মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে দুই পুলিশ সদস্যকে হত্যার পর চেকপোস্টে কঠিন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্টের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, গুলশান ও বনানীর কূটনৈতিকপাড়ার চেকপোস্টে ছিল কড়া সতর্কতা। সরেজমিন রাজধানীর কয়েকটি চেকপোস্ট ঘুরে দেখা গেছে, তল্লাশির সময় দুই পুলিশ সদস্য ‘অনগার্ডে’ অস্ত্র তাক করে সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। মোটরসাইকেল আরোহীদের বেশি তল্লাশি করা হচ্ছে। এ ছাড়া কারও হাতে ব্যাগ থাকলে তাকেও থামিয়ে তল্লাশি করতে দেখা যায়। দুই পুলিশ সদস্যকে হত্যার পর চেকপোস্ট ঘিরে পুলিশের তৎপরতা বাড়াতে এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে তল্লাশিকালে কোনো পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হলে গুলি ছোড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বিবিসিকে বলেছেন, তল্লাশি চৌকিতে হামলা হলে পাল্টা জবাবের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (কনফিডেনসিয়াল) মনিরুজ্জামানের স্বাক্ষরে ছয়টি বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো পুলিশ সদস্যদের ওপর কোনো আক্রমণ হলে বিধি মোতাবেক বল প্রয়োগ করবেন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার .করবেন। প্রতি চেকপোস্টে অন্তত পাঁচজন দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়। এছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে নয়; সমন্বিতভাবে চেকপোস্টে সতর্ক থাকার নির্দেশনা আসে। এর আগে গত বুধবার
ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বলা হয়, তল্লাশি চৌকিতে আক্রান্ত হলেই পূর্বানুমতি ছাড়া গুলি করতে পারবেন পুলিশ সদস্যরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এফডিসি থেকে হাতিরঝিলে ঢুকতেই পুলিশের একটি চেকপোস্ট চোখে পড়ে। সেখানে অনগার্ড অবস্থায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন পুলিশের ছয় সদস্য। এই চেকপোস্টে দু’জন এএসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তা ছাড়াও চার কনস্টেবল ছিলেন। পোশাকের পাশাপাশি সবার পরনে ছিল বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। দুই হাত উঁচু করে দু’জন পুলিশ সদস্য তল্লাশি করছিলেন। পাশেই আরও দুই সদস্য অস্ত্র তাক করে ‘অনগার্ডে’ ছিলেন।
চেকপোস্টের সার্বিক দায়িত্বে থাকা এএসআই খলিলুর রহমান সমকালকে জানান, তাদের পালায় সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবেন। সন্দেহভাজনদের তল্লাশির সময় ডিএমপির নির্দেশনা কঠোরভাবে পালন করা হচ্ছে। সবার আগে নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে।
গুলশান লিংক রোডে আড়ংয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও ছয় পুলিশ সদস্য চেকপোস্টে তল্লাশি করছেন। তারাও জানান, ডিএমপি থেকে তাদের যে ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা তারা পালন করছেন। তারা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন ‘অনগার্ডে’ থেকে তল্লাশি করার বিষয়ে। এই চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা এএসআই শাহীন আলম বলেন, চেকপোস্টে তল্লাশির সময় ‘অনগার্ডে’ থেকে দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়গুলো তদারক করছেন।
গুলশানে পুলিশ প্লাজার সামনে পুলিশের একটি চেকপোস্টে পাঁচজন আর্মড পুলিশ সদস্য ও গুলশান থানার একজন এএসআই দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেখানে দেখা যায়, হাতিরঝিল থেকে গুলশানে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে প্রতিটি যানবাহন চেকপোস্টে থামানো হয়। সন্দেহ হলেই তল্লাশি করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, পুলিশ ‘অনগার্ডে’ থেকে দায়িত্ব পালন করছে। চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনের সময় কেউ অবহেলা করছেন কি-না, তা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদারক করছেন।
শুধু পুলিশই নয়, র্যাবও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রয়োজন অনুযায়ী চেকপোস্ট বসিয়ে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। র্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ বুধবার রাতে রাজধানীতে কয়েকটি চেকপোস্টে তল্লাশি কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, নিজের ও অন্যের জীবন রক্ষায় এবং রাষ্ট্রের ও অন্যের সম্পত্তি রক্ষায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে কোনো মুহূর্তে গুলি করতে পারবে। এ জন্য বিশেষ নির্দেশনার প্রয়োজন নেই। বিমানবন্দরগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুসংহত করা হয়েছে।
মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যরা জানান, সম্প্রতি দুর্বৃত্তরা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে। তাই সন্দেহ হলেই মোটরসাইকেল আরোহীদের তল্লাশি করা হচ্ছে। এ ছাড়া সিএনজি ও মাইক্রোবাসে তল্লাশির ক্ষেত্রেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নিজের নিরাপত্তা, জনসাধারণের নিরাপত্তা ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় প্রয়োজনে গুলি করার কঠোর নির্দেশনা তারা পেয়েছেন। চেকপোস্টগুলোতে সংশ্লিষ্ট জোনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিনে এসে তদারক করছেন।
গত ২২ সেপ্টেম্বর গাবতলীতে তল্লাশির সময় এএসআই ইব্রাহীম মোল্লাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে এক দুর্বৃত্ত পালিয়ে যায়। এ ঘটনার দুই সপ্তাহের মধ্যে আশুলিয়ায় গত বুধবার সকালে চেকপোস্টে শিল্প পুলিশের কনস্টেবল মুকুল হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় আরেক কনস্টেবল নূরে আলম গুরুতর আহত হন। এ দুই ঘটনায় তাদের সহকর্মীরা এক রাউন্ড গুলিও ছোড়েনি।