মাদ্রাসাছাত্রের নিহতের ঘটনায় আগামীকাল বুধবার সারা দেশে হরতাল ডেকেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। আজ মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে শহরের জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের পক্ষে মাওলানা মোবারক উল্লাহ এ হরতালের ঘোষণা দেন।
মাওলানা মোবারক উল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, মাদ্রাসাছাত্র নিহত ও মাদ্রাসায় হামলার প্রতিবাদ, সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তাপস রঞ্জন বোস, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকূল চন্দ্র বিশ্বাসের অপসারণ ও নিহত মাদ্রাসা ছাত্রের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে আগামীকাল বুধবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা তৌহিদী জনতার ব্যানারে হরতাল পালিত হবে।
এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোবাইল ফোন কেনাকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসা ছাত্র ও ব্যবসায়ী-ছাত্রলীগের মধ্যে গত সোমবার রাতের চার ঘণ্টাব্যাপী ত্রিমুখী সংঘষের্র ঘটনায় ওই মাদ্রাসা ছাত্র নিহত হয়। এই ঘটনায় শহরে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিহত হাফেজ মাসুদুর রহমান (১৯) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইউনিছিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ৮ম শ্রেণির ছাত্র।
গতকাল রাতে পুলিশ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মাদ্রাসার হেফজখানা তালা ভেঙ্গে প্রবেশ করে ছাত্রদের ওপর হামলা করে। এসময় পুলিশের গুলিতে ৮/১০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে গুরুতর আহত হাফেজ মাসুদুর রহমানকে রাত ২টার দিকে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
পুলিশ স্বীকার করেছে, এক মাদ্রাসা ছাত্র নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এদিকে, সকালে মাদ্রাসার ছাত্র নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে মাদ্রাসার ছাত্ররা বিক্ষোভ করছে। ভোর থেকেই ছাত্ররা শহরের টিএ রোড, হাসপাতাল রোড়, কালীবাড়ি মোড়, মসজিদ রোড, কান্দিপাড়া রোড, মাদ্রাসার রোড, পাওয়ার হাউজ রোডসহ সকল সড়কে রোড ডিভাইডার, বাঁশ ফেলে রাস্তা বন্ধ করে দেয়। শহরের দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। রেলস্টেশন ও ব্যাংক এশিয়া ভাংচুর চালানো হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছে ছাত্ররা।
পুলিশ ফকিরাপুল ব্রিজের উপর অবস্থান নিয়ে মাদ্রাসার ছাত্রদের ধাওয়ায় থানার ফটকের সামনে অবস্থান নেয়। সকাল ৮টায় জামেয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার শীর্ষ আলেমদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকে বিকেল ৩টায় নিহতের জানাজা, পরে বিক্ষোভ এবং আগামীকাল বুধবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম. এ. মাসুদ, সদর থানার সার্কেল তাপস রঞ্জন ঘোষ ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকুল চন্দ্র বিশ্বাসকে মঙ্গলবার রাত ১২টার মধ্যে অপসারণ করার জন্য দাবি জানান জামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার শিক্ষকরা। সদর মডেল থানার সহকারী পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে দুই প্লাটুন বিজিবি সহ র্যাব, পুলিশ মোতায়ন রয়েছে। গত রাতের ঘটনায় পুলিশ মাদ্রাসা ছাত্রসহ শতাধিক লোক আহত হয়েছে। ৪ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে অন্তত ৫শ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৬২ রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।