ছবি( টঙ্গীর নিউ মন্নু ফাইন কটন মিলের এজিএমে বক্তব্য রাখছেন মিলের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ )
গাজীপুর: টঙ্গীর মন্নু মিলে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ দুদকের তদন্ত চলমান অবস্থায় এজিএম করার সময় হাত তোলে বোর্ড গঠনের পরিবর্তে ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচনের দাবীতে হট্টগোল হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) মিলের অফিস কক্ষে নিউ মন্নু ফাইন কটন মিলস লিমিটেডে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় ( এজিএম) এই ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, মিলের অফিস কক্ষে সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত এই সভায় অধিকাংশ শেয়ার সদস্য( শেয়ার হোল্ডার) নির্বাচনের মাধ্যমে কোম্পানি বোর্ড পুনর্গঠনের জোর দাবি তোলেন। তবে বর্তমান বোর্ড চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হারুন অর রশিদ সেই দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। এতে সভায় তুমুল হট্টগোল শুরু হয়।
সভায় উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শেয়ার সদস্যরা জানায়, বোর্ড নির্বাচন প্রসঙ্গে আলোচনা শুরু হতেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বোর্ড সদস্যরা দ্রুত সভা সমাপ্ত করেন।
শেয়ার সদস্যদের অভিযোগ, ২০০১ সালে শ্রমিক মালিকানায় হস্তান্তরের পর থেকে রাষ্ট্রায়ত্ব মিলটি ২৪ বছর ধরে প্রায় কার্যক্রমহীন। অবহেলা, অযত্ন ও পরিচর্যার অভাবে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি অচল হয়ে পড়ে আছে। মিলের বিশাল জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা ইজতেমা বাজার ও বিভিন্ন গুদামঘর থেকে প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকা ভাড়া ওঠে; কিন্তু সেই টাকার স্বচ্ছ হিসাব কখনো পাওয়া যায় না। বরং মিলের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রভাবশালী শ্রমিকলীগ নেতা ও তাঁদের ঘনিষ্ঠরা এসব অর্থ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
শেয়ার সদস্যরা বলেন, মিলের দায়িত্ব পেয়ে কিছু শ্রমিক নেতা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। কিন্তু সাধারণ শ্রমিকের (শেয়ার সদস্য) ভাগ্যে কোনো পরিবর্তন হয়নি। হস্তান্তর শর্ত অমান্য করে বিটিএমসি’র রেখে যাওয়া দীর্ঘ মেয়াদি লোনের কিস্তি পরিশোধ না করায় চক্রবর্তী হারে ঝণের বোঝা ভারি হচ্ছে। ২৪ বছর মিল বন্ধ, অথচ লাখ লাখ টাকা ভাড়া তুলে কারা পকেট ভরেছে তার হিসাব নেই। তাই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক বোর্ডই এখন একমাত্র সমাধান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মিলটি হস্তান্তরের পর থেকে কোম্পানির চেয়ারম্যান ও এমডির দায়িত্ব পালন করেন শ্রমিক লীগ নেতা মিজানুর রহমান ও বর্তমান চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের বাবা ও টঙ্গী শিল্পাঞ্চল শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক গণি মিয়া। একই পরিবার ও প্রভাবশালী শ্রমিকলীগের গ্রুপ বছরের পর বছর মিলটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বোর্ডে আংশিক পরিবর্তন এলেও স্থানীয় বিএনপি ও শ্রমিকদল নেতাদের ম্যানেজ করে এখনো পুরোনো প্রভাবশালী মহলই কার্যত নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন।
এ বিষয়ে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি( আব্দুস সালাম বলেন, মিলে ৮০০ শেয়ার হোল্ডার রয়েছে। দুই ভাগে ৫/৬ শত শেয়ার হোল্ডার নিয়ে সভা করা হয়েছে। আজ নির্বাচনের দাবী উঠে। দাবী নিয়ে উপদেষ্টার সাথে বসে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে সভায় জানানো হয়। এ বিষয়ে কোন হট্টগোল হয়নি বলে দাবী তার।
এ বিষয়ে মিলের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, এজিএম-এ কোন হট্টগোল হয়নি। শেয়ার সদস্যরা ব্যালটের মাধ্যমে কোম্পানি বোর্ডের নেতৃত্ব নির্বাচনের দাবি তুলছিলেন। কিন্তু এটি কোম্পানি আইনে নেই। হাত উত্তোলনের মাধ্যমে চেয়ারম্যান ও এমডি নির্বাচিত হয়ে আসছে। তারপরও শেয়ার হোল্ডাররা যদি নির্বাচন চায় তবে সেটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে মিলের দুর্নীতি, সরকারি অর্থ অপচয়, যন্ত্রপাতি নষ্ট করে ফেলা, কোটি টাকার ভাড়া বণ্টনে অনিয়মসহ নানা অভিযোগ প্রকাশিত হওয়ার পর দুদক ইতোমধ্যে ২০০১ সাল থেকে গত ২৪ বছরের সব নথিপত্র তলব করেছে। বিষয়টি দুদকে তদন্ত চলছে।

