ব্যাংক থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য গৃহঋণ উন্মুক্ত করল বাংলাদেশ ব্যাংক। ভোক্তাঋণ নীতিমালার আওতায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনায় মোট ব্যয়ের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক। তবে ঋণ নিয়ে জমি কেনা যাবে না। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বিনিয়োগে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল এ বিষয়ে একটি সার্কুলার ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী প্রবাসী বাংলাদেশিদের যে কোনো ধরনের ব্যাংক ঋণ নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বানুমতির প্রয়োজন হয়। এখন থেকে গৃহায়ন ঋণের ক্ষেত্রে এর আর প্রয়োজন হবে না। তবে অন্য ঋণের ক্ষেত্রে অনুমতির দরকার হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনুমোদনের জটিলতার কারণে প্রবাসীদের মধ্যে গৃহঋণ নেওয়ার আগ্রহ ছিল না। তাদের অর্থ বিনিয়োগে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ম সহজ করল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান সমকালকে বলেন, গৃহঋণের জন্য প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। এ ছাড়া আবাসন খাতের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। এ দুই মিলিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সুযোগ দিল। ফলে রেমিট্যান্স এবং একই সঙ্গে কর্মসংস্থানও বাড়বে। তিনি বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের জন্য টাকায় হিসাব খোলার (নিটা) যে সুবিধা রয়েছে, তার ব্যবহার খুব সীমিত ছিল। এখন থেকে এ হিসাবের যথাযথ ব্যবহার হবে। এ সিদ্ধান্ত মূল্যস্ফীতি বাড়াবে কি-না জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, এখন মুদ্রা সরবরাহের প্রবৃদ্ধি কম রয়েছে। ফলে মুদ্রানীতির ওপর এ সিদ্ধান্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, প্রবাসীদের আগে ঢাকা শহরের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বিশেষ সুবিধা দিয়ে গৃহঋণের সুযোগ তৈরি করা গেলে বেশি ভালো হতো। তাতে ঋণ আদায়ের ঝুঁকিও থাকত কম। তিনি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রবাসীরা লোক দেখানোর জন্য এমন স্থানে বাড়ি করেন যেখান থেকে কোনো আয় আসে না। প্রবাসীদের ঋণ দেওয়ার আগে ব্যাংকগুলোকে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। তা না হলে ঋণের অর্থ আদায় করা কঠিন হয়ে পড়বে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, প্রবাসীদের বিনিয়োগ মূলত গৃহায়ন খাতেই হয়ে থাকে। এখন আবার নতুন করে শুধু এ খাতের জন্য কেন সুবিধা দেওয়া হলো- জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহসানউল্লাহ সমকালকে বলেন, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের পক্ষে একসঙ্গে বাড়ি করা বা ফ্ল্যাট কেনার মতো অর্থ জোগাড় করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তখন তারা আয়ের অধিকাংশ সংসার খরচসহ বিলাসবহুল খাতে ব্যয় করে ফেলেন। এ কারণে ঋণের সুযোগ দেওয়া হলো। এতে তাদের সঞ্চয়ের মানসিকতা বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়, নিজের অর্থ ও ঋণের অনুপাত হবে ৫০ঃ৫০। ভোক্তা ঋণ নীতিমালার আলোকে এ ঋণ দিতে হবে। ভোক্তা ঋণ নীতিমালায় গৃহায়ন খাতে সর্বোচ্চ ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া যায়।
সার্কুলারে আরও বলা হয়, রেমিট্যান্স বা প্রবাসীর সঞ্চয়ী হিসাব থেকে ঋণের অর্থ পরিশোধ করা যাবে। ব্যাংক ঋণ দেওয়ার আগে ঋণের কিস্তি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রেরিত রেমিট্যান্স এবং বাড়িভাড়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে ব্যাংকগুলোকে। তার অন্য কোনো আয়ের উৎস থাকলেও তা বিবেচনা করতে হবে। এ ছাড়া ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রচলিত সব নিয়ম যথাযথভাবে মানতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে প্রবাসী ঋণের জন্য ব্যাংকগুলোকে একটি নিজস্ব নীতিমালা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়ছে।
রিয়েল এস্টেট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি শামসুল আলামিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে সমকালকে বলেন, গৃহায়ন খাতে প্রবাসীদের ঋণের সুযোগ দিতে বেশ আগ থেকেই তারা দাবি জানিয়ে আসছেন। দেরিতে হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া সিদ্ধান্ত এ খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। প্রবাসীদের ঋণের সুযোগ তৈরির ফলে অনেকেই বাড়ি নির্মাণ বা ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী হবেন। টাকার সঞ্চালন বাড়িয়ে অর্থনীতিতে যা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান এনআরবি সেন্টারের চেয়ারম্যান এমএস শেকিল চৌধুরী সমকালকে বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত দেশের প্রতি প্রবাসীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে থাকা আবাসন খাত চাঙ্গা করতে সহায়ক হবে। তবে কোনো অবস্থাতে তারা যেন প্রতারিত না হন সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।