পৌর ভোটে সেনা চান খালেদা

Slider রাজনীতি

 

0_169806

 

 

 

 

 

ঢাকা: পুলিশকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে, এমন অভিযোগ করে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে যে পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তাতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। অবশ্য সারাদেশের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তাই সেনা মোতায়েনের দরকার নেই বলে ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ।

খালেদা জিয়ার বক্তব্য, ‘প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচন হচ্ছে। এ নির্বাচন নিয়ে সরকার নতুন ফন্দি এঁটেছে। এ নিয়ে তাদের গভীর ষড়যন্ত্র আছে। তারা দেখিয়ে দেবে ধানের শীষের পক্ষে জনগণ নেই, সব নৌকাতে। কিন্তু নৌকা যে ডুবতে বসেছে তা তারা ভুলে গেছে। নৌকার মধ্যে কত গণ্ডগোল।’

সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন এসব কথা বলেন।

‘নির্বাসিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সাহসী মানুষের ঐক্য ও আন্দোলনের বিকল্প নেই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি বলে দিতে পারি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ৮০ভাগ বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করবে। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশনের থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘হাসিনা নিজে নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ করেছেন। কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, বোবা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। কিন্তু হাসিনা সেনা মোতায়েন করবে না।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘ক্ষমতাসীনদের দেশের প্রতি মায়া নেই। দেশের প্রতি কোনো দায়িত্ব নেই তাদের।’

তিনি বলেন, ‘তারা কখনও স্বাধীনতা চায়নি। তারা ক্ষমতা চেয়েছে সবসময়। তারা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিল। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না।’

মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে উল্লেখ করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ কে খন্দকার বইয়ে সত্য কথা লিখেছেন, তা প্রত্যাহার না করায় তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করেনি। চাটুকারদারদের জন্য শেখ সাহেব মুক্তিযোদ্ধাদের কথা শুনতে পারেননি।’

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ভালোভাবে বিশ্লেষণ না করলে বোঝা যাবে না তারা কত নোংড়া আর হিংস্র।’

রাজাকারদের মন্ত্রী বানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছেন তা অস্বীকার না করলেও এ নিয়ে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, ‘সত্যিকারের রাজাকারদের বিচার চাই, তবে সে বিচার হতে হবে স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের। তাদের ঘরে যুদ্ধাপরাধী রয়েছে। আরো বড় অপরাধী রয়েছে। সরিষা বাড়ির নুরুল ইসলাম রাজাকার, তাকে মন্ত্রী বানানো হয়েছে। আরো অনেকে আছে। শুধু বিএনপিকে বলা হয়। ভুলে যান নাকি মুছে দিতে চান? জনগণ এসব ভোলেনি।’

ওয়ান ইলেভেনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘বিএনপি এবং আমার ওপর জুলুম অত্যাচার করা হয়েছে। তারেকের কী অবস্থা করেছে আপনারা দেখেছেন। এখনো তার চিকিৎসা চলছে। লন্ডনে সপ্তাহে দুবার ডাক্তার দেখাতে হয়।’

খালেদা জিয়ার মা মারা যাওয়ার সাতদিন আগে তারেক রহমান এবং কোকোর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিল কিন্তু দেখা করতে দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলেও পরবর্তীতে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে অংশ নেয়ার ব্যাখা দেন বিএনপি প্রধান। তিনি বলেন, ‘আমরা পরবর্তী নির্বাচনে গিয়েছি কারণ, এগুলো স্থানীয় নির্বাচন। স্থানীয় নির্বাচনে সবার মাঝে একটা  আমেজ থাকে।’

সকল মুক্তিযোদ্ধাদের ২০ দলের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার আহবান জানান খালেদা জিয়া। সমালোচনা করেন নির্বাচন কমিশনের।

খালেদা জিয়া বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু স্বপ্নই থেকে যাবে। আমরা এসে দুটি সেতু করবো।

তিনি আরো বলেন, ‘হাসিনার হাতে রক্ত রক্ত আর রক্ত। আমরা আল্লাহকে বিশ্বাস করি। আল্লাহ আমাদের সহযোগিতা করবে। আমাদেরও চেষ্টা করতে হবে। কোনো স্তরের মানুষ ভালো নেই, মা-বোনসহ। আসুন আমারা আরেকবার জেগে উঠি।’

মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-  বিএনপির ভারপাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) জেনারেল হাফিজ, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল,  অ্যাডভোকেট শিরিন সুলতানা, শামীমুর রহমান শামীম।

সোমবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এ সভায় উপস্থিত হন খালেদা জিয়া। ডায়াসে আসন গ্রহণ করার পর মুক্তিযোদ্ধা দলের পক্ষ থেকে তাকে ক্রেস্ট দেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম দলের পক্ষ থেকে জানানো হয় ফুলেল শুভেচ্ছা।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *