নির্বাচন উপযোগী দুই শতাধিক পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ অথবা আগামীকালের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করা হবে। গতকাল রোববার কমিশন সভায় তফসিল ঘোষণার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংশোধিত পৌরসভা আইনের আলোকে নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত করে এরই মধ্যে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
কমিশনের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, ভেটিং সম্পন্ন হয়ে বিধিমালা মন্ত্রণালয় থেকে এলেই তফসিল ঘোষণা করা হবে। ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে এ নির্বাচন শেষ করতে হবে। এর বিকল্প কমিশনের হাতে খুব একটা নেই। তাই চেষ্টা চলছে শিগগির তফসিল ঘোষণার।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সংসদে পাস হওয়া পৌরসভা বিলটি আইনে পরিণত হয়ে গতকালই কমিশনের হাতে এসেছে। এর পরপরই আচরণ বিধিমালা ও নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধনের জন্য বৈঠক হয়।
সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে নির্বাচনের সম্ভাব্য দিনক্ষণ নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হয়। প্রাথমিকভাবে ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের দিন চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বিষয়টি চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। কারণ থার্টিফাস্ট নাইটের আগে রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে অতিরিক্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ২৯ ডিসেম্বরেও ভোট নেওয়া হতে পারে। কমিশনের এক সদস্য বলেন, আজ (সোমবার) দিনের শুরুতেই আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং সাপেক্ষে বিধিমালা কমিশনে পেঁৗছলে আজ বা আগামীকাল তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুরুতে ২৪৫টি পৌরসভাকে নির্বাচন উপযোগী হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হলেও সেখান থেকে কয়েকটি পৌরসভাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ২৩৬টি পৌরসভার তালিকা চূড়ান্ত হলেও আরও ১০/১২টি পৌরসভার নাম কমবেশি হতে পারে। কারণ এসব পৌরসভার মামলা-সংক্রান্ত জটিলতা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগের খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছিল। এখন শুরুতেই দলের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত মনোনীত প্রার্থীর নাম রিটার্নিং অফিসারকে জানাতে হবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এর ফলে দলের মনোনয়নবঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
এ ছাড়া আইন মন্ত্রণালয় থেকে খসড়া বিধিমালায় রাজনৈতিক দলের জেলা কমিটির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা তার মনোনীত ব্যক্তিকে মনোনয়ন কর্তৃপক্ষ হিসেবে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কমিশন এ প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেছে, রাজনৈতিক দলের কে মনোনয়ন দেবে তা নির্ধারণের দায়িত্ব কমিশন নিতে পারে না। এটা দলই ঠিক করবে। তাই সংশোধিত বিধিমালায় বলা হয়েছে_ তফসিল ঘোষণার তিন দিনের মধ্যে দলের পক্ষে কে মনোনয়ন দেবে তা রিটার্নিং অফিসারকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। একই সঙ্গে এর অনুলিপি ফ্যাক্সযোগে কমিশনে পাঠাতে হবে। এ ছাড়া মেয়র পদে স্বতন্ত্র নির্বাচনের জন্য ১০০ জন ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক রাখা হয়েছে।
প্রচারে নিষিদ্ধই থাকছেন মন্ত্রী-এমপিরা
পৌরসভা নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় সরকারের সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে মন্ত্রী-এমপিরা পৌর নির্বাচনের প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। কমিশন থেকে খসড়া বিধিতে সরকারি সুবিধা ছাড়া তাদের প্রচারে নামার সুযোগ রাখা হয়েছিল। সরকারের আপত্তিতে কমিশন এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে।
সর্বশেষ ২০১১ সালে এসব পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী, পরিষদ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয়। এ হিসাবে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।