একের পর এক প্রশাসনিক অঘটনে অস্বস্তিতে আছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্য বিষয়ক সম্পাদক আহসান হাবিব কামাল। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার ২০ মাসের মধ্যে ব্যাপক দুর্নীতি, বিধি না মেনে অর্ধশতাধিক মাস্টাররোল কর্মচারীদের রাজস্ব খাতভুক্ত করা, করপোরেশনের মনোগ্রাম পরিবর্তন ও বিভিন্ন মামলা জটিলতায় একদিকে যেমন তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বাঁকা নজরে পড়েছেন, তেমনি নানাভাবে সমালোচিত হচ্ছেন নগরবাসীর কাছে। নগর ভবনের বিভিন্ন বিধিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের ঘটনায় একাধিকবার তদন্তে এসেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। মন্ত্রণালয় শোকজও করেছে মেয়র আহসান হাবিব কামালকে। কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে দুদক। আবার দলীয়ভাবেও অনেকটা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন তিনি। মেয়রের একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র বলেছে, সব মিলিয়ে তার এখন ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ অবস্থা। এ কারণে বিগত এক-দেড় মাস ধরে বেশির ভাগ সময়ই তিনি রাজধানীতে অবস্থান করে মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন প্রভাবশালীর কাছে তদবির করছেন। এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে আহসান হাবিব কামালের মুঠোফোনে গত বুধবার বহুবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. ফরিদ জানিয়েছেন, মেয়র ঢাকায় অবস্থান করছেন। বিসিসির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ৫৮ জন মাস্টাররোল কর্মচারীকে রাজস্ব খাতভুক্ত করায় কিছুদিন আগে মেয়র কামালকে শোকজ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ওই শোকজ নোটিশে ৫৮ কর্মচারীকে অবৈধভাবে রাজস্ব খাতভুক্ত করায় কেন মেয়রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ ঘটনার পর মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দল এসে বিষয়টি তদন্ত করে। সূত্র জানায়, ওই তদন্ত দল তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ৫৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রাজস্ব খাতভুক্ত করার প্রক্রিয়ায় মন্ত্রণালয়ের নিয়ম পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি। এক্ষেত্রে অবশ্য মেয়রের বিরুদ্ধে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী মন্ত্রণালয় সম্প্রতি মেয়রকে শোকজ করে। শোকজ নোটিশ দেওয়ার পরপরই ৫৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রাজস্ব খাতভুক্ত করার সিদ্ধান্ত বাতিল করে মন্ত্রণালয় ফলে ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন ফের মাস্টাররোল কর্মচারী হিসেবে গণ্য হচ্ছেন। বেতন স্কেল থেকে (রাজস্বভুক্ত) বাতিল করার পর তারা মেয়রকে দেওয়া উৎকোচের টাকা ফেরত চান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মেয়র কামাল তাদের চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিয়েছেন।
২০১৩ সালের অক্টোবরে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই মেয়র আহসান হাবিব কামাল ১০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হাতে নেন। তাতে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে মেয়র ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। ওই অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছে বরিশাল দুদক। গত সপ্তাহে দুদক বরিশাল আঞ্চলিক দপ্তর থেকে বিসিসির হিসাব শাখায় সংশ্লিষ্ট কাজগুলোর যাবতীয় নথিপত্র তলব করা হয়েছে। বরিশাল দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক তানভীর আহম্মেদ এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে অবশ্য মেয়র আহসান হাবিব কামাল এখন বলছেন, ওই ১০০ কোটি টাকার কাজের সব বিল এখনও ঠিকাদারদের পরিশোধ করা হয়নি। তাই দুর্নীতি হয়েছে_ এখনই এমন কথা বলা সঠিক নয়।
দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই মেয়র আহসান হাবিব কামাল করপোরেশনের মনোগ্রাম পরিবর্তন করেন। নগর পরিষদের প্রথম সভায় মেয়র কামাল করপোরেশনের আগের মনোগ্রাম থেকে নৌকা বাদ দিয়ে ধানের শীষ সংযুক্ত করা হয়। মনোগ্রাম পরিবর্তনের কাজটিও বিধিসম্মত না হওয়ায় মন্ত্রণালয় থেকে মেয়র কামালকে সতর্ক করা হলে পুনরায় আগের মনোগ্রাম ফিরে পায় করপোরেশন।
প্রশাসনিক জটিলতা ছাড়াও একাধিক মামলা জটিলতায়ও মেয়র আহসান হাবিব কামাল বিব্রতকর সময় পার করছেন বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। গত আগস্ট মাসে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবির অভিযোগে মেয়র কামালসহ বিসিসির একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন নগরীর সিঅ্যান্ডবি সড়কের বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন খান। আদালত ওই মামলা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন দুদক বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়কে। বহুমুখী পাইকারি কাঁচাবাজারের স্টল বরাদ্দ দিয়ে মালিকানা বুঝিয়ে না দেওয়ায় অপর একটি মামলা দায়ের হয়েছে মেয়র কামালসহ ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সাগরদীর বাসিন্দা নাসির উদ্দিন সিকদার আদালতে ওই মামলা দায়ের করেন। সূত্র জানায়, এ ধরনের আরও ২-৩টি মামলার প্রধান অভিযুক্ত মেয়র আহসান হাবিব কামাল।