চট্টগ্রাম: পৌরসভায় মেয়র পদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সাংসদদের ‘বিতর্কিত’ সুপারিশ ঠাঁই পায়নি কেন্দ্রে। সাংসদ এবং জেলা কমিটির সুপারিশের পরিবর্তে সাতকানিয়া এবং রাউজানে কেন্দ্র থেকে মনোয়নন দেয়া হয়েছে অপেক্ষাকৃত ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত দু’জনকে। সীতাকুণ্ডেও জেলা কমিটির সুপারিশ প্রাধান্য পায়নি। তবে সেটা পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন জেলার নেতারা।
মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) রাতে গণভবনে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্টারি কমিটির বৈঠকে চট্টগ্রামের ১০ পৌরসভায় মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম বুধবার সকালে চট্টগ্রামে পৌঁছেছেন। দক্ষিণ জেলার প্রার্থীদের তালিকাও কেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম বলেন, প্রার্থীদের তালিকা নিয়ে এসেছি। তাদের ডাকা হয়েছে। কেন্দ্রের চিঠি তাদের দেয়া হবে। এরপর তারা নির্বাচন কমিশনের মনোনয়ন পত্রের সঙ্গে সেটি সংযুক্ত করে জমা দেবেন।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, আমাদের চার পৌরসভার প্রার্থীদের তালিকা পেয়েছি। সভাপতির (মোছলেম উদ্দিন আহমেদ) সঙ্গে কথা বলে সেগুলো তাদের কাছে পৌঁছানো হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ‘একসময়ের জামায়াত ঘনিষ্ঠ’ সাতকানিয়ার সাংসদ ড.আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভি পৌর মেয়র পদে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া বর্তমান মেয়র হাজী মোহাম্মদুর রহমানের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার সমর্থন থাকায় তার নাম কেন্দ্রে সুপারিশ করা হয়। কিন্তু কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ জোবায়েরকে।
পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাবার আশায় আগস্টে দলে যোগ দিয়েছিলেন বিএনপি থেকে দু’বারের নির্বাচিত মেয়র হাজী মোহাম্মদুর রহমান। তাকে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সমর্থন দেয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন সাতকানিয়ার তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
তবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাকি তিন পৌর মেয়র পদে জেলা নেতাদের সুপারিশ অনুযায়ীই হয়েছে। এরা হলেন, পটিয়ায় অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, বাঁশখালীতে সেলিমুল হক চৌধুরী এবং চন্দনাইশে মাহবুবুল আলম খোকা।
মফিজুর রহমান বলেন, আমাদের চার পৌরসভার মধ্যে সাতকানিয়া ছাড়া বাকি তিন পৌরসভায় জেলার সুপারিশে প্রার্থী নির্ধারিত হয়েছে।
সূত্রমতে, রাউজানে পৌর মেয়র পদে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ পালিত মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি আগেও পৌর মেয়র ছিলেন। কিন্তু সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর সমর্থন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বেবীর প্রতি ছিল বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নেতারাও বেবীর নাম চূড়ান্ত করে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠিয়েছিলেন। বেবী মনোনয়ন পাচ্ছেন একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন রাউজানের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সাংসদ এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নেতারাও এ ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন।
কিন্তু কেন্দ্র থেকে তাদের সুপারিশ উল্টে দেয়া হয়েছে। ছাত্র রাজনীতিতে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা এবং রাউজান পৌরসভায় বিপুল সংখ্যক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বসবাস বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্র থেকে দেবাশীষ পালিতকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এম এ সালাম বাংলানিউজকে বলেন, রাউজান এবং সীতাকুণ্ড ছাড়া বাকি চার পৌরসভায় আমরা যাদের সুপারিশ করেছি তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। সীতাকুণ্ডের বিষয়টি ভুলবশত হয়েছে। আজ (বুধবার) সেটা সংশোধন করে কেন্দ্র থেকে আমাদের সুপারিশের প্রার্থীর জন্য চিঠি পাঠানো হবে।
সীতাকুণ্ডে বর্তমান পৌর মেয়র অবসরপ্রাপ্ত নায়েক শফিউল আলমকে মনোনয়ন দিয়েছে দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড। কিন্তু উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সুপারিশ করেছিল পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউল আলমের জন্য। নায়েক শফি সীতাকুণ্ডের সাংসদ দিদারুল আলমের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। নায়েক শফি’র মনোনয়ন পরিবর্তন হলে সীতাকুণ্ডেও সাংসদের সুপারিশ ঠাঁই পাবেনা।
উত্তরের বাকি চার পৌরসভায় মিরসরাইয়ে গিয়াস উদ্দিন, বারৈয়ারহাটে নিজাম উদ্দিন, সন্দ্বীপে বদিউল আলম এবং রাঙ্গুনিয়ায় শাহাজাহান সিকদার।
চট্টগ্রামে ১০ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে উত্তর জেলার মিরসরাই, বারৈয়ারহাট, সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড, রাউজান, রাঙ্গুনীয়া আর দক্ষিণের পটিয়া, চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও সাতকানিয়া পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।