নারী-পুরুষের বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উন্নতির ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। গত এক বছরে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে।
জেনেভাভিত্তিক বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম বুধবার ‘বিশ্ব লিঙ্গ বৈষম্য প্রতিবেদন ২০১৫’ প্রকাশ করে। অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নারীর ক্ষমতায়ন— এই চার মাপকাঠির ভিত্তিতে প্রতিবছর এ সূচক প্রকাশ করা হয়।
বিশ্বের ১৪৫টি দেশের মধ্যে লিঙ্গ বৈষম্য রোধে এ বছর বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৬৪তম স্থানে। লিঙ্গ বৈষম্য রোধে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষস্থান ধরে রাখার পাশাপাশি এ বছর বাংলাদেশের স্কোরেও অগ্রগতি হয়েছে। গত বছর বাংলাদেশের স্কোর ছিল শূন্য দশমিক ৬৯৭, এবার তা বেড়ে শূন্য দশমিক ৭০৪ হয়েছে।
তালিকায় ভারতের অবস্থান ১০৮ এবং পাকিস্তানের ১৪৪। দক্ষিণ এশিয়ায় নেপাল (১১০), ভুটান (১১৮) ও মালদ্বীপের (১১৩) চেয়েও বাংলাদেশে নারী-পুরুষের বৈষম্য অনেক কম।
লিঙ্গ বৈষম্য রোধে এ বছর বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। এই মাপকাঠিতে আগের বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২২তম। এবার ২৭ ধাপ এগিয়ে ৯৫তম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্কোর শূন্য দশমিক ৯৭১।
বাংলাদেশ গত বছরের তুলনায় দুই ধাপ করে এগিয়েছে নারীর শিক্ষা ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের মাপকাঠিতেও।
শিক্ষায় অংশগ্রহণে এবার বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম, স্কোর শূন্য দশমিক ৯৪৮। গত বছরের মতো এবারও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বিশ্বে প্রথম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে গত বছরের ১১৮তম অবস্থান থেকে পিছিয়ে এসেছে ১১৯তম অবস্থানে।
রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে গতবারের দশম স্থান থেকে দুই ধাপ এগিয়ে এবার বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম স্থানে; স্কোর শূন্য দশমিক ৪৩৩। নারীর ক্ষমতায়নে প্রথম ১০টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ৯ নম্বরে। এই মাপকাঠিতে শীর্ষ দশের মধ্যে নেই পাকিস্তান।
তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গতবারের চেয়ে দুই ধাপ পিছিয়ে এবার ১৩০তম অবস্থানে নেমে এসেছে। স্কোর গতবারের শূন্য দশমিক ৪৭৭ থেকে কমে এবার শূন্য দশমিক ৪৬২ হয়েছে।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৭ সাল থেকে টানা নয় বছর ধরে লিঙ্গ বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে মোটামুটি ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছে বাংলাদেশ।
তালিকার শীর্ষে ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে (যেসব দেশে বৈষম্য কম) যথাক্রমে— আইসল্যান্ড, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, আয়ারল্যান্ড, রুয়ান্ডা, ফিলিপাইন, সুইজারল্যান্ড, স্লোভেনিয়া ও নিউজিল্যান্ড। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে এ বছরের সূচকে ফ্রান্স ১৫, যুক্তরাজ্য ১৮ ও যুক্তরাষ্ট্র ২৮তম অবস্থানে রয়েছে।
তালিকায় নিচের দিকে (যেসব দেশে বৈষম্য সবচেয়ে বেশি) ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে— ইয়েমেন, পাকিস্তান, সিরিয়া, চাদ, ইরান, জর্ডান, মরক্কো, লেবানন, মালি ও মিসর। অর্থাৎ তালিকার সবচেয়ে নিচে রয়েছে ইয়েমেন, তার এক ধাপ ওপরে পাকিস্তান।
এশিয়ায় জাপান (১০১), দক্ষিণ কোরিয়া (১১৫), মালয়েশিয়া (১১১), মালদ্বীপ (১১৩), শ্রীলংকা (৮৪) ও চীনের (৯১) চেয়েও বাংলাদেশে লিঙ্গ বৈষম্য কম। তবে থাইল্যান্ড (৬০) ও সিঙ্গাপুর (৫৪) বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে।
গত এক দশকের তথ্য বিশ্লেষণে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতার ক্ষেত্রে বিশ্ব সামান্যই এগিয়েছে। এ সময়ে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী-পুরুষ ব্যবধান ঘুচেছে ৪ শতাংশ, আর্থিক দূরত্ব কমেছে ৩ শতাংশ। অগ্রগতির এই হার অব্যাহত থাকলে নারী-পুরুষের সমতায় আসতে ১১৮ বছর লাগবে।
এতে আরও বলা হয়, ২০০৬ সালে পুরুষরা বার্ষিক যে আয় করত, বর্তমানে নারীরা সে আয় করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরও বেশি সংখ্যক নারী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করায় এ বৈষম্য ক্রমে কমে আসছে।