দলভিত্তিক পৌরসভা নির্বাচন আয়োজনে নতুন আচরণবিধি ও নির্বাচন পরিচালনাবিধি প্রণয়ন করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের মেয়র, সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের নির্বাচনী প্রচারের বাইরে রাখা হচ্ছে। তবে সংসদ সদস্যরা সরাসরি সরকারের কোনো সুযোগ গ্রহণ না করায় তাদের প্রচারে নামার বিষয়টি ইসি আটকাতে পারবে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
ইসির ঊর্ধ্বতনরা জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহেই আচরণবিধির খসড়া চূড়ান্ত করার চেষ্টা চলছে। মধ্য নভেম্বরেই ২৪৫টি পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে ও ডিসেম্বরের শেষে একযোগে ভোট নেওয়া হবে। সংশোধিত নতুন আচরণবিধিতে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও কুৎসা রটনার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ সমকালকে জানিয়েছেন, হাতে সময় কম। তাই চলতি সপ্তাহেই আচরণবিধি ও নির্বাচন পরিচালনা বিধি সংশোধনের কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। ইসি কার্যালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, দলভিত্তিক পৌরসভার গেজেট পাওয়া গেছে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে কমিশন সদস্য ও নির্বাচন-সশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কয়েক দফা বৈঠক করেন। এর আগে আচরণবিধি নিয়ে বৈঠক করেন চার কমিশনার। বিকেলে পুনরায় কমিশনের সদস্যরা বৈঠকে বসেন। সেখানে নির্বাচন পরিচালনাবিধি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। দু-একদিনের মধ্যে আচরণবিধি চূড়ান্ত হবে।
নির্বাচন পরিচালনাবিধিতে যা আছে_ প্রার্থীদের মনোনয়নের ক্ষেত্রে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অথবা দলের জেলা শাখা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত চিঠি নির্বাচনবিধিতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়রের জন্য ২০০, কাউন্সিলরের জন্য ১০০ এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলরের জন্য ৫০ জন ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
খসড়া আচরণবিধি_ এতে বলা হয়েছে, সরকারি সুবিধাভোগী ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ব্যক্তি সরকারি কর্মসূচিতে গিয়ে নির্বাচনী কর্মকা ে অংশ নিতে পারবেন না। এসব ব্যক্তি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিলে সরকারি গাড়ি ব্যবহার বা অন্যান্য সরকারি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না এবং ভোট দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো কাজে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না।
একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সংজ্ঞায় স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য ও সিটি করপোরেশনের মেয়রদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যানদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের বিধিনিষেধ তৈরি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ইসি-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সংজ্ঞায় যাদেরকে রাখা হয়েছে তাদের মধ্যে এমপিরা সরকারের গাড়ি বা অন্য সুবিধা ভোগ করেন না। তাই এই সংজ্ঞা দিয়ে তাদের আটকানো যাবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে একজন কমিশনার বলেন, উপজেলা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে কমিশন এমপিদের নির্বাচনী প্রচারের বাইরে রাখার চেষ্টা করছে। কারণ ওই নির্বাচনে এমপিদের বিরুদ্ধে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে প্রভাব সৃষ্টির ব্যাপক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নির্বাচন এলাকার কোনো ধরনের উন্নয়ন কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারবেন না। কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কোনো ব্যক্তি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তিনি সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদ বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দ ে দ িত হবেন। কোনো প্রার্থী বা তার এজেন্ট নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে এবং তা কমিশনের তদন্তে প্রমাণিত হলে কমিশন সে ব্যক্তির প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে।
নির্বাচনী প্রচারে কোনো প্রার্থী নিজের ছবি ও প্রতীক ব্যতীত অন্য কারও ছবি ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী পোস্টার বা লিফলেটে দলীয় প্রধানের ছবি ব্যবহার করতে পারবেন।
পথসভা ও ঘরোয়া সভা ছাড়া কোনো ধরনের জনসভা বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। সাধারণ মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে কোনো ধরনের পথসভা বা সভামঞ্চ তৈরি করা যাবে না। পথসভা বা ঘরোয়া সভা করতে হলে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে প্রস্তাবিত সভার স্থান ও সময় সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে।