আবারও শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড পুরোপুরি বাতিল করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। অবিলম্বে এ শাস্তি রহিত করারও আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন।অন্যদিকে জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়েও একই রকম কথা বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিক।
রাভিনা তার বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের দেয়া রায়ে রোববার কার্যকর করা হয়েছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি। এ নিয়ে চারজনের ফাঁসি কার্যকর হলো। এর মধ্যে মুজাহিদ হলেন জামায়াতে ইসলামির নেতা। সালাউদ্দিন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতা। যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তাদেরকে মৃত্যুদন্ড দেয়। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই আদালত ১৭টি রায় দিয়েছেন। এর মধ্যে ১৫টিতে জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক অপরাধের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এ রায় দেয় হয়।
ওই বিবৃতিতে রাভিনা আরও বলেন, বিচারে সুষ্ঠুতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়ায় দীর্ঘদিন ধরে আমরা সতর্ক করছি যে, বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে না মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা। বিভিন্ন সময় একই রকম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। তারা ফাঁসি বন্ধ রাখতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ, সুষ্ঠু বিচারের আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রাখা হয় নি। ইন্টারন্যাশনাল কোভেন্যান্ট অন সিভিল পলিটিক্যাল রাইটসের শর্তও অনুযায়ীও ওই বিচার করা হয় নি। এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করা একটি দেশ বাংলাদেশ।
রাভিনা বলেন, যেকোন পরিস্থিতিতে, এমনকি সবচেয়ে গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধের ক্ষেত্রেও মৃত্যুদ-ের বিরোধী জাতিসংঘ।
ওদিকে জাতিসংঘের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়েও একই প্রসঙ্গ উঠে আসে। এতে সাংবাদিকরা জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজাররিকের কাছে জানতে চান, বাংলাদেশে বিরোধী দলীয় দুজন নেতার ফাঁসি কার্যকরের ফলে জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া কি, কোন মন্তব্য আছে কিনা। জবাবে ডুজাররিক বলেন, যেকোন অবস্থায় মৃত্যুদন্ডের বিরোধী মহাসচিব মুন। যেসব দেশে এখনও মৃত্যুদণ্ড বহাল আছে তাদেরকে এ শাস্তি লঘু করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এখানে প্রশ্নোত্তর আকারে ওই ব্রিফিং তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: আমি আপনার কাছে বাংলাদেশ ও কঙ্গোর বিষয়ে কিছু জানতে চাই। আমি বলতে চাইছি, বাংলাদেশে বিরোধী দলীয় উচ্চ পদস্থ দুজন নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। অনেকে বলছেন, এতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে। বিস্ময়ের সঙ্গে বলছি, এ বিষয়ে জাতিসংঘের কি কোন প্রতিক্রিয়া আছে, এ বিষয়ে মন্তব্য করুন?
উত্তর: অবশ্যই। সপ্তাহান্তে যে দুজনকে ফাঁসি দেয়া হলো আমরা তার সবটা দেখেছি। আমি মনে করি এটা পরিষ্কার যে, যে কোন পরিস্থিতিতে মহাসচিব মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী এবং যেসব দেশে এখনও মৃত্যুদন্ড বহাল আছে সেখানে মৃত্যুদণ্ড শিথিল করার আহ্বান জানিয়েছেন।