প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনের পিতার সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোপের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফ।
শনিবার শাহবাগে নিজের কার্যালয়ে ছেলে ফয়সাল আরেফিন দীপন খুন হওয়ার পর ক্ষোভ প্রকাশ করে আবুল কাসেম বলেন, ছেলে হত্যার বিচার তিনি চান না। যারা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে ‘রাজনীতি’ করছেন তাদের শুভবুদ্ধি উদয়ের প্রত্যাশাই করছেন তিনি।
এই বক্তব্যের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রবীণ অধ্যাপক-লেখককে হত্যাকারীদের আদর্শে বিশ্বাসী বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হানিফ বলেন, ”হত্যাকারীদের আদর্শে বিশ্বাসী বলেই পুত্র দীপন হত্যার বিচার চাননি বাবা আবুল কাসেম ফজলুল হক।”
হানিফের এ বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হলে ফেইসবুকে সোচ্চার প্রতিবাদ করতে দেখা যায় অনেককেই।
চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সারওয়ার ফারুকী তার ফেইসবুক পেইজে লিখেছেন, ”এই এমন এক নিদান কাল যখন কারো কারো গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের সাথে না মিললে, এমনকি সন্তানহারা পিতাকেও প্রকারান্তরে খুনের সহযোগী বানিয়ে ফেলা যায়।”
ব্লগার আজম খান আওয়ামী লীগ নেতা হানিফের বক্তব্যকে ‘অসভ্য ও বর্বর’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ”মাহবুবুল হক হানিফের মত অসভ্য, মূর্খ, ইতর প্রজাতির লোক যে দলের মুখপাত্র সে দলের সর্বনাশ করার জন্য বিএনপি-জামাতের দরকার নাই।”
আরেক ব্লগার সৈকত ভৌমিক লিখেছেন, ”প্রবাদ: ঘরের শত্রু বিভীষণ। উদাহরন: মাহবুব-উল আলম হানিফ। বাক্য গঠন: ঘরের শত্রু বিভীষণ হিসেবে মাহবুব-উল আলম হানিফরা আওয়ামী লীগের … ঘা করিতে ব্যস্ত।”
ফেইসবুকে হানিফের বক্তব্যের সমালোচনায় মো. আসিফ উর রহমান নামে একজন লিখেছেন, ”রাজনীতি করলে বিবেকের সাথে ঘিলুটাও ফেলে দিতে হয়, এই দেশের রিসেন্ট ঘটনাগুলোতে তাদের প্রতিক্রিয়া শুনে বোঝা যায়।”
শওগাত আলী সাগর লিখেছেন, ”শেখ হাসিনার জন্য খুবই মায়া হয়। মাহবুব-উল আলম হানিফদের মতো অমানুষদেরও তার পাশে জায়গা দিতে হয়।”
লীনা পারভিন নামে একজন লিখেছেন, ”জনাব হানিফ, আগে মাথার মল-মূত্র পরিষ্কার করেন, তারপর স্যারের দর্শন সম্পর্কে শিক্ষা নেন, তারপর মন্তব্য করেন। কারও সম্পর্কে ক্ষমতা থাকলেই মতামত দেওয়া যায় না।”
আশরাফ কায়সার নামে একজন লিখেছেন, ”পুত্র হত্যার বিচার না চাওয়ার অধিকারও এখন সন্দেহের তালিকায়, যেন অভিমান, ক্ষোভ, হতাশা প্রকাশেও কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে। নোংরা রাজনীতি আর খারাপ শাসনে অপমানিত হয় মানুষ, কেড়ে নেওয়া হয় তার ক্ষমতা।”
শরীফুল হাসান লিখেছেন, ”মাহবুবুল আলম হানিফকে আপনারা অযথাই গালিগালাজ করছেন। তিনি বলেছেন, দীপনের বাবা হয়তো হত্যাকারীদের আদর্শে বিশ্বাসী। আরে ভাই শুকরিয়া করেন এই কারণে যে, তিনি বলেননি ভিন্ন আদর্শে বিশ্বাসী তার বাবাই এই খুন করেছে।”
সাংবাদিক পুলক ঘটক হানিফের সমালোচনায় লিখেছেন, ”এসব কী বলছেন মাহাবুব-উল আলম হানিফ? অতি ক্ষমতাধর এসব ব্যক্তি মানুষকে ব্যাঙের ছাতা মনে করে নাকি?”
শনিবার সন্ধ্যায় শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে এর কর্ণধার ফয়সল আরেফিন দীপনের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়।
এই প্রকাশনী থেকে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়ের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বইটি প্রকাশিত হয়েছিল, যিনি নিজেও গত ফেব্রুয়ারিতে একই কায়দায় হামলায় নিহত হন।
– See more at: http://www.bd-pratidin.com/national/2015/11/01/107097#sthash.TRc0CxKC.dpuf