ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে শুক্রবার রাতের ভয়াবহ হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার দায়ে বেলজিয়ামে তিন ব্যক্তিকে আটক করেছে সে দেশের পুলিশ। তাদের সঙ্গে হামলার যোগসূত্র আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্যারিসের প্রধান কৌঁসুলি ফ্রাঙ্কো মোলিনস জানান, সন্ত্রাসীরা তিনটি দলে ভাগ হয়ে শুক্রবার রাতের হামলাটি চালিয়েছে। অপরদিকে ফ্রান্সের এক পার্লামেন্ট সদস্য ও মেয়র জানান, এক হামলাকারীকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। তার নাম ওমর ইসমাএল মোস্তেফাই। এ খবর দিয়েছে বিবিসি ও সিএনএন। শুক্রবার রাতে প্যারিসে চালানো ওই হামলায় নিহত হয় ১২৯ জন, আহত হয় ৩৫০ জনেরও বেশি।
কৌঁসুলি মোলিনস সাংবাদিকদের জানান, এ হামলাকারীরা কোন জায়গা থেকে এসেছে, তা আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। তাদের অর্থ যোগান দেয়া হয়েছে কিভাবে, সেটাও বের করতে হবে। তিনি জানান, সাত হামলাকারী নিহত হয়েছে। তাদের সবার কাছেই ভারি অস্ত্রশস্ত্র ছিল। ছিল কালাশনিকভ রাইফেল। সবার পরনে ছিল একই ধরণের বিস্ফোরক বেল্ট।
তিনি আরও জানান, বেলজিয়ামে এ হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিনজনকে আটক করা হয়েছে। বেলজিয়ামের বিচার বিভাগের এক মুখপাত্রও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মূলত, প্যারিস হামলার ঘটনাস্থলে পাওয়া একটি গাড়ি ভাড়া করা হয়েছিল বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস থেকে। এ কারণেই অভিযান শুরু হয়েছে দেশটিতে। পশ্চিমা একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক সূত্র বলেছে, মোলেনবিক-সেইন্ট-জিন এলাকার তিনটি ঘরে এ অভিযান চালানো হয়েছে। ওই সূত্র জানায়, প্যারিস হামলার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে চেনে বেলজিয়ামের গোয়েন্দা সংস্থা। তার ওপর ভিত্তি করেও অভিযান চালানো হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল বলেন, ব্রাসেলসে আটককৃত সন্দেহভাজনদের সঙ্গে প্যারিস হামলার কোন যোগসূত্র আছে কিনা তা পরখ করা হচ্ছে।
মোলিনস জানান, অন্যতম হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত ওমর ইসমাএলের বয়স ২৯ বছর বয়সী। সে ফরাসি নাগরিক। তার অতীতে অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার একটি প্রমাণ পাওয়া গেলেও, কখনও কারাগারে থাকতে হয়নি তাকে। ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা তার আঙ্গুলের ছাপ পরীক্ষা করে এ বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, প্যারিসের ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে কৌরকৌরন্নেস নামে এক শহরে থাকতো ইসমাএল। সে মৌলবাদে দীক্ষিত হয়েছে বলে নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে তথ্য ছিল। কিন্তু সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কোন তদন্তে কখনই তার নাম উঠে আসেনি। বার্তাসংস্থা এএফপি বলছে, মোস্তেফাই সিরিয়ায় কখনও গিয়েছে কিনা, সেটি এখন যাচাই করা হচ্ছে। তার পিতা ও ভাইকে ইতিমধ্যেই কারাগারে নিয়েছে পুলিশ। তালাশ চালিয়েছে তার ঘরে। মোস্তেফাইর বড় ভাই স্বেচ্ছায় একটি পুলিশ স্টেশনে গিয়ে হাজির হয়েছেন। তিনিও হামলার ব্যাপারে নিজের ক্ষোভ, বিহ্বলতা প্রকাশ করেন। তবে তার দাবি, কয়েক বছর থেকেই তার এ ছোট ভাইর সঙ্গে কোন যোগাযোগ ছিল না তার।
জঙ্গিগোষ্ঠি আইএস এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। একটি কনসার্ট হল, বৃহৎ স্টেডিয়াম, রেস্তোরাঁ ও বারে প্রায় একযোগে হামলাগুলো চালানো হয়েছে। আইএস বলেছে, সিরিয়ায় আইএস-এর ওপর ফরাসি বিমান হামলা চালানোর প্রতিবাদেই ওই হামলা চালানো হয়েছে। তবে ফরাসি প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালস বলেছেন, সিরিয়ায় আইএস-এর বিরুদ্ধে বিমান হামলা অব্যাহত রাখবে ফ্রান্স।