মঙ্গলবার রাতে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, “পুলিশ ও সামরিক বাহিনী- তাদের বলছি, আপনারা দলের কর্মী না। আপনারা এদেশের সন্তান। সশস্ত্র বাহিনীকে বলব, এই বাহিনী গড়েছি আমরা। এরা তো চায়নি। তারা চেয়েছিল বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন নেই।”
সামরিক বাহিনীকে ‘বিপথে’ নেওয়া হচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপি নেত্রী বলেন, “আজকে তাদেরকে দেশে নিরাপত্তার জন্য কোনো কাজ দেওয়া হচ্ছে না। তারা এখন রাস্তা-ঘাট বানাবে, এই বানাবে, বিল্ডিং বানাবে। তাদের চরিত্র নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। এই হলো দেশের অবস্থা।”
হত্যা-গুমের জন্য পুলিশ ও র্যাবের দিকে অভিযোগ তুলে খালেদা জিয়া বলেন, “আজকে দেশে গণহারে মানুষ হত্যা চলছে। দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার নেই, আইনের শাসন নেই। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। আজ শুধু চলছে অত্যাচার-অত্যাচার।
“অত্যাচার করছে শাসক দল, যারা জবরদখল করে ক্ষমতায় আছে। আজকে হায়েনার কবলে দেশ, আজকে ডাইনির কবলে দেশ। এরা রক্তখেকো মানুষ হয়ে গেছে।”
সরকারবিরোধী আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন সময়ে গুলিবিদ্ধ ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের আর্থিক অনুদান দিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, “গতকালও মেহেরপুরে দুইজনকে ক্রসফায়ার দেওয়া হয়েছে। কীসের ক্রসফায়ার? পুলিশ ও ছাত্রলীগ এসব করছে।
“পুলিশের কমিশনার ছিল আগে, এখন র্যাবের ডিজি বেনজীর- এ হলো মানুষখেকো, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী)। আর এর আগে ছিল জিয়া (র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান)। আরো কয়েজন আছে।
“আমি পুলিশের সবাইকে অভিযুক্ত করব না, খারাপ বলব না। পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা বাধ্য হয়ে এই কাজ করছে। তারা নিজের দেশের ভাই-বোনকে মারছে। পুলিশ ও র্যাব বাহিনীকে বলব-এসব হত্যা বন্ধ করুন। র্যাবের বেনজীরকে বলব, এসব বন্ধ করেন। নইলে এর পরিণতি ভালো হবে না।”
সামরিক বাহিনী, পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি বিচারকদের নিয়েও কথা বলেন বিএনপি নেত্রী।“আপনারা সদয় হোন। ন্যায়বিচার করুন। অন্যায় নির্দেশ মানবার জন্য আপনারা শপথ
নেননি। আপনারা শপথ নিয়েছেন সত্যিকার ন্যায়বিচার করবেন, জনগণকে সুবিচার দেবেন,” বলেন তিনি।
জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “আর কখন জাগবেন? আর কত মা-বোনেরা কাঁদবেন, সন্তান হারাবেন? এখন আমাদের জাগতে হবে। এখন সময় এসেছে।”
বিএনপি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিতে বিশ্বাস করি না। এই আওয়ামী লীগ কয়দিন পর পর কিছু লোককে ধরে অত্যাচার করে জঙ্গি বানায়। এই জঙ্গি জঙ্গি বলে বিদেশিদের ভয় দেখানোর জন্য- আওয়ামী লীগ চলে গেলে নাকি জঙ্গিদের উত্থান হবে।
“আমরা বলতে চাই, আওয়ামী লীগ থাকলে জঙ্গির উত্থান হয় এবং হবে।”
বর্তমানে জঙ্গি হিসেবে যাদের সবার সামনে হাজির করা হয় তারা আসলে ‘নির্বোধ’ বলে মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।
“কিছু লোককে ধরে র্যাব অনেক দিন রেখে দেয়। তারপর তাদের খেতে দেয় না। তাদের চেহারা সুরত বদলে যায়। তাদের চুল-দাঁড়ি লম্বা হয়ে গেলে তখন মানুষের সামনে আনে।
“পুলিশের কাছে যেসব হাবি-যাবি অস্ত্র থাকে, সেগুলো সামনে নিয়ে ধরে বলে, এই যে জঙ্গি ধরেছি। আসলে তারা কিন্তু নির্বোধ।”
বিএনপি নেত্রী বলেন, ক্ষমতায় গেলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা ও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় করবেন।
বক্তব্যে আবারো ‘নিরপেক্ষ’ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দাবি করেন তিনি।