বিপদে’ ব্যাংকিং খাত, খেলাপি ঋণ ছাড়াল ৬ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

দেশের ব্যাংকিং খাতে বিপদের ঘণ্টা যেন আরও জোরে বেজে উঠল। নতুন হিসাব বলছে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। এটি মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এ অঙ্ক শুধু আর্থিক খাতের দুর্বলতাকেই উন্মোচন করছে না, বাড়িয়ে দিচ্ছে ব্যাংকিং ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগও। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংস্কার ছাড়া সামনের দিনে ভার আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হালনাগাদ বিবরণী থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে।

খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক সাম্প্রতিক সময়ে নজরদারি ও নিয়মকানুন কঠোরভাবে প্রয়োগ করায় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের প্রকৃত অবস্থা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। আগে যেসব ঋণ পরিশোধ না হওয়া সত্ত্বেও কাগজে ‘নিয়মিত’ হিসেবে দেখানো হতো, সেগুলো এখন মন্দ ঋণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে নানা প্রভাব ও সুবিধার মাধ্যমে বিতরণ করা ঝুঁকিপূর্ণ ঋণগুলো একে একে প্রকাশ পাচ্ছে, আর মন্দ ঋণের পরিমাণও বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত চিত্র উন্মোচিত হওয়ায় ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি সম্পর্কে এখন আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। তবে একইসঙ্গে এটি একটি অস্বস্তিকর বাস্তবতাও সামনে এনেছে— যেখানে বিপুল অঙ্কের অনাদায়ি ঋণ বছরের পর বছর ধরে জমে রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। সে হিসেবে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে নামে–বেনামে যে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে, নিয়মনীতি স‌ঠিক প‌রিপালনের কারণে এখন তা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করেছে। ফলে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।

তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের জুন প্রান্তিকে শেষে ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৮ হাজার ৩৪৫ কোটি, যা ওই সময়ের বিতরণ করা ঋণের ৩৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। সে হিসেবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।

খেলাপির বিষয়ে আইএমএফের শর্ত

ডলার সংকটে পড়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের ঋণের দ্বারস্থ হয় বাংলাদেশ। ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের তিনটি কিস্তি পেয়েছে। বাকি দুটি কিস্তি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ধাপে ধাপে দেবে সংস্থাটি। এর মধ্যে অন্যতম ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি খাতে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশ এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ঋণের ৫০ শতাংশের মতো খেলাপি। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোরও খেলাপি ঋণের হার ২০ শতাংশের কাছাকাছি।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এরপর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। অর্থনীতিবিদরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছেন, তৎকালীন সরকারের ছত্রছায়ায় ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট হয়েছে, যার একটা বড়ো অংশই বিদেশে পাচার হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *