চট্টগ্রাম: নগরীর বন্দর থানার কলসি দিঘির পাড় এলাকায় মা-মেয়ের বিষপানের নেপথ্যের কারণ হিসেবে পুলিশ যা সন্দেহ করছিল প্রাথমিক তদন্তেও তা-ই পাওয়া গেছে। কক্সবাজারে না নেয়ায় স্বামীর উপর অভিমান করে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল মা-মেয়ে। তবে মেয়ে মারা গেলেও মায়ের জীবন রক্ষা পেয়েছে।
বন্দর থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, স্বামী খোকন বেপারি সিইপিজেডে প্যাসিফিক জিনস কোম্পানিতে চাকরি করে। শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) ছিল কারখানার বার্ষিক পিকনিক। তার স্ত্রী ও মেয়ে কক্সবাজারে তাদের নিয়ে যাবার জন্য বায়না ধরে। কিন্তু প্যাসিফিক জিনস কর্তৃপক্ষ পিকনিকে পরিবারের সদস্য অ্যালাউ করেনা। তাদের কক্সবাজারে না নেয়ায় মা ও মেয়ে ঘরে রাখা তেলাপোকা মারার কীটনাশক পাউডার খেয়ে ফেলে।
খোকন বেপারিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ওসি। তিনি বাংলানিউজকে আরও বলেন, প্রতিবেশিদের সঙ্গে কথা বলেছি। আত্মীয়স্বজনদেরও বক্তব্য নিয়েছি। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন ঝগড়া-বিবাদের কথা তারা বলেনি।
‘তারা পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে শান্তিতে সংসার করছিল বলে জানতে পেরেছি। শুধুমাত্র সামান্য অভিমান থেকেই খোকনের স্ত্রী আকলিমা আত্মহত্যার মত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আমাদের ধারণা কিশোর বয়সী মেয়েটিকেও তিনিই বিষপানের প্ররোচণা দিয়েছেন। আকলিমা সুস্থ হলে সবকিছু আরও পরিস্কার হবে। ’ বলেন ওসি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, খোকন বেপারিদের বাড়ি বরিশাল জেলায়। সাত-আট বছর ধরে তারা নগরীর বন্দর থানার কলসি দিঘির পাড় এলাকায় কাশেম কলোনিতে বসবাস করে আসছে। খোকন বেপারির স্ত্রী আকলিমা গৃহিণী এবং মেয়ে খাদিজা স্থানীয় একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল।
শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে খোকন বেপারি কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। দুপুরের দিকে আকলিমা বেগম (৩০) এবং তার মেয়ে খাদিজা আক্তার (১৩) বিষপান করেন বলে পুলিশ ধারণা করছে।
ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, বিকেল আনুমানিক চারটার দিকে প্রতিবেশি ও কয়েকজন নিকটাত্মীয় দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকেন। এসময় আকলিমা বিষের যন্ত্রণায় ছটফট করছিল। আর খাদিজা নিথর হয়ে গেছে। চিকিৎসক ধারণা করছেন দরজা ভেঙে ঢোকার ঘণ্টাখানেক আগে হয়ত তারা বিষ খেয়েছেন। এর চেয়ে বেশি দেরি হলে আকলিমার বাঁচার সম্ভাবনা ছিলনা।
আকলিমা বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। খাদিজার লাশ ময়নাতদন্তের পর তার বাবাকে দিয়েছে পুলিশ।
ওসি জানান, আকলিমা বর্তমানে শংকামুক্ত বলে ডাক্তার জানিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের হবে।