ঢাকা: বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বিনা মাশুলে ট্রানজিট রুট ব্যবহার করে ত্রিপুরার পালাটানায় ৭৭৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি গ্যাসবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে ভারত। বাংলাদেশের সহযোগিতার জন্য ওই কেন্দ্র থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেদেশের সরকার। ১৬ ডিসেম্বর এ বিদ্যুৎ আমদানি শুরু কথা থাকলেও দর জটিলতায় তা আটকে যায়। ফলে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) সই করা সম্ভব হয়নি।
শেষ পর্যন্ত ওই ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য বাংলাদেশকে ভারতের প্রস্তাব করা সাড়ে ৫ রুপিই ( ৬ টাকা ৪১ পয়সা) দিতে হচ্ছে। শনিবার দুই দেশের বিদ্যুৎমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিষয়টি সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা দেয়া হবে।
সর্বশেষ গত ২৭ ও ২৮ নভেম্বর নয়াদিল্লিতে দুই দেশের বিদ্যুৎসচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সে বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা দেশে ফিরে বাংলামেইলকে জানিয়েছিলেন, ত্রিপুরার প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ভারত প্রথমে ৯ সেন্ট (৭ টাকা ১৩ পয়সা) চেয়েছিল। পরে তারা আট সেন্টে রাজি হয়। বাংলাদেশ প্রতি ইউনিটের জন্য ৬ সেন্ট (৪ টাকা ৭৫ পয়সা ) দিতে চেয়েছিল। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের প্রস্তাবে রাজি হয়নি।
আজকের বৈঠকে ভারতের দরটিই চূড়ান্ত হলো।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশ ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনছে। নতুন বিদ্যুতের দাম নতুন ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চেয়ে কম পড়ছে। ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর ভারত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা হয়ে এ বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়।
এ বিষেয়ে বিদ্যুতের ক্রেতা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলামেইলকে বলেন, ‘ভারতে থেকে আমদানি করা ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ২৫০ মেগাওয়াট আসছে সে দেশের সরকারি খাত থেকে। এর দাম পড়ছে প্রতি ইউনিট সাড়ে চার সেন্ট (তিন টাকা ৫৬ পয়সা)। আর ২৫০ মেগাওয়াট বেসরকারি কোম্পানির কাছ থেকে কিনে আনা হচ্ছে। এর জন্য প্রতি ইউনিটের ব্যয় সাড়ে পাঁচ সেন্ট (চার টাকা ৩৬ পয়সা)।’
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ৭২৬ মেগাওয়াটের পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারি যন্ত্রপাতি পরিবহনে ট্রানজিট সুবিধা দেয় বাংলাদেশ। কেন্দ্র নির্মাণের মালামাল নেয়া শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের মার্চ থেকে। আগস্ট পর্যন্ত ১৪টি চালানে ভারি যন্ত্রপাতি ত্রিপুরা নেয়া হয়। আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে লম্বা ট্রেলারে করে যন্ত্রপাতিগুলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ওপর দিয়ে আখাউড়া সীমান্ত হয়ে ত্রিপুরার আগরতলায় যায়। এতে করে স্থানীয় রাস্তা ও নদী ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
ওই সময় ত্রিপুরা রাজ্য সরকার এ কেন্দ্র থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশকে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘কৃতজ্ঞতাস্বরূপ’ বাংলাদেশকে এ কেন্দ্র থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেয়া হবে।
ইতোমধ্যে ত্রিপুরার সুরজমনি নগর থেকে বাংলাদেশের কুমিল্লা পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করেছে পাওয়ার গ্রিড করপোরেশন অব ইন্ডিয়া (পিজিসিআইএল)। আর বাংলাদেশের ভেতরে আরও ৪৭ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করেছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।