ফরিদপুর: শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
রোববার (২২ নভেম্বর) সকাল ০৭টা ১৫ মিনিটে ফরিদপুরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার আইডিয়াল ক্যাডেট মাদ্রাসা গেটের পাশে পারিবারিক জমিতে মুজাহিদকে দাফন করা হয়েছে।
এর আগে সকাল ৬টা ৩৭ মিনিটে তার মরদেহ খাবাসপুর পৌঁছায়। জানাজা সম্পন্ন হয় ৬টা ৫০ মিনিটে। তবে জানাজার সময় আশপাশে দলীয় নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী উপস্থিত থাকলেও কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরিবারের সদস্যসহ স্বল্প সংখ্যক মানুষ এতে অংশ নেন।
জানাজা পড়ান মুজাহিদের বড় ভাই আলী আফজাল মোহাম্মদ খালেছ।
শনিবার (২১ নভেম্বর) দিনগত রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
২টা ৫৩ মিনিটে মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।
মরদেহবাহী গাড়িবহর সাভার-মানিকগঞ্জ হয়ে পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে নদী পেরিয়ে রাজবাড়ী হয়ে পশ্চিম খাবাসপুর গ্রামে পৌঁছায়।
যাওয়ার পথে প্রতিটি জেলা ও থানার পুলিশ ওই গাড়িবহরকে রিসিভ করে জেলা সীমানা পার করে দেয়।
ফরিদপুর পৌঁছানোর পর মুজাহিদের পরিবারের সদস্যদের কাছে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। পরে নামাজে জানাজা শেষে পশ্চিম খাবাসপুরের আইডিয়াল ক্যাডেট মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে দাফন সম্পন্ন হয়।
একাত্তরের কিলিং স্কোয়ার্ড আলবদর বাহিনীর প্রধান দোষী সাব্যস্ত করা হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা-গণহত্যা, আটক ও নির্যাতন, ধর্মগত ও রাজনৈতিক কারণে নির্যাতন করে হত্যার মতো বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে। পাশাপাশি সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটিতে (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব) থাকা নেতা হিসেবে গণহত্যা সংঘটিত করা, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা, ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার মাধ্যমে হত্যা, নির্যাতন, বিতাড়ন ইত্যাদি ঘটনার দায়ও প্রমাণিত হয় তার বিরুদ্ধে।
এর মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুললেন মুজাহিদ। তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে এটি ছিল ৬ নম্বর অভিযোগে।
আরও তিনটি অপরাধে আদালত যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ডাদেশ দিলেও সর্বোচ্চ সাজা কার্যকর হওয়ায় সেসব সাজা ভোগের প্রয়োজন পড়েনি। এর মধ্যে ৫ নম্বর অভিযোগে ঢাকার নাখালপাড়ায় পুরনো এমপি হোস্টেলে শহীদ সুরকার আলতাফ মাহমুদসহ কয়েকজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন এবং ৩ নম্বর অভিযোগে ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার গোয়ালচামট এলাকার (রথখোলা) মৃত রমেশ চন্দ্র নাথের পুত্র রণজিৎ নাথ ওরফে বাবু নাথকে আটক ও নির্যাতনের দায়ে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয় মুজাহিদকে।
স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর এটি হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার চতুর্থ ফাঁসির রায় কার্যকর, যার মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা হলো বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক এই মন্ত্রীর।
একই সময়ে ফাঁসি হওয়া অপর শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরী সর্বোচ্চ সাজা পেয়েছেন অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যাসহ চার হত্যা-গণহত্যার দায়ে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের নৃশংসতম মানবতাবিরোধী অপরাধের হোতা সাকা চৌধুরীর মরদেহ নেওয়া হচ্ছে তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানের গহিরায়।