ক্রিকেটারদের সঙ্গে টালবাহানা

খেলা
untitled-6_174418
প্র্যাকটিসে এক অলরাউন্ডারের পারফরম্যান্সে বেশ মুগ্ধ রংপুর রাইডার্সের কোচ শেন জার্গেনসেন। গতকাল অনুশীলনে নিজে থেকেই রাসেল আল মামুনের প্রশংসা করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক কোচ। অথচ মামুনকেই কিনা দল থেকে ছেঁটে ফেলতে চেয়েছিল রংপুর রাইডার্স কর্তৃপক্ষ। পরে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চাপে তাকে দলে নিতে বাধ্য হয় তারা। তবে শুধু রংপুর নয়, আরও কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের কিছু ক্রিকেটারের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়েছে। এমনকি ২২ অক্টোবর প্লেয়ার্স ড্রাফটে আনুষ্ঠানিকভাবে দলে টানা কয়েকজন বিদেশি ক্রিকেটারকেও বাদ দিতে চাইছে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। এসব নিয়ে জেরবার অবস্থা বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের।

জাতীয় লীগে চট্টগ্রামের হয়ে টপ অর্ডারে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি মিডিয়াম পেসেও ভালোই দাপট দেখিয়েছিলেন রাসেল আল মামুন। সে কারণেই হয়তো ২২ অক্টোবর বিপিএল ড্রাফটে তাকে দলে টানে রংপুর রাইডার্স। কিন্তু দলে টানার ক’দিন পরই ফোনে ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, তাকে নাকি তাদের প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বেঁধে দেওয়া তালিকা অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাঁচ লাখ টাকা। রংপুর রাইডার্স কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তাকে বলা হয়, সে যেন এক লাখ টাকা নিয়ে তাদের দল ছেড়ে দেয়। তাতে সে রাজি হয়নি। মামুন বিষয়টি বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল এবং বিসিবির প্রধান নির্বাহীকে জানান। গভর্নিং কাউন্সিল রংপুর কর্তৃপক্ষকে ডেকে সোজা জানিয়ে দেয়, ২২ অক্টোবর ড্রাফটে যেহেতু তারা মামুনকে নিয়েছে, তাই অবশ্যই তাকে দলে রাখতে হবে এবং তার পারিশ্রমিক বুঝিয়ে দিতে হবে। এরপর বাধ্য হয়ে মামুনকে অনুশীলনে যোগ দিতে বলে রংপুর রাইডার্স। দু’দিন ধরে তিনি অনুশীলন করছেন।
মামুন ছাড়াও কয়েকজন ক্রিকেটারের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে রংপুর কর্তৃপক্ষ। নিলামের পর জুবায়ের হোসেন লিখন, মার্শাল আইয়ুব ও রকিবুল হাসানকে দলে টানার ঘোষণা দিয়েছিল তারা। এ তিন ক্রিকেটারের সঙ্গে আলোচনাও নাকি চূড়ান্ত করে ফেলেছিল তারা। কিন্তু দু’দিন আগে এ তিনজনকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাদের তারা নেবে না। চুক্তি হয়নি বলে ওই তিন ক্রিকেটারের কোনো কিছু বলার ছিল না। মূলত, অলক কাপালি এবং আল-আমিন জুনিয়রকে পাওয়ায় এ তিনজনের সঙ্গে কথা বলেও চুক্তি করেনি তারা।
অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার অলক কাপালির সঙ্গেও অনেকটা একই ধরনের আচরণ করেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। নিলামের পর অলক কাপালিকে দলে টানার ঘোষণা দিয়েছিল কুমিল্লা। বিপিএল টেকনিক্যাল কমিটি সূত্রে জানা গেছে, কাপালিকে দলে টানার কাগজপত্রও তাদের কাছে জমা দিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। কিন্তু চুক্তি করার পর তারা কাপালিকে না বলে দেয়। সেই ফাঁকে তার সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত করে ফেলে রংপুর। গতকাল কাপালি রংপুরের হয়ে অনুশীলনও করেছেন। মজার ব্যাপার হলো, গতকাল আবার কুমিল্লা কর্তৃপক্ষের মনে হয়েছে, কাপালিকে তাদের প্রয়োজন। তাকে ফেরানোর জন্য গতকাল বিপিএল টেকনিক্যাল কমিটির দ্বারস্থও হয়েছে কুমিল্লা। টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য জালাল ইউনুস বলেছেন, এখন দুই ফ্র্যাঞ্চাইজির সমঝোতার মাধ্যমেই বিষয়টির সমাধান করতে হবে।
ঘটনা এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। বিদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে চলছে এমন আচরণ। বিপিএল টেকনিক্যাল কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, বেশিরভাগ ফ্র্যাঞ্চাইজি ড্রাফটে দলে টানা বেশ কয়েকজন বিদেশি ক্রিকেটারের ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ (এনওসি) জমা দিচ্ছে না। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো নাকি আনুষ্ঠানিকভাবে দলে টানা বিদেশিদের বাদ দিয়ে নতুন ক্রিকেটার নেওয়ার জন্য এসব ফন্দি করছে। এরই মধ্যে জিম্বাবুয়ের ম্যালকম ওয়ালারকে দলে টানার জন্য দুটি ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যে লড়াই শুরু হয়ে গেছে। তাকে নেওয়ার জন্য ড্রাফট অনুষ্ঠানে দলে টানা যে কোনো এক বিদেশিকে বাদ দেওয়ার পাঁয়তারা করছে তারা। তবে বিপিএল টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য জালাল ইউনুস সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, জাতীয় দলে ডাক পেলে এবং ইনজুরিতে পড়লেই কেবল ড্রাফটে নেওয়া ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়া যাবে। এ দুটি কারণ ছাড়া কোনোভাবেই ড্রাফটে দলে টানা ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়া যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *