গাজীপুর: টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের শেষ দিনে আজ ( রোববার) আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে এ মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের ৫০তম বিশ্ব ইজতেমা।
মোনাজাত শেষে মুসুল্লিরা জোটবদ্ধ হয়ে ইসলামী দাওয়াতি কাজে বের হবেন। বেলা সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে এই মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে বলে ইজতেমা আয়োজক কমিটি জানিয়েছেন।
আজ ফজরের নামাজের পর থেকেই শুরু হয়েছে আম বয়ান। বয়ান করছেন বাংলাদেশের মাওলানা মুশফিকুল ইসলাম। আম বয়ান শেষ হলে হবে হেদায়েতি বয়ান। আর তারপরই হবে আখেরি মোনাজত। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন তাবলীগ জামায়াতের শীর্ষ মুরুব্বী ও দিল্লীর মাওলানা মোহাম্মদ সাদ। এর আগে আজ ভোরে ফজরের নামাজের মাধ্যমে শেষ দিনের কর্মসূচি শুরু হয়।
এদিকে আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে ভোর থেকেই শীত উপেক্ষা করে লাখো লাখো মুসুল্লি এ ইজতেমা ময়দানে এসে সমবেত হয়েছেন। বিপুল সংখ্যক নারী মুসুল্লিরাও মোনাজাতে অংশ নিতে ইজতেমার আশপাশের সড়কে সকাল থেকেই অবস্থান নিয়েছেন। তারা ইসলামের আমল, আকীদা ও দাওয়াত বিষয়ে দেশি বিদেশি মুসুল্লিদের বয়ান শুনছেন।
আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ৫ স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ।
যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ: শনিবার রাত ৩টা থেকে রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানান গাজীপুর পুলিশ সুপার মো. হারুণ অর রশীদ। তিনি বলেন, ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর পর্যন্ত এবং টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের পূবাইলের মীরের বাজার থেকে টঙ্গী পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে ইজতেমায় গমনেচ্ছুক মুসুল্লি, উত্তরাবাসী, বিমান ক্রু ও যাত্রী বহনকারী যানবাহন, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, নিরাপত্তাবাহিনীর গাড়ি এবং অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে পারবে।
অন্যান্য যানবাহন চালকদের বিমান বন্দর সড়কের পরিবর্তে মিরপুর-সাভার সড়ক ব্যবহার করতে হবে বলে জানান তিনি।
এছাড়া উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী যানবাহনকে ভোগড়া বাইপাস মোড় ও মীরের বাজার হয়ে এবং সিলেট ও নরসিংদী থেকে আসা যানবাহনকে ঢাকা বাইপাস সড়ক ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। তবে বন্ধ থাকা ওইসব রাস্তায় ইজতেমার মুসুল্লিদের যাতায়তের জন্য শ্যাটলবাস চলাচল করবে। ঢাকার যেসব মুসুল্লি পায়ে হেঁটে ইজতেমায় যাবেন তাদের বিমান বন্দর গোল চত্বর-আজমপুর-আব্দুল্লাহপুর হয়ে তুরাগ নদীর উপর নির্মিত বেইলিব্রিজ অথবা কামারপাড়া ব্রিজ দিয়ে ইজতেমা মাঠে যেতে হবে বলে জানান তিনি।
বিশেষ ট্রেন সার্ভিস: টঙ্গী স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. হালিমুজ্জামান জানান, মুসুল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে আখেরি মোনাজাতের দিন ২৩টি বিশেষ ট্রেন এবং সকল ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজনসহ ১১১টি ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রাবিরতির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
শনিবারই মারা গেছেন তিন মুসল্লি: বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে আসা এক ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক শনিবার সন্ধ্যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। নিহতের নাম পুর্নম সোপান ওরফে সোফা হাজী (৬৫)।
বিশ্ব ইজতেমার পরিচালনা কমিটির মুরুব্বী প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, ওই বিদেশি মুসুল্লি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। প্রথমে তাকে ফরেন ক্যাম্পের চিকিৎসক ও পরে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বিশ্ব ইজতেমায় এশার নামাজের পর তার জানাজা নামাজ শেষে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের কবরস্থানেই তার ইচ্ছানুযায়ী তাকে দাফন করা হয়েছে।
এছাড়া গেল রাতে ইজতেমা এলাকায় আরো দুই মুসুল্লি মারা গেছেন। তারা হলেন- সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের দলিলুর রহমান ও একই জেলার হরিণারায়নপুর গ্রামের জয়নাল আবেদীন। এ নিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমায় ৮ মুসুল্লির মৃত্যু হয়েছে বলেও জানান তিনি।