মিয়ানমারের নির্বাচনে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) বিপুল বিজয়ের পথে দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অং সান সু চি; এ সাফল্যকে তিনি বলেছেন ‘গণতন্ত্রের জাগরণ’।
দীর্ঘকাল সেনাশাসনে থাকা মিয়ানমারে ২৫ বছর পর রোববার প্রথমবারের মত সব দলের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়।
নির্বাচন কমিশন এখনও ফল ঘোষণা না করলেও প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যে বড় জয় আশা করছে গণতন্ত্রপন্থি এনএলডি।আর সেনা সমর্থনে ক্ষমতায় থাকা ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেমোক্রেটিক পার্টির (ইউএসডিপি) ইতোমধ্যে হার স্বীকার করে নিয়েছে।
সোমবার সকালে ইয়াংগুনে এনএলডির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমবেত নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সামনে সু চি বলেন, “নির্বাচনের ভোটযুদ্ধ শেষ হয়েছে। এতে জনগণ যেভাবে জেগে উঠে, তাতে গণতন্ত্রের জাগরণ ঘটেছে। এনএলডি মিয়ানমারবাসীকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।”
দেশবাসী সরকারিভাবে ফল ঘোষণার জন্য ‘অধীর অপেক্ষায়’ রয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সু চি দলীয় কার্যালয়ে পৌঁছালে করতালি আর শ্লোগানে তাকে স্বাগত জানান নেতা-কর্মীরা। উচ্ছ্বসিত নেতা-কর্মীদের বুকে বুক মিলিয়ে আনন্দ উদযাপন করতে দেখা যায় এ সময়।
কার্যালয়ে ঢুকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাসিমুখে হাত নেড়ে নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানান নোবেলবিজয়ী সু চি, যাকে গণতন্ত্রের লড়াইয়ের গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে দীর্ঘদিন।
তিনি বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। এটা যেমন সুখবর। তেমনি দ্রুত সরকারি ফলাফল ঘোষণা হবে, এটাও প্রত্যাশা করছে দেশবাসী।“এখনো নির্বাচনের সরকারি ফলাফল ঘোষণা হয়নি। তারপরও কী ঘটতে যাচ্ছে- তা জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে।”
ধারণা করা হচ্ছে, মিয়ানমারের প্রায় তিন কোটি ভোটারের মধ্যে ৮০ শতাংশের ভোট রোববার বাক্সে পড়েছে। আর মধ্যাঞ্চলের জনবহুল এলাকাগুলোতে বাক্সে পড়া ভোটের ৮০ শতাংশ পাওয়ার আশা করছে সু চি’র দল।
কেবল নেতা-কর্মীরা নন, ইয়াঙ্গুনের সাধারণ ভোটাররাও নির্বাচনে এনএলডির জয় দেখছেন।
স্থানীয় স্কুলের শিক্ষিকা সুই চি মুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটে আমি অভিভূত। গণতন্ত্রের বিজয়কে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। আমি ভীষণ এক্সাইটেড।”
এনএলডিই এবার ক্ষমতায় যাবে বলে আশাবাদী উ মুন, যিনি আগের দিন নির্বাচনে একটি ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সোমবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমার কেন্দ্রে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত গণনা শেষে দেখা গেল এনএলডির প্রার্থী পেয়েছেন ১ হাজার ১২ ভোট, আর ইউএসডিপির প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র ৪০ ভোট। এ থেকে বোঝা যায়, মানুষের সমর্থন কোথায় যাচ্ছে।”
তবে ভোটের স্পষ্ট চিত্র পেতে সোমবার রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।দেশি-বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রোববারের ভোটগ্রহণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে।
এনএলডির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমিক তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন টাউনশিপে ৭০ শতাংশ প্রার্থীর জয়ের আশা করছেন তারা। আর সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে এনএলডিপিকে ৬৭ শতাংশ আসনে জয়ী হতে হবে।
অবশ্য দল জয় পেলেও বিদেশিকে বিয়ে করায় বর্তমান আইন অনুযায়ী মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না সু চি। দেশটির ৪৪০ আসনের সংসদ ‘পিথু হালতাউয়ের’ ১১০টি আসন সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত থাকায় সংবিধান সংশোধন করাও হবে কঠিন কাজ।
সোমবার তিনি দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে প্রবীণ নেতা ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান উ থিন ওকে ধন্যবাদ জানান। ধারণা করা হচ্ছে, সরকার গঠনের সুযোগ পেলে ৮৮ বছর বয়সী সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী উ থিনকেই প্রেসিডেন্ট করতে পারেন সু চি।
পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে সোমবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন এনএলডি নেত্রী।এদিকে ক্ষমতাসীন ইউএসডিপির নেতারাও যার যার নির্বাচনী এলাকা থেকে ইয়াংগুনে ফিরতে শুরু করেছেন। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ভিড় করছেন নেতা-কর্মীরা।
ইউএসডিপির পরবর্তী নেতা হতে পারেন পার্লামেন্টের স্পিকার উ সুই মান, যিনি পিউ বোগো আসনে নির্বাচন করেছেন।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় ১৯৯১ সালে সু চি শান্তিতে নোবেল পেলে এনএলডি জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে আসে। ২০১২ সালের উপ-নির্বাচনে ৪৫টি আসনের মধ্যে ৪৩টিতে জয়ী হয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দল হয় তার দল।
এর আগে ২০১০ সালের ৭ নভেম্বর পার্লামেন্ট নির্বাচন হলেও তাতে অংশ নেয়নি এনএলডি। ইউএসডিপি তখন থেকেই ক্ষমতায় রয়েছে।
বর্তমান পার্লামেন্টের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ৩০ জানুয়ারি। নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে।