নিউজপেপারস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) এক বিবৃতিতে নতুন করে নিবন্ধন নয়, বরং প্রচলিত আইন ও নীতিমালার আওতায় অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনার দাবি জানিয়েছে। ছাপা পত্রিকার অনলাইন সংস্করণসহ সব অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধন বিষয়ে সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ছাপা পত্রিকাগুলো সরকারের সব নিয়ম মেনে চলছে। সময়ের প্রয়োজনে ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ছাপা পত্রিকাগুলোর অনলাইন সংস্করণ রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে দেশের পাঠক ছাড়াও প্রবাসী বাঙালিরা তাৎক্ষণিক দেশের খবরাখবর জানতে পারছে। তাই এসব পত্রিকার অনলাইন সংস্করণের জন্য আলাদা নিবন্ধন কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়। এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেও নোয়াব মনে করে না।
উল্লেখ্য, অনলাইন নীতিমালার খসড়া গত ৬ আগস্ট তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। ওই খসড়ায় জাতীয় সম্প্রচার কমিশনের মাধ্যমে অনলাইন গণমাধ্যমগুলো পরিচালনার কথা বলা হলেও এটি চূড়ান্ত হওয়ার আগেই তথ্য অধিদপ্তর এক তথ্য বিবরণীর মাধ্যমে অনলাইন পত্রিকার নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করেছে, আবেদনের শেষ সময় ১৫ ডিসেম্বর। নীতিমালা বা কমিশন হওয়ার আগে তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী আদেশে অনলাইন পত্রিকার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর এই ঘোষণা স্ববিরোধী ও উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে করে নোয়াব।
প্রস্তাবিত অনলাইন নীতিমালায় কমিশন গঠন করে অনলাইন গণমাধ্যমগুলো পরিচালনার কথা বলা হলেও ওই কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা থাকবে না। ফলে কমিশন সরকার, বিশেষ করে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভরশীল একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে বলে নোয়াব মনে করে। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এ ধরনের উদ্যোগ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বদলে ক্ষুণ্ন করে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এ কথা সত্য, দেশে অসংখ্য অনলাইন পত্রিকা রয়েছে, যেগুলো প্রকাশে কোনো বিধিনিষেধ নেই। কিন্তু এগুলো প্রকাশিত হওয়ার কারণে রাষ্ট্র বা সরকারের কোনো ক্ষতি হয়েছে বলে নোয়াবের জানা নেই। অনলাইন পত্রিকাগুলো স্বাধীন মত প্রকাশে কাজ করছে—এ কথা উল্লেখ করে আরও বলা হয়, এ ধরনের পত্রিকা প্রকাশ করলেও কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যদি কেউ নিয়ম লঙ্ঘন করে থাকে, তাহলে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ইনফরমেশন সিকিউরিটি পলিসি গাইডলাইন, ২০১৩; ন্যাশনাল ব্রডকাস্টিং পলিসি (এনবিপি), ২০১৪; ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (সংশোধিত) আইন, ২০১৩; খসড়া সাইবার সিকিউরিটি আইন, ২০১৫ প্রভৃতি আইন ও নীতিমালা রয়েছে, যার সঙ্গে অনলাইন গণমাধ্যমের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। তাই নতুন কোনো নীতিমালা প্রণয়ন না করে এসব আইনসহ ছাপা পত্রিকার জন্য প্রযোজ্য আইন ও নীতিমালাসমূহ অনলাইন গণমাধ্যমের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে বলে মনে করে নোয়াব।
সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিবৃতিতে বলা হয়, যতসংখ্যক গণমাধ্যম সৃষ্টি হোক না কেন, চূড়ান্ত বিচারে এর টিকে থাকা নির্ভর করে পাঠক, শ্রোতা বা দর্শকের ওপর। তাই চূড়ান্ত বিচারে পাঠকের ওপর এগুলোর অস্তিত্ব নির্ভর করবে এবং সেই বিচারের জন্য অপেক্ষা করাই শ্রেয় বলে নোয়াব মনে করে।
নোয়াব লক্ষ্য করছে, অনলাইন নীতিমালায় নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কথা বলা হলেও ওই ‘কর্তৃপক্ষ’ (কমিশন) নির্ধারণ ছাড়াই সরকার তথ্য অধিদপ্তরের কাছে নিবন্ধনের দায়িত্ব দিয়েছে, যা যুক্তিসংগত নয়। কমিশন গঠিত হওয়ার আগে সরকার অনলাইন গণমাধ্যমের নিবন্ধন বা পরিচালনার বিষয়গুলো নিজ এখতিয়ারে রাখলে এ ধরনের সংবাদমাধ্যমের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ কঠোর হবে, যা মুক্ত সাংবাদিকতার অন্তরায় হয়ে উঠতে পারে। তা ছাড়া এই নিবন্ধনকে কেন্দ্র করে দলীয় পরিচয় দেখা, হয়রানি বা আর্থিক লেনদেনের মতো স্পর্শকাতর অভিযোগ ওঠাও দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতায় অসম্ভব ব্যাপার নয়।
সংবাদপত্রের প্রকাশক ও সম্পাদকদের ওই সংগঠনের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, অনলাইন পত্রিকা নিবন্ধনের অন্যতম উদ্দেশ্য হিসেবে এ ধরনের গণমাধ্যমের জন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া অপসাংবাদিকতা রোধ করার কথাও বলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এগুলো কীভাবে করা হবে, তা স্পষ্ট নয়। বিষয়গুলো নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে আরও আলাপ-আলোচনা এবং এর মাধ্যমে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত ছিল।
নোয়াব মনে করে, এই নীতিমালার সঙ্গে গণমাধ্যমের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারসহ নতুন এই শিল্পের ভবিষ্যৎ জড়িত। তাই তাড়াহুড়া না করে যৌক্তিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ও বাস্তবতার নিরিখে যেকোনো উদ্যোগ গ্রহণ করাই বাঞ্ছনীয়। -বিজ্ঞপ্তি