ঢাকা : বিস্ময়কর সৌন্দর্যের নাম নাফাখুম ঝর্ণা। মাথার উপরে খোলা আকাশে রৌদ্র-ছায়ার লুকোচুরি খেলা আর নিচে খরস্রোতা নদীর ধেয়ে আসা কল্লোলধ্বনি। চারিদিকে পাহাড়-পর্বত, নদী ও পাথুরে খাল দেখে আপনার মনে হতেই পারে যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা কোনো ছবি চোখের সামনে ভাসছে। বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি জেলা বান্দরবান। ভ্রমণ পিয়াসী মানুষরা প্রায়ই ছুটে যান বান্দরবানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। বান্দরবানের একটি উপজেলার নাম থানচি আর এই থানচিতেই অবস্থিত রূপের রানী নাফাখুম ঝর্ণা। রেমাক্রি নদীতে এক ধরনের মাছ পাওয়া যায়- যার নাম নাফা। মাছটি সব সময় স্রোতের বিপরীতে চলে। স্থানীয় মারমা ভাষায় খুম অর্থ ঝর্ণা। এ থেকেই নাফাখুম ঝর্ণার নামকরণ হয়েছে।
কিভাবে যাবেন সৌন্দর্যের রাণী নাফাখুমে
আপনি যদি ঢাকা থেকে যেতে চান তবে প্রথমে হাতে নিতে হবে ঢাকা টু বান্দরবানের একটি বাস টিকেট। রাতে রওনা হলে সব ঠিক ঠাক থাকলে পরদিন সকালে পৌঁছানো যাবে। বান্দরবান থেকে থানচি যেতে হবে চাঁদের গাড়িতে বা লোকাল গাড়িতে। সময় লাগবে ৪ ঘণ্টার মত। দুপুর ১ টার মধ্যে যাওয়া যাবে থানচিতে। রাত সেখানে কাটিয়ে পরদিন সকালে রওনা দিতে হবে নাফাখুমের উদ্দেশ্যে। থানচি বাজার থেকে নাফাখুম যাবার জন্য নৌকায় করে তিন্দু বাজার, তারপর রেমাক্রি বাজারে পৌঁছাতে হবে। নৌকা ভাড়া নিতে পারেন তবে লোকাল ভাবে গেলে ভাড়া অনেক কম পড়বে। সময় লাগবে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার মতো। রেমাক্রি থেকে নাফাখুম ঝর্ণা পায়ে হেঁটে ভেতর দিকে আরও প্রায় দুই ঘণ্টার পথ। ভাগ্য ভালো হলে প্রাকৃতিক বাথটাবে শরীর এলিয়ে গোসল করার সুযোগও পেয়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ঝর্ণায় পানির পরিমাণ কম থাকতে হবে।
নাফাখুম থেকে ফিরে রেমাক্রি বাজারে রাত কাটাতে হবে। পাহাড়ি লোকজন এবং খাবার হোটেল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে থাকার ব্যবস্থা করে নিতে হবে নিজেদের। রেমাক্রি থেকে ফেরার সময় একইভাবে লোকাল অথবা ভাড়া নৌকায় করে থানচি ফেরত আসা যাবে। রাস্তা দুর্গম হলেও অপরূপ সুন্দর নাফাখুম ঝর্ণা। যাওয়ার পথটি একটু কঠিন কিন্তু ভাবনার চেয়ে বেশি সুন্দর রূপ তার। অভুতপূর্ব এই ঝর্ণা ও পাহাড়ি পথের সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করে তুলবে। মন ভোলানো সে রূপের ছটা চোখে লেগে থাকবে সারা জীবন।
যারা হাজার টাকা ব্যয় করে বিদেশের মাটিতে সুন্দরকে খুঁজে বেড়ান তাদের জন্য নাফাখুম চ্যালেঞ্জ ছাড়া আর কিছুই নয়। নিজের দেশে এমন সুন্দর জায়গা থাকতে পারে তা বিশ্বাস করাই আপনার কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে। পাহাড়, নদী আর পাথুরে খাল দেখে মনে হবে যেন কোনো এক ছবিতে আঁকা পাতায় পাতায় হাঁটছি। ঝর্ণার পানির গমগম করে ঝরে পড়ার শব্দে চারদিক মুখরিত। বর্ষার সময় ঝর্ণার আকার বড় হয়। আর শীতের দিনে তা ক্ষীণ হয়ে যায়। উপর হতে আছড়ে পড়া পানির আঘাতে ঝর্ণার চারিদিকে সৃষ্টি হয় ঘন কুয়াশার। উড়ে যাওয়া জলকনা বাষ্পের সঙ্গে ভেসে ভেসে শরীরে এসে পড়ে। রোমাঞ্চকর সে অনুভূতি। একে বাংলার নায়াগ্রা ফলস বললে ভুল হবে না। দুপাশের সবুজ পাহাড়ী বন আর পাথুরে ভূমি নাফাখুম ঝর্ণাকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা, করেছে আরও আকর্ষণীয়। পাথরের ফাঁকে ছোপ ছোপ সবুজ ঘাসের থোকা সৌন্দর্যের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুন।