পাবনা: আজ ৯ ডিসেম্বর। পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এদিনে বিজয়ের পতাকা হাতে বিজয় উল্লাসে মেতেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা।
পাকিসেনারা ১৯ এপ্রিল ডাববাগান, ১৪ মে ধুলাউড়ির বাউশগাড়ি গ্রাম, ২৭ নভেম্বর ধুলাউড়ি ফকিরবাড়ি এবং বাউশগাড়ি গ্রামে হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকিবাহিনী ও এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলশামস আর আলবদর।
২৭ মার্চ সাঁথিয়া পশু হাসপাতালের সামনে আমগাছের তলায় যুদ্ধকালীন কমান্ডার নিজাম উদ্দিন, ছাত্রনেতা ফজলুল হকসহ স্থানীয়রা প্রবল শক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে পাকি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পাকি সেনারা গাড়ি বহর নিয়ে যাতে সাঁথিয়ায় প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য ৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সাঁথিয়ায় প্রবেশ পথের ৩টি ব্রিজ ও কালভার্ট বোমা মেড়ে উড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা ব্রিজের নিচে বাংকার তৈরি করে পাকিবাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে চরম প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক আক্রমণে পাকসেনারা ক্ষতিগ্রস্ত ২টি গাড়ি ফেলে পিছু হটে। পরদিন ৮ ডিসেম্বর সাঁথিয়া ঢোকার পথে আবারও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে বিকেলের দিকে পিছু হটে পাকিসেনারা। ৯ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সাঁথিয়া থানা দখলে নিয়ে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে আনুষ্ঠনিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলে শত্রুমুক্ত হয় সাঁথিয়া উপজেলা।
এদিকে, আজ দিবসটি যথাযথভাবে পালনে সাঁথিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড যৌথ উদ্যোগে দিনব্যাপী মিলনমেলার আয়োজন করেছে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল লতিফ বলেন, ‘বর্ণাঢ্য এ মিলন মেলায় থাকছে জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের পতাকা উত্তোলন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পরিচয়পত্র প্রদান, বিজয়র্যালি, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, সম্মাননা স্মারক ও ক্রেস্ট প্রদান, আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আয়োজকরা জানান, সাঁথিয়া উপজেলা অডিটোরিয়ামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল লতিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল হেলাল মোর্শেদ বীরবিক্রম, পাবনার জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দীন, ডে গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ ওয়াহাব, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক মমিন মুজিবুল হক সমাজী, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক ও সামাজিকবিজ্ঞান বিভাগের ডিন এবং বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান এম আবদুল আলীম ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হাবিবুর রহমান হাবিব।