অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে :
সরকারী রাস্তা ঘেঁষে বাড়ির মধ্যে স-মিল স্থাপন করে পরিবেশ বিনষ্টের অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে দু’টি করাত কল বন্ধ করে দেয়ার মাত্র ২০দিন পর পূনরায় চালু করার জন্য উঠে পরে লেগেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তা। আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিষদের ২শ’ গজ দূরত্বে উপজেলা সড়কের পাশের ঘণবসতিপূর্ণ লোকালয়ে ঘটেছে এধরণের ঘটনা।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীদের চাপের মুখে ম্যানেজ হয়ে কঠোর অবস্থানে থেকেও এবার তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে উপজেলা প্রশাসন। ফলশ্রুতিতে বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবী চন্দ বন্ধ মিল দু’টি চালুর বিষয়ে সুপারিশ করে পরিবেশ অধিদপ্তরে পত্র প্রেরণ করেছেন। এদিকে প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে পেরে খুশিতে শুক্রবার সকালে এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করে উল্লাস করেছেন স-মিল মালিক ক্ষীরোদ হালদার ও তার সমর্থকেরা। ফলে স্থানীয় বাসিন্দা ও ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স-মিলটি বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও স-মিল মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করার কথা জানিয়েছেন অভিযোগকারী অনিতা হালদার।
সূত্রমতে, গত ১০বছর পূর্বে আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিষদের ২শ’ গজ দূরত্বে উপজেলা সড়কের পাশে ঘনবসতিপূর্ন লোকালয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের কোন প্রকার অনুমতি না নিয়েই বাড়ির মধ্যে দু’টি স-মিল স্থাপন করেন সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা নিরোদ হালদারের ভাই প্রভাবশালী ক্ষীরোদ হালদার। কোন প্রকার সরকারী অনুমতি ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে স-মিলে কাঠ চেড়াই করায় ঘণবসতিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের জন্য বিরক্তির কারণ হয় স-মিলটি। চেরাই করার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার টন বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ জড়ো করাসহ দিন রাত ২৪ ঘন্টাই স-মিল চালানোর কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বসবাসের অনুপযোগী হয়ে ওঠে এলাকাটি। রাতের আঁধারে চলে বিভিন্ন সড়কের সরকারী কাটা গাছ চেরাইর কাজ। বিরক্তিকর শব্দ ও ধুলোবালির কারণে এজমাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া, স-মিলের বিকট শব্দে ছোট ছোট শিশুরা ঘুমের মধ্যেই জেগে ওঠাসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিঘœ ঘটায় সম্প্রতি ওই এলাকার বাসিন্দা অনিতা হালদার পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ নভেম্বর বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তদরের পরিচালক সুকুমার বিশ্বাস ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স-মিল দু’টি বন্ধ করে দেন। এমনকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স-মিলটির বিভিন্ন ক্ষতিকারক দিক চিহ্নিত করে তা বন্ধ করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন। গত ১ নভেম্বর থেকে স-মিলটি বন্ধ থাকার পর পুনরায় বন্ধ মিল চালুর জন্য বিভিন্নস্থানে দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করেন মালিক।
এলাকাবাসী জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার স-মিল দু’টি বন্ধের বিষয়ে কঠোর মনোভাব দেখালেও শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীনদের চাপে চুপ্সে যান। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল তাকে চাপ প্রয়োগ ও ম্যানেজ করায় তিনি আগের অবস্থান থেকে সরে এসে স-মিলটি চালুর সুপারিশ করেন।
এব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবী চন্দ বলেন, স-মিল বন্ধ রাখা আমার কাজ নয়, সেটি পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজ।
বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তদরের পরিচালক সুকুমার বিশ্বাস ম্যানেজ হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অভিযোগকারী ও মিলের মালিককে নিয়ে সামাধান বৈঠকের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
অভিযোগকারী অনিতা হালদার বলেন, বন্ধ স-মিল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ও স-মিল মালিকসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আমি আদালতে মামলা করব।