গ্রাম বাংলা নিউজ২৪.কম
ঢাকা: সম্ভবত ২০০৮ সালে আমি গাজীপুর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হয়ে গিয়েছিলাম ভোটের জন্য। কিন্তু আমার প্রতিদ্বন্ধি এটিএন বাংলার মাজহারুল ইসলাম মাসুম তার ঘনিষ্টবন্ধু হওয়ায় তিনি আমাকে বলেছিলেন, আপনাকে ভোট দিতে পারবো না। মাথায় হাত দিয়ে তিনি বলেছিলেন, দোয়া করে দিলাম।
আমি তার স্পষ্ট কথায় অনেক খুশি হয়েছিলাম। তবে খুশির হওয়ার পাশাপাশি প্রতিশোধ নেয়ারও একটি মানষিকতা ছিলো। ভাগ্যক্রমে সূযোগ পেয়ে গেলাম। ২০০৯ সালে ইকবাল সিদ্দিকী গামছা প্রতীকে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হলেন। আমি ভোটের দিন পযর্বেক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে টঙ্গী এলাকায় ছিলাম। সেখান থেকে ৩ হাজার টাকায় একটি গাড়ি ভাড়া করে গাজীপুর জেলার উত্তর সীমানায় আমার নিজ কেন্দ্রে গিয়ে গামছা প্রতীকে একটি ভোট দিয়ে প্রতিশোধ নিলাম। ভোটটি অবশ্য বে-আইনীভাবে প্রকাশ্যেই দিয়েছিলাম আরো ভোটের আশায়। তবে ওই বে-আইনী ভোট প্রয়োগের সময় সবাইকে বলে নেয়ায় ভোট কেন্দ্রের কেউ আপত্তিও করেননি। কারণ গামছা প্রতীক বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো না সম্ভবত সেই জন্যই। এছাড়াও ওই কেন্দ্রস্থল স্কুলটিও ছিলো আমার বাবার জায়গায় এবং তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা। সেই জন্যই হয়তোবা কেউ কিছু বলে নাও থাকতে পারেন।
আমার শ্রদ্ধেয় সেই মানুষটির নাম ইকবাল সিদ্দকী। সাংবাদিক সমাজে তিনি আমার বড় ভাই। শ্রদ্ধেয় ব্যাক্তি। গাজীপুরে সাংবাদিক জগতের একজন সিনিয়র ব্যাক্তিও বটে ।
সাংবাদিকতার সুবাধে ২০০০ সালে ঢাকা থেকে নিজ জেলা গাজীপুরে এসে দেখলাম সাংবাদিক ইকবাল সিদ্দিকী দেশের পুরাতন ও প্রভাবশালী ইংরেজী দৈনিক ডেইলি অবজারভারের একজন সৎজন সাংবাদিক হিসেবে সুপরিচিত। সিনিয়র-জুনিয়র পাথর্ক্যগত কারণে পরস্পরের মাঝে ভাবের আদান-প্রদান তেমন না হওয়ায় কেউ কারো সম্পর্কে জানা শুনা হয়নি। তবে বিলম্বে হলেও এই টুকু জেনেছি যে, তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বাধীন বাংলাদেশের একজন শিক্ষিত ও সচেতন নাগরিক। জানা-অজানার মাঝে সেই থেকেই পথচলা।
বেলা কখন যায় তা জেনেও আমরা জানিনা বলে চালিয়ে দেই। আজ জানলাম সিদ্দিকী ভাইয়ের বয়স ৪৬ হয়ে গেছে। ১৪ বছরের পথচলার মাঝে দেখলাম, একাধারে তিনি একজন শিক্ষাবিদ,রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব এবং একজন ভাল সংগঠক। তিল তিল করে তিনি গড়ে তোলেছেন রাজেন্দ্রপুরে ইকবাল সিদ্দিকী শিক্ষা পরিবার। এই পরিবারে সংযোজিত হয়েছে বেশ কয়েকটি শাখা প্রশাখা। সব মিলিয়ে যে নামেই ডাকি না কেন ওই পরিবারটিকে আমরা ইকবাল সিদ্দিকী পরিবার হিসেবেই চিনি।
আমি যতটুকু জানি, শ্রদ্ধেয় ইকবাল সিদ্দিকী গুনেধরা সাংবাদিক সমাজ থেকে তার সক্রিয়তাকে নিয়ন্ত্রন করে এখন নিজেই একটি পত্রিকা করছেন। একই সঙ্গে দেশের পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার এই জননেতা বাংলাদেশকে একটি সুন্দর, প্রগতিশীল গনতান্ত্রিক দেশে পরিণত করার আন্দোলন করছেন। তার গুরু বা নেতা বাংলাদেশের ইতিহাসের অপ্রতিদ্বন্ধী কিংবদন্তির সিংহপুরুষ, মহান মুক্তিযুদ্ধের অগ্রনী ভূমিকা পালনকারী দেশে বিদেশে বাংলার বীর হিসেবে সুপরিচিত বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের পতাকাতলে থেকে মেহনতি মানুষের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করছেন।
একজন নাগরিক হিসেবে আমার ব্যাক্তিগত নীতি ও আদর্শের সঙ্গে মিল থাকায় নিঃসন্দেহে আমি তাকে শ্রদ্ধা করি অবনত মস্তকে। বিলম্বে হলেও তার শুভ জন্মদিনের কথা জেনে আমি এই মানুষটির দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করি। আল্লাহ যেন স্বপরিবারের তাকে ভাল রাখেন।
আজ ২৫ জুলাই ২০১৪। ইকবাল সিদ্দিকী তার ফেইসবুক ওয়ালে নিজের জন্মদিনের খবর যে ভাবে আমাদেরকে জানালেন তা পাঠকের জন্য তুলা ধরা হলো।
২৫ জুলাই ২০১৪। আজ হইতে ৪৬ বছর পূর্বে সম্ভবত এই দিনে আমি দুনিয়াতে আগমন করিয়া পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধি করিয়াছিলাম, যাহাতে আমার কোন হাত ছিলো না। সেইদিন আমার আগমণে আযান দেওয়া হইয়াছিলো, কিন্তু আযানের পর কোন নামায পড়া হয় নাই। যেই দিন এই পুথিবী ছাড়িয়া যাওয়ার সময় হইবে সেইদিন হয়তো নামায পড়া হইবে, তবে নতুন করিয়া আর আযান দেওয়া হইবে না। জন্মের পরের আযান এবং আযানবিহীন নামাযের মধ্যবর্তী এই সময়ে যেন সকল অশুভ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারি, সেই দোয়া কামনা করি সকলের কাছে। কারও করুণা প্রার্থনা না করেই সত্য, সুন্দর, কল্যাণময় পথে চলতে চলতেই যেন জীবনের শেষ ক্ষণে পৌঁছাইতে পারি, তাহাই প্রার্থনা করি কায়োমনবাক্যে।
(স্কুলের শহীদ মিনারের পাশে একটি ‘পলাশ’ চারা রোপণ করিয়া দিনটি উদযাপন করিলাম।)
যাক। পড়লাম। জন্মদিন পালনের একটি খবর। ডাক-ঢোল পিটিয়ে নয় প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়ার চিরন্তন নিয়মকে স্বরণ করে একজন ইকবাল সিদ্দিকী পালন করলেন নিজের জন্মদিন। একদিন তিনি থাকবেন না। আজকের দিনের কথা কেউ স্বরণ না করলেও তার নিজের হাতে লাগানো গাছটিই একদিন চিৎকার করে জানান দিবে ইকবাল সিদ্দিকীর অস্তিত্বের অমর বানী।
লেখক: এ কে এম রিপন আনসারী
সাধারণ সম্পাদক
গাজীপুর প্রেস ক্লাব