‘মেয়েদের শারীরিকভাবে দুর্বল ভাবা হয়। এ কারণেও অনেক সময় একা কোনো মেয়েকে দেখলে বখাটেরা যৌন হয়রানি করে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে মেয়েদের কিছু শারীরিক কৌশল রপ্ত করতে হবে। এই কৌশলের চর্চা স্কুল থেকে ভার্সিটি পর্যায়ে রাখা সম্ভব। কর্তৃপক্ষ বা উদ্যোগী নারীর চেষ্টায় প্রতিটি মেয়েকে এর আওতায় আনা যেতে পারে। মেয়েদেরও আলাদা বলয় বা ইউনিটি থাকতে হবে। যাতে একজনের বিপদে অপরজন দ্রুত এগিয়ে আসতে পারে।’
“প্রতিদিনের মতো এলিজা গত সন্ধ্যায় বাসায় ফিরছে একা একা। বাসার প্রায় কাছে এসে হঠাৎই সে বুঝতে পারে কেউ একজন তার পিছু নিয়েছে। দ্রুত পায়ে বাসার কাছে দোকানগুলোর সামনে। সেখানে হাঁটার গতি কমিয়ে দিলে কানে আসে- এক্সকিউজ মি, এক্সকিউজ মি…। এলিজা ফিরে তাকাতেই- ত্রিশোর্ধ একটি লোক বলে ওঠে একটু পরিচিত হোতাম। এলিজা- আপনি তো আমার অচেনা, আপনার সঙ্গে কেন কথা বলবো? এলিজা চলে যেতে চাইলেও তবু লোকটা পিছু ছাড়ে না।
দোকানের আলোতে লোকজন দাঁড়ানো দেখে এলিজা দাড়িয়ে বলে- এবার বলুন কি বলবেন? লোকটি বলে আসলে পরিচিত হতে চাচ্ছিলাম। এলিজা- কি করেন আপনি? একটা ব্যাংকে চাকরি করি, অফিস মতিঝিল।
এলিজা- ফার্মগেট কেন? লোকটি- বাসা খুঁজছি। তো আমার সঙ্গে কি? লোকটি- একটু কথা বলতাম। এলিজা- আচ্ছা ঠিক আছে, আপনার ভিজিটিং কার্ড আছে? এর মধ্যে আশেপাশে দুয়েকজন মানুষ জড়ো হয়েছে। লোকটি- এই মুহুর্তে নেই। এলিজা- জানি এমন মুহুর্তে কার্ড থাকে না। তো কেন নেই। লোকটি- এই অফিসে নতুন, তাই এখনো কার্ড হয়নি।
এলিজা- খুব ভালো আগের অফিসেরটা দিন। বলে সেটাও তো নেই। এলিজা- আপনার আইডি কার্ড তো আছে, সেটাই দেখান। লোকটি- কেন, এগুলো কেন?
এলিজা- আমার এভাবেই কথা বলার অভ্যাস। আপনিতো পরিচিত হতে আসছেন, তো পরিচয়পত্র দিতে সমস্যা কোথায়?
লোকটি- হন্তদন্ত হয়ে বলে, কথা বলবেন না ভালো কথা তাই বলে এসব কেন? এলিজা- আমি তো কথা বলছি, আপনি চলে যাচ্ছেন কেন? থামেন কথা বলে যান। কিন্তু লোকটি দ্রুত পালানোর চেষ্টা করে। এদিকে আবার আশেপাশের মানুষের ভিড় বেড়ে যাচ্ছে। লোকটি আর কথা না বাড়িয়ে ফিরে গেল, এলিজাও ফিরে গেল বাসায়”।
প্রতিদিনই এমন অনেক ঘটনায় ঘটছে। তার ভেতর থেকে অধিকাংশই আলোচনায় উঠে আসছে না। ফলে এমন সমস্যার কোনো প্রতিকারও হচ্ছে না। বরং দিনের পর দিন ঘটনাগুলো ধরা দিচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন রূপে। যেসব মেয়ে পরিবার পরিজন ছেড়ে শহরে একা থাকেন, চাকরি বা পড়াশুনা করছেন এমন বাস্তব অভিজ্ঞতা তাদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। পরিবারের সঙ্গে থাকা তরুণী বা বয়স্ক নারীরাও এমন নিপীড়নের বাইরে নন। অনেকে পরিবেশ পরিস্থিতি বা সময়ের সঠিক ব্যবহারে নিজেকে রক্ষা করে ফিরতে পারেন, আবার কেউ কেউ বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হন। তবে এভাবে আর কতোদিন? ঠিক এমন মুহূর্তে নারীর নিরাপত্তায় কি ভূমিকা হওয়া উচিৎ সে বিষয়ে মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট সিগমা হুদা বলেন-
আমরা সব সময় নারী পুরুষের সমতার কথা বলছি। আমাদের সংবিধানেও আছে পুরুষ এবং নারীর সমান অধিকারের কথা। নারীকে ক্ষমতায়নে আনার জন্য বিশেষ কোটার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইনগত ভাবেও তাদের নিরাপত্তার কথা বলা হচ্ছে। তবু বাস্তবিক অর্থে তার পুরোপুরি বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না। রাস্তায় চলাফেরার সময় নারীকে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগতে হচ্ছে। এমনকি সংরক্ষিত এলাকাতেও নারীকে অনেক সময়ই নিপিড়নের শিকার হতে দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় নারীকে হতে হবে সাহসী। নিজেকে কখনো দুর্বল ভাবা যাবে না। এর সঙ্গে দুটো উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে- ১. মোকাবেলা, ২. হেল্পলাইন।
মোকবেলা
মেয়েদের শারীরিকভাবে দুর্বল ভাবা হয়। এ কারণেও অনেক সময় একা কোনো মেয়েকে দেখলে বখাটেরা যৌন হয়রানি করে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে মেয়েদের কিছু শারীরিক কৌশল রপ্ত করতে হবে। এই কৌশলের চর্চা স্কুল থেকে ভার্সিটি পর্যায়ে রাখা সম্ভব। কর্তৃপক্ষ বা উদ্যোগী নারীর চেষ্টায় প্রতিটি মেয়েকে এর আওতায় আনা যেতে পারে। মেয়েদেরও আলাদা বলয় বা ইউনিটি থাকতে হবে। যাতে একজনের বিপদে অপরজন দ্রুত এগিয়ে আসতে পারে।
রেপ বা ইভ টিজিং আইনগত ভাবে অপরাধ। আইনি শাস্তির বিধান আছে। নিজেদের রক্ষার্থে শুধু ক্যারাটে নয়, কিছু বুদ্ধির চর্চাও রাখা যেতে পারে। উল্লেখ্য ঘটনায় এলিজা তার সাহস এবং বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে। প্রথমত, সে লোকটার সঙ্গে কথা বলেছে আলো এবং লোকজনের মাঝে দাঁড়িয়ে। দ্বিতীয়ত, আগত উত্যাক্তকারীকে খুব অল্প কথায় উল্টো প্রশ্নে বিব্রত করেছে, যা তাকে নিঃস্পৃহ করেছে। এমন মুহুর্তে নিজেদের কীভাবে তৈরি করতে হবে তার কৌশল শিখে রাখা জরুরি।
হেল্প লাইন
প্রতিটি স্কুল বা অফিসে মেয়েদের নিরাপত্তায় হেল্প লাইন থাকাটা আজকের দিনে খুবই জরুরি। যখন কোনো মেয়ে সমস্যায় পড়বে অবশ্যই সেখানে ফোন করবে। সেই হেল্পলাইন থেকে নিরাপত্তা বাহিনির সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করা যাবে।
তার মতে, আমাদের সংস্কৃতিতে এই ধারা যুক্ত হলে কিছুটা হলেও মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। সিগমা হুদা পরামর্শ হিসেবে আরও বলেন- প্রয়োজনে একজন মেজিট্রেটের অধীনে সেল তৈরি করতে হবে। সেই সেলের অধীনে আমাদের নারী পুলিশদের ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফিমেল স্কোয়ার্ড গঠন করে সিআর বা কমপ্লেন কেস নেয়া যেতে পারে। কোনো মেয়ে উত্যাক্তকারীর কারণে বিব্রত থাকলে সেখানে কেস করতে পারবে। বিশেষ এই স্কোয়ার্ড তাক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়াসহ তদন্ত করে সুরাহা দেবে। তবে যতদিন সেটা সম্ভব না হচ্ছে, মেয়েরা আমাদের প্রচলিত আইনের আশ্রয় নিতে পারে।