ঢাকা : সদ্য ঘোষিত বেতন স্কেলে পদ-মর্যাদার অবনমনসহ তিন দফা দাবিতে ধারবাহিকভাবে চলতে থাকা অন্দোলন অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সোমবার থেকে এটি চলবে না বন্ধ হয়ে যাবে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। দুপুরে অফিসার্স কাউন্সিলের সদস্যদের প্রতি গভর্নরের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ও আশ্বাস এবং সন্ধ্যায় আন্দোলন ঠেকাতে সার্কুলার জারি করে নির্দেশনা প্রদান করায় এর ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোয়াশা তৈরি হয়েছে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, আগামীকাল (সোমবার) থেকে আন্দোলন আর এগুবে না।
অফিসার্স কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার সিদ্দিকী বাংলামেইলকে বলেন, ‘গভর্নর দুপুরে আমাদের সঙ্গে বৈঠক করে আশ্বস্ত করেছেন আগামী বোর্ড মিটিংয়ে (২৪ জানুয়ারি) বিষয়টি উত্থাপন করবেন। যে কারণে এ সময় পর্যন্ত সব ধরনের কর্মসূচি স্থগিত করার বিষয়ে মিটিংয়ে বসি আমরা। আমাদের মিটিং চলাকালেই জানতে পারি একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। যাতে ব্যাংকের গেটে বা চত্বরে কোনো ধরনের জটলা, সভা-সমাবেশ ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে অবশ্য আমরা মর্মাহত হয়েছি।’
শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা তো আলোচনা করছি কর্মসূচি স্থগিত করার বিষয়ে। তাহলে সার্কুলার জারি করে আমাদের আন্দোলনকে কেন এভাবে দমাতে চাচ্ছে, বিষয়টা বোধগম্য নয়। কারণ আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছিলাম।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, রোববার সকালে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী মূল ফটক বন্ধ রেখে আন্দোলন করছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। আন্দোলন চলাকালে ডিপার্টমেন্ট অব সুপারভিশনে কর্মরত কেয়ারটেকার ফকির উদ্দিন হাফেজ (৫০) স্ট্রোক করেন এবং মৃত্যুবরণ করেন। অভিযোগ উঠেছে, আন্দোলনের কারণে তাকে অ্যাম্বুলেন্স করে হাসপাতালে নিতে বিলম্ব হয়।’
উদ্ভূত পরিস্থিতে গর্ভনর অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের নেতাদের ডেকে পাঠান। বৈঠকে ড. আতিউর রহমান, ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামাল এবং কাউন্সিলের পক্ষে সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, প্রধান কার্যালয়ের মূল ফটকের সামনে কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন গভর্নর। তিনি জানিয়েছেন, বৈষম্যের প্রতিবাদে আন্দোলনে তারও সমর্থন রয়েছে। কিন্তু কাজ বাদ দিয়ে, কারো অসুবিধা সৃষ্টি করে আন্দোলন হোক সেটি তিনি চান না।
তবে সেসময় গভর্নর তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার পাশাপাশি আশ্বাসও দিয়েছেন বলে সূত্রে জানা যায়। যেটি ছিল আগামী বোর্ড মিটিংয়ে (২৪ জানুয়ারি) তাদের দাবির বিষয়টি তুলে ধরা হবে। অভিভাবক হিসেবে কর্মকর্তাদের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব নিয়ে পরবর্তী বোর্ড সভায় তা উত্থাপনের কথা দিয়েছেন তিনি। তার এ আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে অফিসার্স কাউন্সিল কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি ওই সময় পর্যন্ত স্থগিত করেছে। তবে সদ্য প্রবর্তিত বেতন স্কেলে পদ অবনমনের প্রতিবাদে কালো ব্যাজ ধারণসহ অন্যান্য কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে।
এদিকে সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংক একটি কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে সব ধরনের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অফিস অর্ডার জারি করা হয়। যাতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান। অপরিহার্য বিভিন্ন কারণে কারও যেন লেনদেন, যাতায়াতসহ কোনো কাজেই কোনোরূপ প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা না হয়। কারও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা যাবে না। মূল গেট, প্রতিষ্ঠান চত্বরে ও লিফটের সামনে কোনোরূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। কোনো প্রকারের জটলাও তৈরি করা যাবে না এসব জায়গায়।
এই সার্কুলার জারির পর অনেকটা ক্ষুব্ধই হয়েছে আন্দোলনরত কর্মকর্তারা। এদিকে অফিসার্স কাউন্সিল আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিলেও পরবর্তীতে তা আসলে চলবে না বন্ধ থাকবে তা জানাতে পারেনি অন্য কর্মকর্তাদের। তাই কাল থেকে আন্দোলন আসলে চলবে না বন্ধ হবে তা বলতে পারছে না কেউই।
উল্লেখ্য, অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে সহকারী পরিচালকদের ধাপ অবনমন, নির্বাহী পরিচালকদের প্রথম গ্রেডে না দেয়াসহ তিনটি দাবিতে বেশকিছুদিন ধরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চত্বরে আন্দোলন করে যাচ্ছে কর্মকর্তারা। যে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিল অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল।