চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় শাহজালাল হলের তৃতীয় তলার বারান্দায় রামদায় শাণ দিতে দেখা যায় কয়েকজন যুবককে। ছবিটি বেলা একটায় তোলা l প্রথম আলোভর্তি-ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানানো নিয়ে গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে চার পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি আবাসিক হলে তল্লাশি চালিয়ে ৩৫ জন নেতা-কর্মীকে আটক এবং দুটি অস্ত্র, প্রায় ৭০টি রামদাসহ কয়েক বস্তা পাথর ও লাঠিসোঁটা উদ্ধার করে পুলিশ।
ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যেই গতকাল সকালে স্নাতক প্রথম বর্ষের প্রকৌশল অনুষদ এবং বিকেলে মৎস্য ও সমুদ্রবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার কারণে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে ভয়ে এদিক-ওদিক ছুটতে থাকেন। তবে গতকাল সংঘর্ষ হলেও পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা চলবে বলে জানান উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।
এদিকে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (চুয়েট) গতকাল ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু এবং সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বীর অনুসারীরা গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর এলাকায় ভর্তি-ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে পৃথকভাবে অবস্থান নেন। এ সময় লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় রূপ নেয়। এ সময় সভাপতি পক্ষের অনুসারীরা সাধারণ সম্পাদক পক্ষকে ধাওয়া দিয়ে মূল ফটক থেকে বের করে দেয়। কিছুক্ষণ পর সভাপতির অনুসারী নেতা-কর্মীরা শাহজালাল হলের সামনে এবং সাধারণ সম্পাদক পক্ষের নেতা-কর্মীরা শাহ আমানত হল এলাকায় অবস্থান নেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে আবারও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পুলিশ ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে দুই পক্ষকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় নেতা-কর্মীদের ছোড়া ইটে হাটহাজারী থানার ওসি মোহাম্মদ ইসমাইল, পুলিশ সদস্য নুরে আলম, এনামুল হক এবং ছাত্রলীগের দুই পক্ষের অন্তত ২০ নেতা-কর্মী আহত হন।
পরীক্ষা দিতে এসে গতকাল ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনেক শিক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র উঁচিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে যেতে দেখা যায়। ছবিটি বেলা দেড়টার দিকে তোলা l প্রথম আলোএ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ ছাত্রলীগের দুই পক্ষকে বারবার শান্ত হওয়ার অনুরোধ করে। পরে বেলা সোয়া একটার দিকে দুটি হলে ব্যাপক লাঠিপেটা করে শুরু করে পুলিশ। তখন শাহজালাল হলের সভাপতি পক্ষের নেতা-কর্মীরা এবং শাহ আমানত হলে সাধারণ সম্পাদক পক্ষের নেতা-কর্মীরা অবস্থান করছিলেন। ছাত্রলীগের দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন নেতা লাঠিপেটার শিকার হন। এ সময় নেতা-কর্মীদের ছোড়া ইটে পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (সদর) মো. শহীদুল্লাহ হাতে আঘাত পান।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী বলেন, প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর উসকানিতে এ ঘটনা ঘটেছে। যারা বিশৃঙ্খলা করেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। সভাপতি পক্ষের সঙ্গে হয়তো প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর যোগসাজশ থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে সভাপতি আলমগীর টিপু বলেন, সংগঠনের জুনিয়র কর্মীদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, হয়তো ছাত্রলীগের মধ্যে ছাত্রশিবিরের এজেন্ট ঢুকে থাকতে পারে। তারাই হয়তো ছোট ঘটনাটি লম্বা করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কাজী মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনায় পুলিশ সদস্যসহ ৬৬ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষে আহত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ১৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা হয়তো অন্য কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
জানতে চাইলে পুলিশের হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মশিউদৌল্লাহ রেজা প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৫ জনকে আটক করা হয়েছে। শাহজালাল ও শাহ আমানত হলে তল্লাশি চালিয়ে একটি এলজি, একটি কাটাবন্ধুক, প্রায় ৭০টি রামদাসহ কয়েক বস্তা লাঠিসোঁটা ও পাথর উদ্ধার করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা ও ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে দায়ী ছাত্রদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভর্তি-ইচ্ছুক ও তাঁদের অভিভাবকদের ভয়ের কিছু নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আমরা বরদাশত করব না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আজ (সোমবার) অসাধারণ ভূমিকা রেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন, ভবিষ্যতে তাঁরা আরও কঠোর হবেন।’
চুয়েট বন্ধ ঘোষণা: ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের জের ধরে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এ আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বিকেল পাঁচটার মধ্যে ছাত্ররা হল ছেড়ে যান। মঙ্গলবার (আজ) সকাল ১০টার মধ্যে ছাত্রীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। দুপুরের দিকে ছাত্রলীগের দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় তিন কর্মীকে কুপিয়ে আহত করা হয়। তাঁরা হলেন রিয়াজ উদ্দিন, ইশরাক হোসেন ও মো. সানজিদ। তাঁদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক আবদুল হামিদ জানান, তিনজনের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কোপের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, নাহিদ পারভেজ ও শাহনেওয়াজ তানভীরের অনুসারীদের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনায় গত শনিবার রাতে দুই দফায় সংঘর্ষ হয়। এর জের ধরে রোববার দুপুরেও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়েন করা হয়। কিন্তু গতকাল পুলিশের উপস্থিতিতেই দুই পক্ষ আবারও সংঘর্ষে জড়ায়।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ গতকাল রাতে জানান, ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ৭৯টি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি।
এদিকে হঠাৎ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইনজামাম-উল-হক রাতে প্রথম আলোকে জানান, আগামী বুধবার দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের শেষ পরীক্ষা ছিল তাঁর। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা হওয়ায় এখন পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. জাহাঙ্গীর আলম গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তিন দিন ধরে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল তারা আবারও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় শাহজালাল হলের তৃতীয় তলার বারান্দায় রামদায় শাণ দিতে দেখা যায় কয়েকজন যুবককে। ছবিটি বেলা একটায় তোলা l প্রথম আলোভর্তি-ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানানো নিয়ে গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে চার পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি আবাসিক হলে তল্লাশি চালিয়ে ৩৫ জন নেতা-কর্মীকে আটক এবং দুটি অস্ত্র, প্রায় ৭০টি রামদাসহ কয়েক বস্তা পাথর ও লাঠিসোঁটা উদ্ধার করে পুলিশ।
ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যেই গতকাল সকালে স্নাতক প্রথম বর্ষের প্রকৌশল অনুষদ এবং বিকেলে মৎস্য ও সমুদ্রবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার কারণে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে ভয়ে এদিক-ওদিক ছুটতে থাকেন। তবে গতকাল সংঘর্ষ হলেও পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা চলবে বলে জানান উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।
এদিকে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (চুয়েট) গতকাল ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু এবং সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বীর অনুসারীরা গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর এলাকায় ভর্তি-ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে পৃথকভাবে অবস্থান নেন। এ সময় লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় রূপ নেয়। এ সময় সভাপতি পক্ষের অনুসারীরা সাধারণ সম্পাদক পক্ষকে ধাওয়া দিয়ে মূল ফটক থেকে বের করে দেয়। কিছুক্ষণ পর সভাপতির অনুসারী নেতা-কর্মীরা শাহজালাল হলের সামনে এবং সাধারণ সম্পাদক পক্ষের নেতা-কর্মীরা শাহ আমানত হল এলাকায় অবস্থান নেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে আবারও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পুলিশ ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে দুই পক্ষকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় নেতা-কর্মীদের ছোড়া ইটে হাটহাজারী থানার ওসি মোহাম্মদ ইসমাইল, পুলিশ সদস্য নুরে আলম, এনামুল হক এবং ছাত্রলীগের দুই পক্ষের অন্তত ২০ নেতা-কর্মী আহত হন।
পরীক্ষা দিতে এসে গতকাল ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনেক শিক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র উঁচিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের দিকে যেতে দেখা যায়। ছবিটি বেলা দেড়টার দিকে তোলা l প্রথম আলোএ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ ছাত্রলীগের দুই পক্ষকে বারবার শান্ত হওয়ার অনুরোধ করে। পরে বেলা সোয়া একটার দিকে দুটি হলে ব্যাপক লাঠিপেটা করে শুরু করে পুলিশ। তখন শাহজালাল হলের সভাপতি পক্ষের নেতা-কর্মীরা এবং শাহ আমানত হলে সাধারণ সম্পাদক পক্ষের নেতা-কর্মীরা অবস্থান করছিলেন। ছাত্রলীগের দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন নেতা লাঠিপেটার শিকার হন। এ সময় নেতা-কর্মীদের ছোড়া ইটে পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (সদর) মো. শহীদুল্লাহ হাতে আঘাত পান।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী বলেন, প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর উসকানিতে এ ঘটনা ঘটেছে। যারা বিশৃঙ্খলা করেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। সভাপতি পক্ষের সঙ্গে হয়তো প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর যোগসাজশ থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে সভাপতি আলমগীর টিপু বলেন, সংগঠনের জুনিয়র কর্মীদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, হয়তো ছাত্রলীগের মধ্যে ছাত্রশিবিরের এজেন্ট ঢুকে থাকতে পারে। তারাই হয়তো ছোট ঘটনাটি লম্বা করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কাজী মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনায় পুলিশ সদস্যসহ ৬৬ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষে আহত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ১৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা হয়তো অন্য কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
জানতে চাইলে পুলিশের হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মশিউদৌল্লাহ রেজা প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৫ জনকে আটক করা হয়েছে। শাহজালাল ও শাহ আমানত হলে তল্লাশি চালিয়ে একটি এলজি, একটি কাটাবন্ধুক, প্রায় ৭০টি রামদাসহ কয়েক বস্তা লাঠিসোঁটা ও পাথর উদ্ধার করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা ও ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে দায়ী ছাত্রদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভর্তি-ইচ্ছুক ও তাঁদের অভিভাবকদের ভয়ের কিছু নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আমরা বরদাশত করব না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আজ (সোমবার) অসাধারণ ভূমিকা রেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন, ভবিষ্যতে তাঁরা আরও কঠোর হবেন।’
চুয়েট বন্ধ ঘোষণা: ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের জের ধরে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এ আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বিকেল পাঁচটার মধ্যে ছাত্ররা হল ছেড়ে যান। মঙ্গলবার (আজ) সকাল ১০টার মধ্যে ছাত্রীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। দুপুরের দিকে ছাত্রলীগের দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় তিন কর্মীকে কুপিয়ে আহত করা হয়। তাঁরা হলেন রিয়াজ উদ্দিন, ইশরাক হোসেন ও মো. সানজিদ। তাঁদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক আবদুল হামিদ জানান, তিনজনের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কোপের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, নাহিদ পারভেজ ও শাহনেওয়াজ তানভীরের অনুসারীদের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনায় গত শনিবার রাতে দুই দফায় সংঘর্ষ হয়। এর জের ধরে রোববার দুপুরেও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়েন করা হয়। কিন্তু গতকাল পুলিশের উপস্থিতিতেই দুই পক্ষ আবারও সংঘর্ষে জড়ায়।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ গতকাল রাতে জানান, ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ৭৯টি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি।
এদিকে হঠাৎ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইনজামাম-উল-হক রাতে প্রথম আলোকে জানান, আগামী বুধবার দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের শেষ পরীক্ষা ছিল তাঁর। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা হওয়ায় এখন পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. জাহাঙ্গীর আলম গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তিন দিন ধরে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল তারা আবারও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।