আমরা গর্বিত যে একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হতে পেরেছি। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে মরিয়া আমরা রক্ত ও ইজ্জত দিয়ে এনেছি স্বাধীনতা। পেয়েছি বাংলাদেশ। অর্জিত হয়েছে একটি লাল সবুজের পতাকা।
একটি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই সিটিং রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতার স্থপতিকে স্বপরিবারে খুন হতে হয়েছে। জঘন্যতম খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা পুরস্কৃত হয়েছেন। এই খুনের ঘটনার বিচার হয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে এখনো খুনীদের একাধিক সহযোগী ক্ষমতায় আছেন। পরবর্তি সময় আরেকজন সিটিং রাষ্ট্রপতি খুন হন। ওই খুনের ঘটনার বিচার হয়নি এখনো।
১৯৯০ সনে আমরা গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য একজন স্বৈরশাসককে বিদায় করেছি। নূর হোসেনদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বৈরশাসককে বিদায় করতে সক্ষম হয়েছি। প্রতিষ্ঠা করেছি গনতন্ত্র। তাও আবার নিঁখুত গনতন্ত্র। মানে সংসদীয় গনতন্ত্র। নিঁখুত গনতন্ত্রের আদলে ৯১ সনে নির্বাচন হল। তৎকালিন বিরোধী দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করল। ৯৬ সনে তৎকালিন সরকারী দল বিএনপি এক তরফা নির্বাচন করে ৪৮ আসনে প্রত্যক্ষ ভোট ছাড়া এমপি নির্বাচন করে একটি সরকার গঠন করল। ১৫ দিনের মধ্যে ওই সরকার ক্ষমতাচ্যুত হল। তারপর নির্বাচন হলেও তৎকালিন বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ২০০১ সালে সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হলেও তৎকালিন বিরোধী দল আওয়ামীলীগ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করল। ২০০৮ সালে একটি অসাংবিধানিক সরকার নির্বাচন দিল। ক্ষমতায় এসে আওয়ামীলীগ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী একটি একতরফা নির্বাচন করে দেশ পরিচালনা শুরু করল। ওই নির্বাচন বয়কটকারী রাজনৈতিক দল বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ গ্রহন করল। বিএনপির সকল মেয়রকে ক্ষমতাচ্যুত করে মেয়র পদ দখল করল ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। এরই মধ্যে কথিত নির্বাচন করে ঢাকা ও চট্রগ্রাম সিটির মেয়র পদও দখলে নিয়ে গেল আওয়ামীলীগ। অদৃশ্য হয়ে গেল গনতন্ত্র।
বর্তমানে স্থানীয় সরকারকে নিজেদের দখলে নেয়ার জন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেয়ার ঘোষনা দিয়েছে সরকারী দল। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আগে চলমান আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান প্রমান করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন কি হবে। ধারণা করা হয় গনতন্ত্র মৃত্যুর পথে ধাবিত বলেই মনে হচ্ছে।
পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, ৯৬ সনে বিএনপি একতরফা নির্বাচন করে বিনা ভোটে ৪৮ এমপি নির্বাচনের মাধ্যমে গনতন্ত্রকে ধ্বংস করার কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। ১৪ সালে আওয়ামীলীগ প্রতিপক্ষের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ১৫৪ আসনে বিনা ভোটে এমপি নির্বাচন করে নির্বাচনের আগেই সরকার গঠন করে। পরবর্তি সময় স্থানীয় সরকার কে দখলে নেয়ার পরিকল্পনার ফলে গনতন্ত্র বিলিন হতে যাচ্ছে বলে মনে হওয়ার আর বাকী থাকে না।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, গনতান্ত্রিক দেশে ভোট ছাড়া সরকার প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নির্ভর হয়ে পড়েছে। ফলে এখন শান্তি প্রিয় নাগরিক ভোটের আশা ছেড়ে দিয়ে উন্নয়নের দিকে আশাবাদী হচ্ছে।
এই অবস্থায় আওয়ামীলীগের হাত থেকে ক্ষমতা নেয়ার জন্য মরিয়া বিএনপি-জামায়াত নানা কৌশল খুঁজছে। ভোটের আশা ছেড়ে দিয়ে ক্ষমতায় আসতে হলে যা যা করা দরকার তারা তাই করছে। আর ক্ষমতায় থাকার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সব কিছুই করছে। দুটি দল বা জোটের ক্ষমতার লড়াইয়ে ভিকটিম হচ্ছে দেশ ও জনগন। বিকল্প শক্তির আশ্রয়া নেয়া দুটি জোট ক্ষমতায় থাকা আর যাওয়ার জন্য যে চেষ্টা করছেন নিঃসন্দেহে তাও অগনতান্ত্রিক। যেখানে ভোট নেই গনতন্ত্র নেই সেখানে ক্ষমতার পালা বদল অগনতান্ত্রিকভাবে হবে এটি স্বাভাবিক। এই অগনতান্ত্রিক পদ্ধতি কি তা নিয়ে শংকা আশংকা যথেষ্ট। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আই এস জঙ্গীর অস্থিত্ব নিয়ে যে টানাটানি হচ্ছে এবং যেভাবে রহস্যজনক ঘটনা ঘটছে তাতে দেশ কোন দিকে যাচ্ছে তার গন্তব্য অজানা হয়ে যাচ্ছে। যদি তাই হয়, তবে কি আমরা অজানার পথে হাঁটছি?
সর্বশেষ পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যায়, বিদেশে অবস্থানরত জিয়া পরিবার প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ নিয়ে যে ধরণের মন্তব্য করছেন তাতে বুঝতে বাকী নেই যে, আমাদের সমস্যা সমাধানে বিদেশী হস্তক্ষেপ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ছে। আর এরই মাঝে বাংলাদেশে সংঘটিত ধারাবাহিক কিছু ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আইএস এর দায় স্বীকার আমাদেরকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিশ্ব মোড়লরা জঙ্গী দমনে কোন দেশে গেলে সহজে ছেড়ে যায় না তার প্রমান যথেষ্ট। যদি তাই হয় তাহলে রক্ত আর ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আমাদের জন্য শুধুই স্মৃতি হয়ে থাকবে। ফলে আমরা আবারও একটি পরাধীনতার শৃঙ্খল পড়তে প্রস্তুতি নিচ্ছি বললে ভুল হবে বলে মনে হয় না। তবে এখনো সময় আছে আমাদের রাজনৈতিক শুভ বুদ্ধির উদয় হওয়ার। জানি সেটার সম্ভাবনাও ক্ষীন। কারণ গনতন্ত্রের জন্য শহীদ নূর হোসেনের শাহাদাৎ বার্ষিকীতে দুই জোট যে ভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করছে তাতেই বুঝা যায় আমাদের ভবিষৎ গনতন্ত্র কি ভাবে প্রতিষ্ঠা হবে।
তাই বলতে হয় কবির ভাষায় বলা “নীল আকাশে কে ভাসাল সাদা মেঘের ভেলা” আমাদের কপালে জোটছে না। নীল আকাশে এখন কালো মেঘের ভেলা ভাসছে এটিই সত্য। আর আকাশ পানে চেয়ে থাকা হতভাগা আমরা অপেক্ষা করছি একটি বড় ধরণের দূর্যোগের জন্য।
১০ নভেম্বর ২০১৫