রাজশাহী থেকে আসা গাছি নবাব আলী জানান, গত বছর গাংনী এলাকা থেকে তাদের ভালো লাভ হয়েছিল। তাই এবারো কার্তিকের শেষ দিকে তারা জুগিরগোফা গ্রামে এসেছেন। এলবার্ট মিয়ার বাগানসহ আশপাশের প্রায় ৪০০ খেজুরগাছ থেকে রস আহরণের জন্য গাছ মালিকদের কাছ থেকে ঠিকা নিয়েছেন তারা।
পালাক্রমে সপ্তাহের প্রতিদিন এসব খেজুরগাছ ছিলে রস আহরণ করেন। দুপুর হলেই গাছিরা বেরিয়ে পড়েন খেজুর বাগানে। গাছের মাথার দিকে ছিলে ঠিলে বেঁধে রাখেন। সারারাত ওই ঠিলে (কলস) রস জমা হতে থাকে। তারপর ভোরে তা সংগ্রহ করেন গাছিরা। আহরিত রস একটি পাত্রে দীর্ঘক্ষণ জ্বালিয়ে প্রস্তুত করেন গুড় ও পাটালি।
গাছিরা জানান, এলাকার মানুষের বাড়ির আঙিনাসহ বিভিন্ন স্থানে অনেক খেজুরগাছ রয়েছে। এগুলো থেকে তারা রস আহরণ করেন। এর বিনিময়ে খেজুরগাছ মালিকদের গাছপ্রতি কিছু টাকা কিংবা গুড় দেয়া হয়। প্রতিদিন তারা প্রায় এক মণ গুড়-পাটালি উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন বলে জানান গাছী নবাব।
গাংনী বাজারের গুড় ব্যবসায়ী জসিম উদ্দীন জানান, প্রতিদিন তিনি জুগিরগোফা গ্রামের গাছিদের কাছ থেকে গুড় কিনে জেলার বিভিন্ন হাটে বিক্রি করেন। অন্য জেলার গুড়ের চেয়ে এখানকার গুড় ভেজালমুক্ত ও সুস্বাদু হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদা ব্যাপক। প্রতি কেজি গুড়ের পাইকারি দাম ৭০ ও খুচরা ৮০ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে স্পেশাল গুড়-পাটালির দাম আরো বেশি। ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী গুড়-পাটালি সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রতি কেজি ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে।
হিজলবাড়িয়া গ্রামের গাছি ইকরামুল হক জানান, তিনি প্রায় ৫০ বছর ধরে গাছির কাজ করছেন। শরীরে এখন আর আগের মতো জোর না থাকলেও পেশা ও নেশার টানে এখনো তিনি খেজুরগাছ ছিলে রস আহরণ করেন। প্রতিদিন ৫-১০ কেজি গুড় তৈরি করে তা বিক্রি করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন।
মেহেরপুর জেলার প্রতিটি গ্রামেই দেখা মেলে খেজুরগাছের। রস আহরণ প্রক্রিয়া কষ্টসাধ্য হওয়ায় আজকাল অনেক গাছিই এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তবু এখনো স্বল্প পরিসরে হলেও রস আহরণ ও গুড় তৈরি চোখে পড়ে বিভিন্ন স্থানে। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অনেকেই স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন গুড়-পাটালি। এ গুড় দিয়েই ঐতিহ্যবাহী খেজুর রসের পিঠা-পুলি তৈরি হয় ঘরে ঘরে।