ঢাকা: এক কোটি ভারতীয় জাল রুপি, ২১টি পাকিস্তানি পাসপোর্ট, বিপুলসংখ্যক জাল সিলসহ আন্তর্জাতিক মুদ্রা এবং মানবপাচার চক্রের ছয় সদস্যকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এদের মধ্যে একজন পাকিস্তানের নাগরিকও রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে পৃথকভাবে রাজধানীর উত্তরা ও বিমানবন্দর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আটক ছয়জন হলেন- চাদঁপুরের মো. জাহাঙ্গীর (৪৫), পটুয়াখালীর মো. মামুনুর রশিদ (৪৬), কক্সবাজারের আব্দুল খালেক (৫৫), ভোলার কামরুল ইসলাম ওরফে হৃদয় খান (২৮) ও খাগড়াছড়ির আবু সুফিয়ান (৪৮) এবং পাকিস্তানি আব্দুল্লাহ সেলিম (৪২)।
শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে র্যাব সদরদফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।
তিনি জানান, প্রথমে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে উত্তরার একটি ফুট ওভারব্রিজের কাছে অভিযান চালিয়ে আব্দুল্লাহ সেলিম, মো. জাহাঙ্গীর, আব্দুল খালেককে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ৭০ লাখ ভারতীয় জাল রুপি, ৯ হাজার ১শ ২৫ মার্কিন ডলার, ২১টি পাকিস্তানি পাসপোর্ট, সাতটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট, একশ’ সৌদি রিয়াল ও মানবপাচারে ব্যাবহৃত বিভিন্ন ধরনের সিল ও এসব তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
এরপর রাত ১টার দিকে বিমানবন্দর এলাকার বাবুস সালাম মসজিদ-মাদ্রাসা সংলগ্ন আল আমিন রেস্তোরাঁর সামনে থেকে মো. মামুনুর রশিদ, কামরুল ইসলাম ওরফে হৃদয় খান ও আবু সুফিয়ানকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ৩০ লাখ ভারতীয় জাল রুপি, ৬ লাখ ২৩ হাজার ৫শ’ বাংলাদেশি টাকা, ৪৩ হাজার ১শ’ ৯০ পাকিস্তানি রুপি, ১৩ হাজার ৬শ’ ২৭ ইউএই দিরহাম, সাতটি এয়ারপোর্ট ভিজিটর্স কার্ড, পাঁচটি মোবাইল ফোন, চারটি বিদেশি সিমকার্ড, কিছু পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও ট্রাভেল পারমিট ফর্ম জব্দ করা হয়।
মুফতি মাহমুদ খান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এরা আন্তর্জাতিক মাফিয়া ডন চক্রের সহযোগীদের সহায়তাকারী। চক্রের ওই সহযোগীরা পাকিস্তানে অবস্থান করে এবং আটক ছয়জনের সাহায্যে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বিভিন্নভাবে ভারতীয় জাল রুপি পাচার করে আসছে।
র্যাবের এ মুখপাত্র আরও জানান, আটক ছয়জনের মধ্যে কামরুল ইসলাম বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে একটি বেসরকারি দোকানের কর্মকর্তা। তিনি চক্রটির সঙ্গে জড়িত যাত্রীদের ভারতীয় জাল মুদ্রাসহ ইমিগ্রেশন ও গ্রিন চ্যানেল অতিক্রম করতে সাহায্য করে আসছিলেন। আর জাহাঙ্গীর, খালেক ও পাকিস্তানি আব্দুল্লাহ সেলিম চক্রটির সমন্বয়ের কাজ করছিলেন।
আটক ছয়জনের তথ্য অনুযায়ী, এ চক্রের সক্রিয় সদস্যরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জে অবস্থান করছে বলেও জানান মুফতি মাহমুদ খান।
তিনি বলেন, চক্রটি মানবপাচারের সঙ্গে সরাসির সম্পৃক্ত। তারা জাল সিল তৈরি ও স্বাক্ষর করে থাকে। যেসব পাকিস্তানি বাংলাদেশে এসে বৈধ হচ্ছে তাদের জাল অনুমতিপত্র তৈরির মাধ্যমে এখানে অবৈধভাবে অবস্থান করার সুযোগ করে দিচ্ছে চক্রের সদস্যরা।
চক্রটির সঙ্গে বিমানবন্দরে নিযুক্ত কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা নিরাপত্তাকর্মী যুক্ত আছেন কিনা জানতে চাইলে ৠাবের এ কর্মকর্তা বলেন, এখনও সঠিকভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত শেষে এসব জানা যাবে।
চক্রটি মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহীমের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত কিনা জানতে চাইলে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এ বিষয়টিও সঠিকভাবে আমরা জানতে পারিনি।