ঝুঁকিতে দেশীয় ইলেকট্রনিক্স খাত, বাড়বে দাম

অর্থ ও বাণিজ্য

2015_12_27_21_25_22_nhklAe6Isq9qJPUzriU5imeZR8RZPY_original

 

 

 

 

 

ঢাকা : কপার টিউব, কপার বার ও কপার প্লেট আমদানির উপর রেগুলেটরি ডিউটি বা নিয়ন্ত্রণযোগ্য কর আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আর এ কর আরোপের জন্য দেশের উদীয়মান কেবল, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স শিল্পখাত মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হতে যাচ্ছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

আগে কপার টিউব, বার ও প্লেটের কাঁচামাল আমদানিতে যথাক্রমে ৩১.০৭ শতাংশ, ৩৭.০৭ এবং ৩৭.০৭ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। এর সঙ্গে রাজস্ব বোর্ড গত ৬ ডিসেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে কাঁচামাল কপার টিউব, বার ও প্লেটের উপর যথাক্রমে ১৫, ১৫ ও ১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণযোগ্য কর আরোপ করেছে।

এই অতিরিক্ত কর আরোপের বিষয়ে অভিযোগ করে সংশ্লিষ্টরা বলেন, এনবিআরকে ভুল বুঝিয়ে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশীয় শিল্পবিরোধী একটি চক্র অতিরিক্ত শুল্ক আরোপে প্ররোচিত করেছে। বিষয়টি যথাযথভাবে খতিয়ে না দেখে এবং খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা না বলে এনবিআর রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করে। এর ফলে আমদানি বিকল্প মানসম্পন্ন ওয়্যার, কেবল, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, টেলিভিশন, মোটর, ফ্যান, সুইচ, সকেটসহ ইলেকট্রিক্যাল পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি প্রতিষ্ঠান আগামী এপ্রিল মাসে দেশে কপার টিউব, বার এবং প্লেট উৎপাদনের জন্য মেশিনারিজ সেটাপ শুরু করতে যাচ্ছে। উৎপাদনে যেতে তাদের এবছর লেগে যাবে। তারপরও সেখানে মান সম্পন্ন কাঁচামাল তৈরি সম্ভব কি না তা নিয়ে ব্যাপক সংশয় রয়েছে। অথচ সেই প্রতিষ্ঠানটিকে সুরক্ষা দিতে পুরো ইলেকট্রনিক্স খাতকে আগাম জিম্মি করা হয়েছে। বর্তমানে ভারি শিল্পে ব্যবহারের জন্য এ ধরনের কপার কাঁচামাল তৈরির কোনো কারখানা দেশে নেই। এদিকে কপারযুক্ত ফিনিশড পণ্য আমদানিতে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়নি। কিন্তু কাঁচামাল হিসেবে কপার আনলে যদি বাড়তি শুল্ক দিতে হয় তা অসম প্রতিযোগিতা এবং শিল্পায়নবিরোধী বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে বিআরবি কেবলসের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান  বলেন, ‘এনবিআর রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করলে অবশ্যই পণ্যমূল্য বেড়ে যাবে।’

মিনিস্টার হাইটেক পার্ক লিমিটেডের চেয়ারম্যান এমএ রাজ্জাক খান বলেন, ‘হঠাৎ করে কপারের উপর নিয়ন্ত্রণমূলক কর আরোপ করা অযৌক্তিক। এর ফলে মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিনিয়োগকারীরা। কারো সঙ্গে আলোচনা না করে এনবিআর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে করে পণ্যমূল্য বেড়ে যাবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত দেশের উদীয়মান শিল্পখাতকে নিরুৎসাহিতও করবে।’

দেশে এ ধরনের মানসম্পন্ন কপার পণ্য তৈরি হয় না। সুতরাং কীভাবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত হলো তা বোধগম্য নয়- বলেও যোগ করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে ওয়ালটনের অপারেটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিম বাংলামেইলকে জানান, আশা করি সরকার তথা এনবিআর বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনায় নেবে। কারণ এটা দেশীয় শিল্পবিরোধী একটি পদক্ষেপ। এর ফলে দেশে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। আমদানি করা পণ্যের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতা শুরু হবে। দেশীয় উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। নতুন শিল্পস্থাপন নিরুৎসাহিত হবে। অন্যদিকে বাজারে টিকে থাকার জন্য বিকল্প কাঁচামাল ব্যবহার করলে বাংলাদেশে তৈরি শিল্প পণ্যের নেতিবাচক ইমেজ তৈরি হবে। এজন্য এসআরওটি প্রত্যাহার সবার কাম্য।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনবিআর কর্মকর্তা বলেন, ‘কর নেট বাড়ানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ হাতে নিচ্ছে। কেননা আমাদেরকে সামনে বিশাল রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে হবে। তবে কপারের উপর নিয়ন্ত্রণমূলক কর আরোপের যে এসআরও করা হয়েছে, তা অনেক ভেবে চিন্তে ও সহনীয় মাত্রায়। তবে এক্ষেত্রেও ভালোমন্দ উভয় দিক নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের আলোচনার সুযোগ আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *