নিজ দলের হেভিওয়েট প্রার্থীদের চাপে ও ঋণখেলাপির কারণে বিএনপি প্রার্থীর সরে দাাঁড়ানো!

Slider বিচিত্র


নারায়ণগঞ্জ: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী মাসুদুজ্জামান মাসুদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ ঘোষণা দেন। এ ঘটনায় তার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নিরাপত্তা ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে তিনি ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ালেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এর পেছনে আরো কোনো কারণ আছে কিনা।

স্থানীয় সূত্রের দাবি- শুধু নিরাপত্তার কারণেই মাসুদ নির্বাচন করতে চান না এমনটা নয়, তার সরে দাঁড়ানোর পেছনে আরো কারণ রয়েছে। মাসুদুজ্জামান মাসুদের ঘনিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, একজন ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতি হিসেবে তার অনেক ব্যাংক ঋণ থাকে। নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে তা হালনাগাদ না হলে তার প্রার্থিতা ঠিকবে না। মাসুদুজ্জামানের এমন কোনো সমস্যা থাকতে পারে। এছাড়া তাকে দল প্রাথমিক মনোয়ন দিলেও এই আসনের অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্তত তিনজন নেতা তার মনোনয়ন মেনে নিতে পারেননি। মাসুদ ভেবেছিলেন নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এ নিয়ে একটি সমঝোতা হবে, কিন্তু মাঠের পরিস্থিতি ভিন্ন হওয়ায় তিনি হয়তো ভোটের মাঠে নিরাপদ মনে করছেন না।

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে দু’টি কারণ উল্লেখ করেন মাসুদুজ্জামান মাসুদ। প্রথমত, নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা প্রকাশ করেন। দ্বিতীয়ত, তার পরিবারও চায় না তিনি ভোটের মাঠে থাকুন। তবে মাঠে চাউর ভিন্ন কথা। কেউ কেউ বলছেন, মাসুদুজ্জামানের একটি ব্যাংক ঋণ সংক্রান্ত জটিলতা বিদ্যমান। যা তিনি নিরসন করতে পারছেন না। আর এ জটিলতা নিরসন না হলে নির্বাচনে তিনি অযোগ্য প্রার্থী ঘোষিত হতে পারেন। সে আশঙ্কা থেকে আগ থেকেই তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, মাসুদুজ্জামানকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার পর থেকে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বড় অংশটি বিরোধিতা করে আসছে। বিরোধিতায় মনোনয়নপ্রত্যাশী হেভিওয়েট তিন সম্ভাব্য প্রার্থীও রয়েছেন। তারা হলেন- এ আসনে বিএনপি থেকে তিনবারের সাবেক এমপি আবুল কালাম, মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও শিল্পপতি আবু জাফর আহমেদ বাবুল। তাদের জোটবদ্ধ বিরোধিতার কারণে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে দলীয় নেতাকর্মীরা। তারা জোটবদ্ধ হয়ে ঘোষণা দিয়েছেন, মাসুদুজ্জামানকে বাদ দিয়ে তাদের মধ্যে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে তারা সবাই একযোগে সেই প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করবে। নির্বাচন কমিশন তফশিল ঘোষণা করার পরও কেন্দ্র থেকে এ বিরোধ মিটাতে জোরালো কোনো উদ্যাগ নেয়া হয়নি। ফলে ক্ষোভ থেকে মাসুদুজ্জামান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

গত ২২শে সেপ্টম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভীকে ফুল দিয়ে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগদান করেছিলেন মডেল ডি ক্যাপিটাল গ্রুপের মালিক ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মাসুদুজ্জামান মাসুদ। তবে, আগে থেকেই তিনি বিএনপিপন্থি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অল্পদিনের মধ্যেই পেয়েও যান বিএনপি’র মনোনয়ন। তবে ভোটের লড়াইয়ের আগেই দিলেন সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা।

এ বিষয়ে মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, হঠাৎ মাসুদুজ্জামানের নির্বাচন থেকে সরে যাওয়াটা দায়িত্বহীনতার পরিচয়। আমরাও মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলাম। দল তাকে দিয়েছে। কিন্তু তিনি সরে গিয়ে কাজটা ভালো করেননি। তার অনেক সমস্যা থাকতে পারে। ঋণখেলাপি হতে পারে। সেটা তিনি আগেই দলকে বলতে পারতেন। এখন দল তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।

সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন মাসুদুজ্জামান:
নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মাসুদুজ্জামান মাসুদ বলেন, নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণার পর থেকেই পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন। ঢাকায় ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনার পর তারা আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরিবারের অনুরোধেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বলে জানান বিএনপি প্রার্থী। তিনি বলেন, প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়টি জানাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। সংবাদ সম্মেলনেই এ কথা প্রথম জানালাম। বিষয়টি দলকেও বুঝিয়ে বলবো। মাসুদুজ্জামান বলেন, আপনাদের অনেকেরই মন ভেঙে যাবে। আমি আসলে নির্বাচন করবো না, আমি উদ্বিগ্ন। আমি আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি জানি, এটা কী পরিমাণ কষ্ট আপনাদের জন্য আশার জায়গা ছিল, আশাহত হতে হচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত নেয়া আমার জন্য সহজ ছিল না। ব্যক্তিগত কারণ এবং কিছু পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। একজন সমাজকর্মী হিসেবে আজীবন আপনাদের পাশে থাকবো। আমি জানি, কি কাজ করতে যাচ্ছি। এটা অনেকেরই কাছে তীরে এসে ফিরে যাওয়ার মতো অবস্থা। আমার কাছেও এটা মনে হচ্ছে। অনেকেরই বুক ফেটে যাচ্ছে। আমার সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা নেই। আমি নির্বাচন করবো না। আমি মনোনয়ন কিনবো না। এজন্য আমি সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আমার পরিবারকে সময় দিতে পারি না। অনেক রাত হয়ে যায় কিন্তু নির্বাচনের কারণে আমি বাড়ি যেতে পারি না। আমার পরিবার চাচ্ছে না। আমার পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত ব্যথিত এবং ভীত। এর বাহিরেও কিছু নিরাপত্তা ইস্যু আছে। এটা বিশদ বর্ণনা দেয়ার মতো নয়। পরিবেশটাই নেতিবাচক। সবকিছু বিবেচনা করে আমি নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তবে, মাসুদুজ্জামান মাসুদের হঠাৎ প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণায় আশ্চর্য হয়েছেন তার অনুসারী নেতা-কর্মীরাও। তাদের কেউ কেউ সংবাদ সম্মেলনে মাসুদের প্রতি ক্ষোভও প্রকাশ করেন। মহানগর বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক চৌধুরী মাসুদুজ্জামানকে উদ্দেশ করে বলেন, বিএনপি’র নেতাকর্মীদের এভাবে ফেলে চলে যেতে পারেন না আপনি। আমরা অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আপনার পাশে নেমেছি। আপনার এ সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। জিয়া সমাজকল্যাণ পরিষদের মহানগর শাখার সদস্য সচিব নাঈম খন্দকার বলেন, কিছুক্ষণ আগেও শহীদনগরে তিনি পূর্ব-নির্ধারিত একটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। সেখান থেকে এসেই এমন ঘোষণা দিলেন। আমরা এ সিদ্ধান্তে আশ্চর্য হয়েছি। আমরা কিছুই জানতাম না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *