নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে রিমান্ডে নিয়ে ন্যায়বিচারের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ রয়েছে বলে মত দিয়েছেন বিশিষ্ট আইনজীবীরা। তারা বলেন, মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হলেও রাষ্ট্রপক্ষ এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাইলে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে যে কোনো সময় আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করতে পারেন। এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। তবে, বিচার বিলম্বিত না করে দ্রুত বিচারের দিকে এগিয়ে নিতেও মতামত দিয়েছেন আইনজ্ঞরা।
অপরদিকে, এ মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদনের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদউদ্দিন।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গত রাতে সমকালকে বলেন, ‘অনেকের ধারণা, মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে বলে আসামি নূর হোসেনকে আর জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে না। এটা ঠিক নয়, নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ আছে। রাষ্ট্রপক্ষের কেঁৗসুলি বা মামলার সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা চাইলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করতে পারেন।’ তিনি বলেন, আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে আসামিকে নিশ্চয়ই জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে। আইনে থাকুক বা না থাকুক সেটা বড় কথা নয়, এত বড় একটা হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে তো প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতেই পারে।
প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক সমকালকে বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবেদন করে আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। চার্জশিট দিয়েছে তো কী হয়েছে? এতে কোনো আইনি বাধা নেই।
ফৌজদারি মামলা বিশেষজ্ঞ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সমকালকে বলেন, যেহেতু একটা চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ভারত থেকে আনা হয়েছে, তাই ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার প্রয়োজন রয়েছে। আসামি নূর হোসেনকে দেশে পাঠানোর পর অন্যান্য মামলায় তাকে গ্রেফতারও দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, ন্যায়বিচারের স্বার্থে এবং নতুন তথ্য পাওয়া যেতে পারে এমন প্রত্যাশায় তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতের নির্দেশ সাপেক্ষে তার রিমান্ড চাইতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ওই কর্মকর্তা আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করতে পারেন। তিনি মনে করেন, এ মামলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা উচিত।
অবশ্য, আইনি জটিলতা এড়াতে আসামি নূর হোসেনকে রিমান্ডে না নেওয়ার পক্ষেই মত দিয়েছেন বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক। তিনি সমকালকে বলেন, সাত খুনের মামলায় নূর হোসেনের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ তদন্ত কর্মকর্তার কাছে আছে। এর ভিত্তিতে তিনি আদালতে চার্জশিট দিয়েছেন। এ পর্যায়ে নতুন করে নূর হোসেনকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হলে এবং তা গৃহীত হলে মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হতে পারে।
তিনি বলেন, ফৌজদারি আইনের ১৭৩(২) ধারায় ‘অধিকতর তদন্তের’ কথা উল্লেখ আছে। অধিকতর তদন্ত পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তের স্বার্থে গ্রেফতারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে রিমান্ড অনুমতি চাইতে পারেন।
রাষ্ট্রপক্ষ ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাইলে নূর হোসেনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব বলে মনে করেন বাদী পক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা উচ্চ আদালতে যাব। উচ্চ আদালতে গিয়ে মামলাটি যাতে পুনরায় তদন্তে যায় এবং নূর হোসেন এ মামলার যেহেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রধান আসামি এবং এই হত্যাকা ের মূল পরিকল্পনাকারী এবং অর্থ জোগানদাতা, তাই তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা অত্যন্ত জরুরি।
এদিকে, নূর হোসেনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানিয়েছেন নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটিসহ নিহতদের পরিবার।
নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাই নূর হোসেনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। এই হত্যাকা ের সঙ্গে আর কারা জড়িত, কারা পরিকল্পনাকারী, কারা অর্থের জোগানদাতা? র্যাব কেন আমার স্বামীসহ সাতজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করবে? তাদের সঙ্গে তো র্যাবের কোনো বিরোধ ছিল না। পুলিশ এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই অভিযোগপত্র থেকে বাদ দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনার সঙ্গে সঙ্গে তার সহযোগীরাও এলাকায় ফিরে আসতে শুরু করেছে।
নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের গাড়িচালক ইব্রাহিমের বাবা আবদুল ওহাবও একই দাবি করেছেন।