‘স্বর্গ থেকে নরক’

বিনোদন ও মিডিয়া

untitled-2_182111

 

 

 

 

 

মেধাবী ছাত্র তরুণ ইমন বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে থাকার সময় বন্ধুদের প্ররোচনায় একসময় নেশায় জড়িয়ে পড়ে। দিন দিন তার মাদকাসক্তি বাড়তে থাকে। ওদিকে মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে নিপুণ র‌্যাম্প মডেল হিসেবে বিনোদন অঙ্গনে যাত্রা শুরু করে। র‌্যাম্পের রঙিন ভুবনে চলতে চলতে সেও একদিন মাদকাসক্ত হয়। তারুণ্যদীপ্ত যে জীবন স্বর্গের মতো ছিল, তা নরক হয়ে ওঠে। ইমন আর নিপুণের দিকে তাকিয়ে যে কারও তখন মনে হতে থাকে, ‘কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর? মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেতে সুরাসুর’। শেখ ফজলল করিমের লেখা ‘স্বর্গ ও নরক’ কবিতার এ প্রারম্ভিক বাক্যের সঙ্গে সবাই পরিচিত। তার সে কবিতায় প্রণোদিত হয়েই প্রখ্যাত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী তার পরিচালনায় নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্রের নাম রেখেছেন ‘স্বর্গ থেকে নরক’। আজ সারাদেশে ছবিটি একযোগে মুক্তি পাচ্ছে।

মাদক ও ধূমপানবিরোধী চলচ্চিত্র ‘স্বর্গ থেকে নরক’-এর প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নায়ক ফেরদৌস ও দু’বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নায়িকা নিপুণ। আরও অভিনয় করেছেন আহমেদ শরীফ, শর্মিলী আহমেদ, রহমত আলী, ওয়াহিদা মলি্লক জলি প্রমুখ। এ চলচ্চিত্রের কাহিনী, সংলাপ ও চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন ড. অরূপ রতন চৌধুরী নিজেই।
সমাজ ও তারুণ্যের এক গভীরতর অসুখ উঠে এসেছে এ চলচ্চিত্রে। ইমন ও নিপুণ এই তরুণ সমাজের প্রতিনিধি। মাদকাসক্ত হয়ে পড়ার পর তাদের দু’জনকেই পরিবারের সিদ্ধান্তে ভর্তি করা হয় মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে। সেখানে প্রথম দেখাতেই ইমন নিপুণের প্রেমে পড়ে যায়। ইমন মাদক ছাড়তে পারলেও নিপুণ কোনোভাবেই মাদকের জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে পারে না। নিরাময় কেন্দ্র থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে আসে বটে; কিন্তু আবারও ডুবে যায় মাদকের চোরাবালিতে। তাকে পুরোপুরি সুস্থ করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ইমন। এরপর দু’জন মিলে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে তারা নেমে পড়ে রাজপথে। ধ্বনিত হয় এই সত্য, তারুণ্য কখনও পরাজিত হয় না।
‘স্বর্গ থেকে নরক’ নির্মাণ প্রসঙ্গে ডা. অরূপ রতন চৌধুরী বললেন, ‘আমরা মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) মাধ্যমে দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে মাদকবিরোধী আন্দোলন করে আসছি। এ আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে এবার চলচ্চিত্রকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছি। কীভাবে মাদক আমাদের সমাজের রল্প্রেব্দ রল্প্রেব্দ প্রবেশ করছে এবং কীভাবে এর প্রতিকার করা যায়, সে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে এ চলচ্চিত্রে। আশা করছি, সবাই আমাদের পাশে থেকে চলচ্চিত্রটি সবার মাঝে পেঁৗছে দিতে সহযোগিতা করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলচ্চিত্র একটি বৃহৎ ও প্রধান গণমাধ্যম। তাই এর সাহায্যে যে কোনো বক্তব্য সহজে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পেঁৗছানো যায়। আমার বিশ্বাস, ছবিটি দেখে দেশের সব শ্রেণীর মানুষ মাদকবিরোধী দেশ ও সমাজ বিনির্মাণে উৎসাহিত হবেন ও ভূমিকা রাখবেন।’
এ চলচ্চিত্রের অন্যতম অভিনেতা ফেরদৌস বলেন, ‘তেজগাঁও মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে এ চলচ্চিত্রের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র সম্পর্কে আমার খুব বেশি ধারণা ছিল না। ওখানে গিয়ে দেখেছি, মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা একসঙ্গে শপথ নিচ্ছেন, জাতীয় সঙ্গীত গাইছেন। সেখানে দেখলাম দেশপ্রেম, ধর্মের প্রতি মমতা, বড়দের সম্মান জানানোর বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একজন মানুষ যখন মাদকাসক্ত হয় তখন তার মধ্য থেকে এ দিকগুলো পুরোপুরি লোপ পায়; কিন্তু সে যখন সঠিক চিকিৎসা ও সহানুভূতি পায় তখন তার মধ্যে সুপ্রবৃত্তিগুলো আবারও ফিরে আসতে থাকে।’
চলচ্চিত্রটির অন্যতম অভিনেত্রী নিপুণ বলেন, ‘এ ছবিতে আমি একজন র‌্যাম্প মডেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছি। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েটি একসময় মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। এরপর তাকে নিয়ে আসা হয় পুনর্বাসন কেন্দ্রে। সেখানে তার পরিচয় হয় ফেরদৌসের সঙ্গে। এরপর ঘটে অনেক নাটকীয় ঘটনা। মাদক থেকে ফিরে আসা যে খুব সহজ আবার মোটেও সহজ নয়, এ দুটি দিকই সার্থকভাবে নিয়ে এসেছেন পরিচালক। পুরো ছবিতে আমার অভিনয়ের অনেক সুযোগ ছিল। আমি চেষ্টা করেছি চরিত্রটিকে শতভাগ বাস্তবসম্মত করার।’
ডা. অরূপ রতন চৌধুরী জানালেন, আজ ঢাকার ছয়টি প্রেক্ষাগৃহে ‘স্বর্গ থেকে নরক’ ছবিটি মুক্তি দেওয়া হলেও এটি সারাদেশে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়াও বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *