আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় পৌরসভা নির্বাচনের আগে আইন সংশোধনের প্রম্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর তা কার্যকরে অধ্যাদেশের অপেক্ষায় ছিল নির্বাচন কমিশন।
ওই অধ্যাদেশ জারি হয়েছে বলে সোমবার রাতে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
এরপর ইসি সচিব সিরাজুল ইসল বলেন, “অধ্যাদেশটি হাতে পাওয়ার পর আমরা বিধিমালা প্রণয়নসহ প্রয়োজনীয় অন্য সব কাজ দ্রুত সারব, যাতে মধ্য নভেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করতে পারি।”
আইন সংশোধনের ফলে এখন পৌরসভা নির্বাচনেও একটি দলের একজন প্রার্থী থাকবেন। নৌকা, ধানের শীষ, লাঙলের মতো প্রতীকগুলো ব্যবহার হবে এই নির্বাচনেও। দলের সমর্থনের বাইরে কেউ প্রার্থী হতে চাইলে তাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হবে।
এতদিন ধরে স্থানীয় নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে হলেও দলীয় আবহ থেকে মুক্ত ছিল না। এই রাখঢাক না রাখতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়।
স্থানীয় নির্বাচনে দলীয়ভাবে করার বিপক্ষে বিএনপির অবস্থান রয়েছে। কয়েকটি নাগরিক সংগঠনও আপত্তি জানিয়ে বলছে, এটা হলে নির্দলীয় প্রার্থীরা ভোটে আসতে উৎসাহ হারাবে, কারণ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে বেশ কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হয়।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর (সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে করতে গত ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভায় প্রতিটি আইন সংশোধনের আলাদা প্রস্তাব অনুমোদন করে।
পৌরসভা নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংশোধিত আইন কার্যকর করা হবে বলে তখন জানানো হয়েছিল। অন্য আইনগুলো সংসদে পাস করানো হবে। ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন (পৌরসভা) (সংশোধন) আইন-২০১৫’ পরে সংসদে পাস করা হবে।
পৌরসভা নির্বাচনে এখন প্রতীক নিয়ে ভোটে দাঁড়াবে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীরা
ডিসেম্বরে পৌরসভা এবং জানুয়ারিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করার প্রস্তুতি আগে থেকে নিয়ে আসছিল ইসি। দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হলে অল্প সময়ে সব কাজ সারাটাকেও চ্যালেঞ্জ মনে করছিলেন নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
দলীয়ভাবে নির্বাচনের জন্য নতুন করে বিধিমালা তৈরির কাজ কিছুটা এগিয়ে রাখলেও অধ্যাদেশ না পাওয়ায় তা চূড়ান্ত করতে পারছিল না ইসি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ রোববারই বলেছিলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে পৌর নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকায় কয়েকদিনের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি না হলে আগের মতো ভোট না করার কোনো বিকল্প তাদের কাছে থাকবে না।
তবে সেইসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, “যেহেতু জেনেছি সরকার অধ্যাদেশ করবে, সেজন্য বিধিমালা সংক্রান্ত কিছু কাজ এগিয়ে রেখেছি আমরা। যাতে অধ্যাদেশ হাতে পেলেই কুইকলি তা জারি করা যায়।”
২ কোটিরও বেশি ব্যালট
দলভিত্তিক স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগের মধ্যে তিনটি পদে ব্যালট পেপার ছাপানো নিয়ে সরকারি তিনটি প্রেসের সঙ্গে সোমবারই বৈঠক করেছে ইসি।
অধ্যাদেশ হচ্ছে ধরে নিয়ে দুপুরের ওই বৈঠকে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে নির্বাচন সামগ্রী ছাপানোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়।
ইসির সহকারী সচিব (ক্রয় ও মুদ্রণ) সৈয়দ গোলাম রাশেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নির্বাচন কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, ম্যানুয়েল, নির্দেশিকা, ব্যালট পেপার ও অন্যান্য সামগ্রী মুদ্রণ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এ সভা হয়েছে।
সভায় বিজি প্রেস, বাংলাদেশ নিরাপত্তা মুদ্রণালয়, গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং প্রেস-এর প্রতিনিধি এবং মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ স্টেশনারি অফিসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, দলভিত্তিক নির্বাচনের উদ্যোগ চলায় এখনও ব্যালট পেপার ছাপানো হয়নি। সাধারণত নির্দলীয় নির্বাচনের সময় তফসিলের আগেই স্থানীয় সরকারের ব্যালট পেপার মুদ্রণ সেরে ফেলা হয়।
ডিসেম্বরে ভোট অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে কী পরিমাণ ব্যালট পেপার লাগবে, কত সময়ে ছাপাতে হবে, ওই সময়ে সব ব্যালট পেপার ছাপানো সম্ভব কি না,তা যাচাই শুরু হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক কর্মকর্তা বলেন, কয়েক কোটি ব্যালট পেপার ছাপানো একটু কঠিন হবে, তবে অসম্ভব নয়।
“এখন প্রেসগুলো আমাদের চাহিদা পর্যালোচনা করে কয়েকদিনের মধ্যে তা অবস্থান জানাবে।”
বর্তমানে বাংলাদেশে তিন শতাধিক পৌরসভা রয়েছে। এরমধ্যে ডিসেম্বরে ২৪০টিতে ভোটের প্রস্ততি রয়েছে ইসির, কেননা ওই সময়ে এগুলোর মেয়াদ ফুরোবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২৪০টি পৌরসভায় মোট ভোটার রয়েছে ৭৪ লাখ ৬২ হাজার ৩০৬ জন।
এর মধ্যে মেয়র পদে প্রতিটি পৌরসভায় গড় ব্যালট সংখ্যা ৩১ হাজার ৯২টি, সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে গড় ব্যালট সংখ্যা ২ হাজার ৬৪০টি ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৭ হাজার ৯২১টি গড় ব্যালট ছাপতে হবে।
“সেক্ষেত্রে মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরের জন্য ২ কোটি ১০ লাখের বেশি ব্যালট পেপার ছাপতে হবে,” বলেন এক কর্মকর্তা।
গড়ে প্রতি পৌরসভায় সাধারণ ওয়ার্ড ১১টি, সে হিসেবে নির্বাচন উপযোগী পৌরসভায় ওয়ার্ড থাকবে ২ হাজার ৮২৬টি। মোট পদ থাকবে মেয়র ২৪০, সাধারণ কাউন্সিলর ২ হাজার ৬৪০টি ও সংরক্ষিত ৮৮০টি (মোট ৩৭৬০টি)।