ঢাকা: বিশ্ব ইজতেমা মাঠ ও আশপাশ এলাকায় যেকোনো ধরনের নাশকতা, বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ইজতেমা মাঠসহ পুরো টঙ্গী এলাকাজুড়ে পোশাকে ও সাদা পোশাকে ১৬ হাজারেরও বেশি পুলিশ ও র্যাব সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।
ইতোমধ্যে ওই এলাকায় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকও কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, আসন্ন ইজতেমাকে সামনে রেখে বিদেশি নাগরিকরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। তাদের নিরাপত্তায় হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু করে বিশ্ব ইজতেমা মাঠ পর্যন্ত পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকার বাইরে থেকেও কয়েক হাজার ফোর্স আনা হবে। ইজতেমা মাঠকে ঘিরে বোমা ডিজপোজাল টিম,পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, ওয়াচ টাওয়ার ডগ স্কোয়াড ছাড়াও আকাশপথে টহলে থাকবে র্যাবের হেলিকপ্টার।
এছাড়া ছিনতাইকারী, মলম পার্টির দৌরাত্ম ও ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বেচাকেনা বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রস্তুত থাকবে।
টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি প্রথম দফায় টঙ্গী তুরাগ নদীর তীরে তিন দিনব্যাপী ইজতেমা শুরু হবে। ১০ জানুয়ারি দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্ব ।
এরপর ১৫ জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বে তিন দিনের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবে। ১৭ জানুয়ারি দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে।
টঙ্গী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার বাংলানিউজকে জানান, বিশ্ব ইজতেমা শুরুর কয়েকদিন আগ থেকেই মাঠ ও তার আশপাশ এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হবে।
হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, দুই পর্বের ইজতেমায় অংশ নিতে প্রায় ১৮ হাজার বিদেশি নাগরিক আসার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে মুসল্লিরা আসা শুরু করেছেন।
বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ (এপিবিএন) ও ইমিগ্রেশন সূত্র আরো জানায়, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বিদেশ থেকে আসা নাগরিকদের কাগজপত্র ও ভিসা যাচাই-বাছাই করা হবে। বিশেষ করে পাকিস্তান ,নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, সুদান, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ ৮/৯টি দেশের নাগরিকদের উপর কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে।
এছাড়াও ভাইরাস আক্রান্ত আফ্রিকান দেশগুলো থেকে যদি কেউ বিশ্ব ইজতেমায় আসে তার জন্য বিমানবন্দরে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ কমিটি দায়িত্ব পালন করবেন। তারা সন্দেহভাজনদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন। তার জন্য বিমানবন্দরজুড়ে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
গত ১৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বিশ্ব ইজতেমা ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ৮ থেকে ১০ জানুয়ারি প্রথম পর্ব এবং ১৫ থেকে ১৭ নভেম্বর টঙ্গি পাড়ে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।
গত বছর ইজতেমায় ১১ হাজার বিদেশি মেহমান এসেছিলেন উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এবার বেশি বিদেশি মেহমান আসলেও সে ব্যবস্থা রয়েছে। বিদেশিদের বিশ্ব ইজতেমায় আসার জন্য বিভিন্ন মিশনে স্পেশাল ভিসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভিসা সংক্রান্ত কমিটি গঠন করে ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। যদি বিদেশিরা বেশিদিন থাকতে চান বা অন্য কোনো দেশে যেতে চান সেক্ষেত্রে ভিসা এক্সটেনশন করারও ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। আগত মুসল্লিদের সেবার জন্য ওয়াসা, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য ব্যবস্থাও থাকছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া শাখার অতিরিক্ত উপ কমিশনার (ডিসি) এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার বাংলানিউকে বলেন, সাম্প্রতিক বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারো ডিএমপির পক্ষে থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বাংলানিউজকে জানান, বিশ্ব ইজতেমা মাঠের নিরাপত্তা ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যাবের একাধিক টিম ইজতেমা মাঠের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।
ইজতেমা উপলক্ষ র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারিও শুরু হয়েছে। ইজতেমা শুরুর আগেই র্যাবের গোয়েন্দারা কাজ শুরু করেছেন। বিদেশি মেহমানদের নিরাপত্তায় বিশেষ নজরদারি রাখা হবে বলে জানান মুফতি মাহমুদ খান।
সূত্রগুলো জানায়, ইজতেমা মাঠের নিরাপত্তায় গাজীপুর জেলা পুলিশ, রেল পুলিশ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, স্পেশাল বাঞ্চ (এসবি) সিআইডির ক্রাইমসিন টিমসহ বিভিন্ন শাখা পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে।
এদিকে, রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) সূত্র জানিয়েছে, ইজতেমাকে সামনে রেখে কমলাপুর, এয়ারপোর্ট ও টঙ্গী রেল স্টেশন, রেল লাইনসহ ট্রেনে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এজন্য বাড়তি ফোর্সসহ অন্যান্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে।