যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকরের পর দেশজুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। সাকার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান এবং মুজাহিদের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরসহ জামায়াতের প্রভাব রয়েছে-এমন কয়েকটি জেলায় এ নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শুরু করে গ্রামের বাড়িতে এ দুই যুদ্ধাপরাধীর লাশ নেওয়া পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল।
পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, সাম্প্রতিক নানা পরিস্থিতিতে এমনিতেই সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক রয়েছেন। সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরের পর তা আরও জোরালো করা হয়েছে। দেশের সব থানা পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থেকে যে কোনো ধরনের নাশকতা দমনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ সমকালকে বলেন, ঢাকায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি জেলায় বিজিবি সদস্যরা চলমান বিশেষ অভিযানে পুলিশ-র্যাবকে সহায়তা দিচ্ছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সারাদেশেই বিজিবি সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্থানীয় জেলা প্রশাসনের প্রয়োজনে বিজিবি সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামবেন।
গতকাল রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হাসান বলেন, কেন্দ্রীয় কারাগার ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ফাঁসি কার্যকরের আগে ও পরে সম্ভাব্য নাশকতার বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। তাছাড়া দুই যুদ্ধাপরাধীর মরদেহ নেওয়ার পথেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।
র্যাব-১০-এর অধিনায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর জানান, রায় কার্যকরের আগে ও পরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যেকোনো ধরনের নাশকতা দমনে র্যাব প্রস্তুত রয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, গতকাল শনিবার সন্ধ্যা থেকে ঢাকায় বিজিবির ২০ প্লাটুন সদস্য নিরাপত্তা টহল শুরু করে। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ১৫ প্লাটুন ও রাজশাহীতে ৭ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ঢাকাসহ সারাদেশের র্যাবের ব্যাটালিয়নগুলো সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার পাশাপাশি টহলও জোরদার করেছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে পুলিশের চেকপোস্ট বাড়ানোর পাশাপাশি সড়কের মোড়ে ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বিমানবন্দর, লঞ্চ টার্মিনাল, বাস টার্মিনাল ও রেল স্টেশনে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এসব স্থাপনার প্রবেশমুখে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও সন্দেহজনক গাড়ি তল্লাশি করেছে পুলিশ।
কারাগার ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা: কয়েক দিন ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের গেট ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা থাকলেও গতকাল সন্ধ্যা থেকে তা বাড়ানো হয়। কারারক্ষী, র্যাব ও পুলিশের সমন্বয়ে ওই এলাকায় তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। এর সঙ্গে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও ওই এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন। সন্ধ্যার পর থেকে আশপাশের সড়কগুলোতে যান চলাচল সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। কারাগারমুখী সড়কগুলোতে বসানো হয়েছে অতিরিক্ত তল্লাশি চৌকি। এ ছাড়া গভীর রাতে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের মরদেহ কারাগার থেকে বের করার আগ পর্যন্ত কারা ফটক থেকে শুরু করে চকবাজার, বংশাল, বেগম বাজার, বকশীবাজার ও চানখাঁরপুল এলাকার সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ জোনের উপকমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ জানান, কারাগার ও আশপাশের এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিভিন্ন সড়কে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে সন্দেহজনক গাড়িতে নিরাপত্তা তল্লাশি করা হয়। কারাগারের আশপাশের ভবনগুলোর ছাদেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, সাকার মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স চট্টগ্রামের রাউজান পর্যন্ত নেওয়ার সময় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির বিশেষ টহল ছাড়াও পথে পথে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলার টহল দল অংশ নেয়। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টেও গভীর রাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান ছিল। মুজাহিদের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স ফরিদপুরে নেওয়ার পথে বিশেষ নিরাপত্তা গাড়ি ছাড়াও ঢাকা জেলা পুলিশ, মুন্সীগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলা পুলিশ নিজ নিজ এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা দেয়। মাওয়া-কাওড়াকান্দি ফেরি রুটের নৌপথে দেওয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা।