তোমার বেলায় নিব সখি তোমার কানের সোনা

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ ঢাকা ফুলজান বিবির বাংলা

10562933_10203114338114091_4134057623535432788_n

ষ্টাফ করেসপনডেন্ট
গ্রাম বাংলা নিউজ২৪.কম
গাজীপুর অফিস: নদী বাইয়া যাওরে—- অকু-ল দরিয়ার মাঝে আমার ভাঙ্গা নাও— মাঝি বাইয়া যাও রে। সব সখিরে পাড় করিতে নিব আনা আনা— তোমার বেলায় নিব সখি তোমার কানের সোনা।

বাঙালী সংস্কৃতির এক সময়ে পাগল করা গান গুলো এখন হারিয়ে গেছে। গানের সঙ্গে সঙ্গে বিলিন হয়ে যাচ্ছে গানের ভ্যানুগুলোও। প্রকৃতির লীলাভূমি গাজীপুরে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে জায়গা না পেয়ে হাজারো দর্শক ভীড় করেছিলেন ইতিহাসে হারিয়ে যাওয়া এমনি এক পর্যটন ভ্যানু ঐতিহাসিক চিলাই বিলের পাড়ে। বিল বা নদীতে পাল তোলা নৌকার মাঝিরা এই ধরণের গান গেয়ে দুই তীরের মানুষগুলোকে লোকজ সংস্কৃতিতে মাতিয়ে তোলতেন। ইহিতাসের আস্তাকুঁড়ে আজ হারিয়ে যাচ্ছে ওই মনকারা গান আর বিলিন হয়ে গেছে ভ্যানুগুলোও।
chilai-2

সরেজমিন মঙ্গলবার বিকালে গাজীপুর মহানগরের কানাইয়া বাজার সংলগ্ন চিলাই নদীর ব্রীজকে ঘিরে দেখা যায় বিশাল পরিসরে ওই আনন্দ আড্ডা। বিকাল ৫টার পর ব্রীজ ও বিলের দ্বারে তিল ধারণের জায়গা পাওয়া যায়নি। স্বপরিবারে শহরের মানুষগুলো মোটর সাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, রিক্সা, ভ্যান ও চার্জার রিক্সা করে চলে এসেছেন চিলাই বিলের পাড়ে। ঈদের দিনে পরিবার পরিজন নিয়ে একটু খোলা মেলা সময় কাটাতে তারা বিলের দ্বারে এসেছেন বলে জানান।

চিলাই বিলের পাড়ে পাওয়া গেলো অসংখ্য ইঞ্জিনচালিত নৌকা। এসকল নৌকায় চড়ে পর্যটকরা চিলাই বিল দিয়ে পূবাইল হয়ে শীতলক্ষায় যেতে পারেন। শীতলক্ষা দিয়ে দেশের যে কোন জায়গায় ইচ্ছে করলে তারা ভ্রমন করতে পারেন।

রং-বেরংয়ের কাগজে দিয়ে সাজানো নৌকাগুলোতে রয়েছে মিউজিক সিষ্টেম। নৌকা গুলো চলার সময় মিউজিকের তালে তালে পর্যটকরা নাচ-গান করেন।

কানাইয়া বাজারের বিপরীতে ব্রীজের অপর প্রান্তে চিলাই নদীর ঐতিহ্যৃকে স্বরণ করিয়ে দিতে স্থাপন করা হয়েছে ভাসমান রেষ্টুরেন্ট। চটপটি, ফুসকা, চা, কফি এমনকি ভাতের হোটেলও রয়েছে বিলের দ্বারে। একাধিক হোটেলে বসার জন্য আছে প্লাষ্টিকের চেয়ার ও টেবিল। একটি টেবিলের চারপাশে সাজানো চেয়ারের প্রতিটি সেট কাষ্টমারদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বিলের দ্বারে বিভিন্ন সুবিধাজনক স্থানে।

চটপটির দোকানে স্বপরিবারের ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে এসেছেন গাজীপুর বারের আইনজীবী দম্পতি এড, আবু নাছের বিন কবীর মাসুম ও তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকী চন্দন। সাথে তাদের একটি ছোট শিশু।

আইনজীবী দম্পতি জানালেন, গাজীপুরে প্রাকৃতিক পরিবেশে একটু নিঃশ্বাস নিতে তারা প্রায়ই এখানে আসেন। স্বপরিবারের মোটর সাইকেলে করে গাজীপুর শহর থেকে চিলাই বিলের দ্বারে আসতে সময় লাগে ২০ মিনিট।

গাজীপুর রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক রায়হান মিয়া জানান, ব্রীজের একটু সামনেই তার বাড়ি। স্বপরিবারে তিনি গাজীপুর শহরে বসবাস করলেও প্রায়ই শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন শুধু চিলাই বিলের দ্বারে একটু সময় কাটানোর জন্য। চিলাই বিলের এই পর্যটন কেন্দ্রের কাছে বাড়ি হওয়ায় শহরের লোকেরা প্রায়ই তার বাড়িতে মেহমান হয়ে আসেন।

চিলাই বিলের পাড়ে দেখা মিলে বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের দুই কর্মকর্তা। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক মনোয়ার হোসেন রনি ও ডাঃ বোরহান উদ্দিন অরণ্য ও । তারা জানালেন,  প্রধানমন্ত্রী নদী উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই ইতিহাসে তলিয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক চিলাই বিলকে কিভাবে উদ্ধার করা যায় এই সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে বিলটি পরিদর্শন করছেন তারা। এই বিলের হারানো ঐতিহ্যৃ ফিরিয়ে এনে পর্যটন সুবিধাগুলো সরকারের কাছে উপস্থাপনের জন্য কাজ করছেন ওই দুই কর্মকর্তা।

সাধারণ পর্যটকরা বলছেন, এই জায়গাটি একটি অতীত ইতিহাস আছে। চিলাই বিল এক সময় সমুদ্র বন্দর ছিলো। বড় বড় জাহাজ নোঙ্গর করত কানাইয়া ঘাটে। মানুষের মুখে মুখরোচক গল্প শুনে বাস্তবে দেখতে এসে তারা প্রচুর আনন্দ উপভোগ করছেন। জায়গাটিকে একটি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করতে তারা সরকারের কাছে দাবি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *