ঢাকা: একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বলেছেন, ‘ভয় করো না, ফাঁসি হলেও ইসলামের আন্দোলন চলবে।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পরিবারের ১২ সদস্য দেখা করতে গেলে মুজাহিদ এ কথা বলেছেন বলে সাংবাদিকদের জানান তার ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর।
মাবরুর বলেন, ‘তিনি মানসিকভাবে দৃঢ় আছেন। সুস্থ আছেন। আমরা তার সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আমাদের বলেছেন, ভয় করো না। ফাঁসি হলেও ইসলামের আন্দোলন চলবে।’ তবে তার দল সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি বলে জানান তার ছেলে আহমেদ মাবরুর।
রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার ব্যাপারে মাবরুর বলেন, ‘আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
দুপুর ১টা ৫৪ মিনিটে মুজাহিদের পরিবারের লোকজন কারাগারে প্রবেশ করেন। সাক্ষাৎ শেষে তারা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন ২টা ৫৫ মিনিটে। এর আগে বেলা ১২টার দিকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে সাক্ষাতের আবেদন করে মুজাহিদের পরিবার।
মুজাহিদের সঙ্গে দেখা করা ১২ জন হলেন, তার স্ত্রী তামান্না-ই-জাহান, বড় ভাই আলী আফজাল মোহাম্মদ খালেছ, ছোট ভাই ওজায়ের এম এ আকরাম, বড় ছেলে আলী আহম্মদ তাজদীদ, মেজ ছেলে আলী আহম্মদ তাহকিক, ছোট ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর, মেয়ে তামরিনা বিনতে মুজাহিদ, বড় ছেলের স্ত্রী ফারজানা জেবিন, মেঝো ছেলের স্ত্রী নাসরিন কাকলি, ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা রুপাইদা, ভাগনে আ ন ম ফয়েজ হাদী সাব্বির ও স্বজন নুরুল হুদা।
কারাগারে প্রবেশের আগে মাবরুরসহ পরিবারের কেউ সাংবাদিক বা কারো সঙ্গে কথা বলেননি। দুপুর পৌনে ২টার দিকে একটি ছোট কারে চড়ে মুজাহিদের পরিবার কারাফটকের সামনে আসেন। সেখানে কয়েক মিনিট দাঁড়িয়েই তারা কারা অভ্যন্তরে চলে যান।
২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছিলেন। ওই রায় চ্যালেঞ্জ করে মুজাহিদের আইনজীবীরা সর্বোচ্চ আদালতে গেলে সর্বোচ্চ আদালতও ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রাখেন।
তবে প্রসিকিউশনের আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল তাকে তিনটিতে মৃত্যুদণ্ড দিলেও আপিল বিভাগ শুধুমাত্র ষষ্ঠ অভিযোগে অর্থাৎ বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রাখেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর দণ্ড থেকে বাঁচতে মুজাহিদের সামনে খোলা ছিল রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের পথ। তাও গতকাল বন্ধ হয়ে যায় আপিল বিভাগের রায়ে। এখন রাষ্ট্রপতির ক্ষমাই তার বাঁচার একমাত্র পথ।