে যোগাযোগ করছেন; ভালো খাবার খাচ্ছেন; এমনকি সামান্য অসুখেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উন্নত জায়গায় চিকিৎসাও নিচ্ছেন। আর এসব সুবিধা পেতে উচ্চপর্যায় থেকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে তদবির যাচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর সাজার মামলা কমে যাওয়ায় স্বজন ও প্রভাবশালীরা তাদের মুক্ত করতে জোর তৎপরতা শুরু করেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, কারা কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে একাধিক শীর্ষ সন্ত্রাসীর কাছে মোবাইল ফোন পেয়েছে। অপতৎপরতা ঠেকাতে এদের এক কারাগার থেকে আরেক কারাগারে পাঠানোর উদ্যোগ নিলেও বাঁধছে বিপত্তি। চিহ্নিত ও পুরস্কার ঘোষিত একাধিক শীর্ষ সন্ত্রাসীর ব্যাপারে কারা কর্মকর্তাদের কাছে ফোন করে তদবির করছেন একাধিক রাজনৈতিক নেতা। বিষয়টি আইজি প্রিজন্স সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে অবগতও করেছেন। মন্ত্রী তাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সন্ত্রাসীদের কোনো ছাড় নয়। কোনো তদবির মানা হবে না।
তবে এসব ব্যাপারে কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন আহমেদকাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কিছুটা প্রভাব বা সুবিধা নিলেও সন্ত্রাসীরা কারাগারে নিয়ন্ত্রণ বা তাদের দাপট দেখাতে পরে না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কঠোর থাকলে এবং আদালত জামিন না দিলে কোনো সন্ত্রাসী সাজার আগে বের হতে পারবে না। সুবিধাও আদায় করতে পারবে না।’
কারা সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও কাশিপুর কারাগারে দেড়শ শীর্ষ সন্ত্রাসী আছে। কাশিমপুর কারাগারে আছে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমাম হোসেন, ফ্রিডম সোহেল, কামাল পাশা, ইমামুল হোসেন, সুইডেন আসলাম, সানজিদুল ইসলাম ইমন, সাইদ হোসেন ওরফে শাহজাদা, কিলার আব্বাস, কাইল্যা পলাশ, আক্তার হোসেন, ২০০৮ সালে ভারত থেকে ফেরত আনা শীর্ষ সন্ত্রাসী হাবিবুর রহমান ওরফে নাইমুল ইসলাম তাজ, সেলিম ওরফে লম্বু সেলিম ও ইব্রাহীম। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফ, খোরশেদ আলম ওরফে রাজু ওরফে ফ্রিডম রাসু, পিচ্চি হেলাল, নবী হোসেন প্রমুখ। নারায়ণগঞ্জ কারাগারে আছে শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমান হোসেন।
এদের অনেকের নেটওয়ার্ক এখনো কৌশলে সচল রয়েছে। অনেকেই কারাগারে বেপরোয়া আচরণ করছেন। এমন তথ্যের সূত্র ধরে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে (চালান) পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বাইরে থেকে তদবির আসায় সেই ‘চালান’থেমে যাচ্ছে। সুইডেন আসলামের ব্যাপারে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার আওয়ামী লীগের দুই নেতা তদবির করছেন। জোসেফ, আরমান মিয়া, ইমন, ইমনের সহযোগী মামুন, লালবাগের সোহেল ও টিপু কাফরুলের বদরুল, ইলিয়াস, মোহাম্মদপুরের পিচ্চি হেলাল, তার সহযোগী মনা, পাভেলুর রহমান রতন ও রাসুর একটি মামলার জামিন বাকি আছে। এরই মধ্যে মিরপুরের বস্তা ফারুক, পপলু, স্বপন, বাবুল, সালাম, কবির এবং পুরান ঢাকার সারোয়ার ছাড়া পেয়েছে। বাকিদের ছাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
গত দুই বছর ধরে জোসেফ বঙ্গবন্ধূ শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিজন সেলে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সামান্য বুকে ব্যাথা ছাড়া তার বড় ধরনের কোনো রোগ নেই বলে নিশ্চিত করেছে কারা সূত্র। এক প্রভাবশালী আত্মীয় দ্রুততম সময়ের মধ্যে জোসেফকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন সব মহলের সম্মতি না মেলায় তা সফল হচ্ছে না। তবে জোসেফ, ইমাম, ইমন, সুইডেন আসলাম, পিচ্চি হেলাল, শাহজাদা, তাজ, কিলার আব্বাস, কাইল্যা পলাশসহ কয়েকজন কারাগারে বেশ আরামেই আছেন। তারা বাইরের সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণও প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। সম্প্রতি কারা কর্তৃপক্ষ তল্লাশি অভিযান চালিয়ে কয়েকজন সন্ত্রাসীর কাছে মোবাইল ফোন পেয়েছে। এরপর তাদের ভিন্ন স্থানে চালান দিতে গিয়ে তদবিরের মুখে পড়ে কর্তৃপক্ষ।