ঢাকা: কোনো রকম পূর্বাভাস ছাড়াই হঠাৎ ভূপৃষ্ঠ কেঁপে ওঠাকে ভূমিকম্প বলে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এই কাঁপুনি ছড়িয়ে পড়ে দূর-দূরান্তে। ভূমিকম্পের বিস্তৃতিকে পানির ঢেউয়ের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। স্থীর পুকুরের পানিতে ঢিল ছুড়ে দিলে নিক্ষিপ্ত স্থানের চারপাশে পানির ঢেউ যেভাবে ছড়িয়ে পড়ে, ভূমিকম্পও উৎপত্তিস্থল থেকে ঠিক সেভাবে ছড়িয়ে যায়। আর এ ঘটনা ঘটে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যাবধানে। কম্পনের মাত্রা অনেক বেশি হলে মালামালের ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণনাশ হতে পারে। তবে ভূমিকম্পের মাত্রা সহনীয় থাকলে কোনো রকম ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া প্রাণে বেঁচে যাওয়া সম্ভব। অথচ এমন পরিস্থিতিতেও অনেকে ভয়ে দিশেহারা হয়ে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে। উচু তলা থেকে লাফ দিয়ে প্রাণ বাঁচাতে চায় অথবা দৌড়ে নিচে পালায়। এতেই তারা বেশি বিপদ ডেকে আনেন। কারণ ভূমিকম্পের সামান্য ওই সময়ে দৌড়ে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব নয়। তবে এমন সময়ে নিজেকে রক্ষা করার জন্য কিছু জরুরি ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। যা আপনাকে হঠাৎ ভূমিকম্পের সময় সাহায্য করবে।
– যে ঘরে আপনি বেশিরভাগ সময় থাকেন, যেমন- নিজ বাড়ি বা অফিস কক্ষের নিরাপদ স্থানটি জেনে রাখতে হবে।
– রাতে ঘুমানোর সময় বিছানার কাছাকাছি বা বালিশের নিচে একটা টর্চ রেখে দিন।
– হাতের কাছে হেলমেট রাখতে পারেন। ভূমিকম্পের সময় যেন দ্রুত পরে নেয়া যায়।
– বাড়ির সবার জন্য একটা পরিকল্পনা করুন। ভূমিকম্পের সময় কে কী করবেন, কোথায় আশ্রয় নেবেন, কাকে জানাবেন ইত্যাদি।
– ঘরের ভেতর শক্ত টেবিল, বেঞ্চ বা ডেস্ক থাকলে মাথার ওপর বালিশ দিয়ে আশ্রয় নিতে পারেন।
– ছাদ ভাঙার আশঙ্কা থাকলে দেয়ালে ‘ট্রায়াঙ্গল স্থান’ তৈরি হতে পারে এমন স্থানে আশ্রয় নিন।
– ঘরের বাইরের দিকের দেয়াল বা বিমের পাশে আশ্রয় নিন।
– ভূমিকম্পের সময় নিরাপদে বের হওয়া যাবে এমন পথ জেনে রাখতে হবে।
– বাড়িতে ভারী জিনিসপত্র বেশি উচ্চতায় রাখা ঠিক নয়।
– আলমারি, ফাইল কেবিনেট, ফ্রিজ, ওয়ারড্রোব ইত্যাদির পেছন থেকে আংটা দিয়ে বেঁধে রাখুন। তাহলে ভূমিকম্পের সময় এগুলো পড়ে ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
– স্কুল, হাসপাতাল, ওয়ার্ড ও অফিসগুলোতে মহড়ার আয়োজন করুন। যাতে প্রয়োজনের সময় তাড়াহুড়ায় সব এলোমেলো না হয়।
– আগুন জ্বালাতে সাহায্য করে এমন তেল বা গ্যাসের কনটেইনারগুলো নিরাপদ দূরত্বে রাখুন।
– দ্রুত গ্যাস লাইন, বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিন।
– বাইরে থাকলে অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গায় আশ্রয় নিন।
– বড় গাছ, ব্রিজ, বিদ্যুৎ লাইন থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন।
– গাড়িতে থাকলে ধীরে ধীরে গাড়ি থামিয়ে দিতে হবে। রাস্তার ধারে গাড়ি থামিয়ে গাড়ির মধ্যেই অবস্থান নিন।
– বড় ভূমিকম্পের পর পরই ছোট কয়েকটি ভূমিকম্প হয়। একে বলা হয় ‘আফটার শক’। এ জন্য সতর্ক থাকুন।
– বাড়ির বীমা করা না থাকলে জলদি করে রাখুন, প্রয়োজনে কাজে আসবে।